শেষের পাতা
টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ
আরিফুল ইসলাম
৩১ মে ২০২৫, শনিবার
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বছরের পর বছর ধরে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, সড়ক সংস্কার এবং ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজ। বর্ষা মৌসুম এলেই এই কাজগুলো আরও তীব্র হয়। যখন-তখন, যত্রতত্র সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধীরগতির কারণে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে এসব উন্নয়নকাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন অংশ দীর্ঘ সময় ধরে সরু রাখা হচ্ছে, ফলে যান চলাচলে দেখা দিচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। ফলে বাড়ছে যানজট এবং জনদুর্ভোগ। এরইমধ্যে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অতিবৃষ্টির কারণে অনেক রাস্তায় পানি জমে চলাচলের সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। চলাচলের এসব ব্যস্ত রাস্তা কেন বর্ষা মৌসুম এলেই খোঁড়াখুঁড়িতে ব্যস্ত হয়ে যায় বলেও অভিযোগ করছেন নগরবাসী।
শুক্রবার সরজমিন রাজধানীর তেজগাঁও, কাওরান বাজার, পশ্চিম তেজতুরি বাজার, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, কুড়িল বিশ্বরোড ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বর্তমানে অনেক এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলমান। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার এসব কাজ ধীরগতিতে চলায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শ্যামলী থেকে গাবতলীগামী প্রধান সড়কে চলছে ডিপিডিসি’র হাইভোল্টেজ বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজ। চীনের সঙ্গে সরকারের জি-টু-জি প্রকল্পের আওতায় এই কাজটি করা হচ্ছে। সড়ক খুঁড়ে নিচ দিয়ে তার স্থাপনের ফলে এ রুটে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজটি ৩রা জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে যে বালি দেয়া হয়েছিল তা নিচে তলিয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে বালি দিতে হচ্ছে। নগরবাসীর সাময়িক দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন তারা।
এ ছাড়া শ্যামলী থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত সড়কের পাশে রাস্তা খননের কাজও চলছে অনেক দিন ধরে। খননকাজে ব্যবহৃত পাইপ, ক্যাবল ও অন্যান্য উপকরণ ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। ফুটপাথও অনেক জায়গায় অচল হয়ে পড়েছে। কাটা সড়কের বেশির ভাগ অংশ এখনো খোলা অবস্থায় থাকায় যানবাহন চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে সামান্য যানবাহনের চাপেই তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। অনেক জায়গায় তার, পাইপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে ফুটপাথ। ফলে ফুটপাথ বন্ধ থাকায় বাসে উঠতে নামতে যাত্রীদের সড়কে দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিতে হচ্ছে, যা আবার যান চলাচলে আরও বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ওদিকে যমুনা ফিউচার পার্ক, নদ্দা এলাকায় রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। যার ফলে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় চলছে বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজ। এ রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীদের যানজটে পড়তে হয় নিয়মিত।
গাবতলী লিংক পরিবহন বাসের হেলপার মো. শাহিন বলেন, রাস্তায় এই কাজ অনেকদিন ধরেই হচ্ছে। এরমধ্যে বৃষ্টি হওয়াতে আবার সমস্যা হয়েছে বেশি এ রাস্তায়। কাজ শেষ হয়ে যেতো দ্রুতই শুনেছি। কিন্তু বৃষ্টি হওয়াতে আবার একটু সময় লাগবে। মাঝেমধ্যেই এসব কাজের কারণে রাস্তা ছোট হয়ে আসে। কাজে ব্যবহৃত জিনিসগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যার কারণে সমস্যা হয়।
লাব্বাইক বাসের হেলপার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, রাস্তা কাটার ফলে আগের মতো সহজেই ইউটার্ন নেয়া যায় না। একদিকে যানজট অন্যদিকে বৃষ্টি সবমিলিয়ে আজকে যাত্রী নেই তেমন।
নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। দিনভর বৃষ্টির পর রাতে কিছুটা কমলেও শুক্রবার থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মতো তেজগাঁও, কাওরান বাজার, পশ্চিম তেজতুরি বাজার এলাকাসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তবে ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরা ছিল অনেকটাই কম। শুক্রবার সকাল থেকেও বৃষ্টি হওয়ার কারণে নতুন করে জলাবদ্ধতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা আর বর্ষা মৌসুম এলেই ড্রেনের কাজের তৎপরতা বাড়ায় কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। পশ্চিম তেজতুরি বাজারে সরজমিন দেখা যায় এখনো পানি নামেনি এই এলাকা থেকে। গতকালের বৃষ্টিতে অনেক দোকানপাটের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, একটু বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে কোমর পর্যন্ত হয়ে যায়। মনে হয় এখানেই বন্যা হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর পানি নিষ্কাশনে সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণে এমন হয়।
পথচারীরা বলছেন, জলাবদ্ধতা ও বৃষ্টির কারণে রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়ে গেছে। জলাবদ্ধতায় বিভিন্ন সড়কে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন চালকরা।
তেজতুরি এলাকার বাসিন্দা কাওছার হোসেন বলেন, অফিসে যেতে এদিক দিয়ে যেতে পারিনি। ফার্মগেট দিয়ে ঘুরে তারপর কাওরান বাজার আমার অফিসে আসতে হয়েছে পানি জমে থাকার কারণে। এদিকে পানি থাকায় রিকশাওয়ালারা এটুকু পার করে দিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা নিচ্ছেন।
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে ট্রাকচালক সাগর আহমেদ বলেন, বৃষ্টির কারণে এখানেও পানি জমে গিয়েছিল অনেক। ঢাকায় একটু বৃষ্টি হলেই এভাবে পানি জমে থাকে যা চলাচলের বিঘ্ন ঘটায়। এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন থেকেই সরকার আর সিটি করপোরেশনের উদাসীনতা দেখছি। কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না।
হঠাৎ অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনে জরুরি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটি বলছে, কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলে নাগরিকদের ১৬১০৬ নম্বর হটলাইন অথবা কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৭৩৩৯৮২৪৮৬-এ ফোন করে তথ্য দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।