শেষের পাতা
নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
বাংলারজমিন ডেস্ক
৩১ মে ২০২৫, শনিবারবঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। গতকাল এটি সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্যদিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে। এরপর নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। তবে এর প্রভাবে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করলেও এখনো কাটেনি এর রেশ। সমুদ্র সৈকত এলাকায় অধিকাংশ জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। অতিরিক্ত জোয়ারের পানির তোড়ে বিভিন্ন জায়গায় গ্রামরক্ষা বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে গেছে।
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় দমকা-ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রাম। সেন্টমার্টিনে পানিবন্দি হয়ে আছে দ্বীপবাসী। চারদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চারদিন ধরে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ উপকূলের অন্তত ৫০টি এলাকায় বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার তথ্য মিলেছে। সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি দ্বীপ উপজেলার কুতুবদিয়ার। এ দ্বীপে অবস্থিত বিদ্যুৎ প্রকল্প ভবনের দক্ষিণ পাশে ৫০ মিটারের মতো ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। জেলার সদর, ঈদগাঁও, রামু, চকরিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়ায় লাখো পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।
বোরহানউদ্দিন (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিনে ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টবগী ইউনিয়নের দুটি স্থান দিয়ে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এখানে বেড়িবাঁধ অক্ষত থাকলেও একটি জায়গায় বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। হাসাননগর, টবগী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের ৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে কয়েকশ’ পরিবার। হাসাননগর, টবগী ও সাচড়া ইউনিয়নের ৭টি পুকুরের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে।
পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার পাথরঘাটায় অতিরিক্ত জোয়ারের পানির তোড়ে গ্রামরক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে ৬টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের হলতা নদীর মানিকখালী বাজার অংশের বাঁধ ভেঙে যায়।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ। পাশাপাশি মাতাব্বরহাট এলাকায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নিম্নমানের হওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটের ফেরি-লঞ্চসহ ছোট নৌযানগুলো। মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। তবে নদীতে ভাটা পড়লে পানি কিছুটা নামলেও আবার জোয়ার আসলে একই অবস্থা তৈরি হয়। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, নিচু ঘরের ভিটি তলিয়ে গেছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ফেনীতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী পরশুরাম উপজেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। এতে জোয়ারের চাপে একাধিকস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম। ফলে বিভিন্ন ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার আমতলীতে টানা তিনদিনের অতিবর্ষণে ও ঘূর্ণিঝড় শক্তি ও অমাবস্যার প্রভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আউশের ধানের বীজতলা, মাছের ঘের ও পানের বরজ। পৌর শহরসহ উপজেলার সর্বত্র পানিতে থই থই করছে। পৌর শহরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দেখা দিয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন পৌরবাসী।
লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, ভোলার লালমোহন উপজেলায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রচণ্ড বৃষ্টি ও বাতাসে ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে। উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ, রমাগঞ্জ, ধলীগৌরনগর, চরভূতা ও পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ২০টি বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ৫০০টি বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে দু’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের তেরাবেকা গ্রামের একটি রিং বাঁধ ভেঙে প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এতে করে ওই পরিবারগুলো অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতেও রিং বাঁধ ভেঙে গ্রামটি পানিতে তলিয়ে যায়।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে চলাচলকারী সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ এক জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নির্দেশনার কথা জানান। অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত জারি রয়েছে।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি আবার থেমে থেমে অতিভারী বৃষ্টিবর্ষণ শুরু হয়েছে। টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণের কারণে শুক্রবার দুপুরে ওয়াইজংশন রুমা সড়কের পাশে একটি পাহাড় ধসের কারণে সদরের সঙ্গে রুমা উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পাদদেশে বসাবাসকারীরা। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সতর্ক করতে শহরে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।