শেষের পাতা
আমাদের শান্তিরক্ষীরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ মে ২০২৫, শুক্রবার
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীগণ নিজের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ, নৈতিক মূল্যবোধ, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার প্রমাণ রেখে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে গতকাল বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে প্রাণ উৎসর্গ করা ১৬৮ জন বীর সৈনিক, পুলিশ ও সদস্যদের স্মরণ করে ও তাদের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সেনাপ্রধান বলেন, তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। তিনি বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আজ একটি স্বীকৃত এবং অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য নাম। জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকেই বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। বর্তমানে শান্তিরক্ষা কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৪ হাজার ৮৮০ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৩ জন, বিমানবাহিনীর ৩৯৬ জন এবং পুলিশের ১৯৯ জনসহ সর্বমোট ৫ হাজার ১১৮ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত রয়েছে। পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি আমাদের নারী সদস্যরাও শান্তিরক্ষার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। অদ্যাবধি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সর্বমোট ৩ হাজার ৬৪৫ জন মহিলা শান্তিরক্ষী সফলভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে ৪৪৪ জন মহিলা সদস্য শান্তিরক্ষার কাজে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রয়েছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীগণ নিজের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ, নৈতিক মূল্যবোধ, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতা প্রমাণ রেখে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, সম্প্রতি আমাদের একটি হেলিকপ্টার কন্টিনজেন্ট আর্মড রোলে কঙ্গো মিশনে মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান আর্মিকে আমাদের নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরিকৃত বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী যান অনুদান হিসেবে হস্তান্তর করেছি। এ ছাড়া সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে আমাদের অনুদান ও তত্ত্বাবধানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই ক্লিনিকটা যেদিন উদ্বোধন হয় সেদিন সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতি উপস্থিত ছিলেন এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। আমরা একইসঙ্গে ক্লিনিকটা উদ্বোধন করেছি। এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের জনগণ ও রাষ্ট্রপতি আমাদের কাজে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। এবং আমরা এভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছি সেখানে। এ সময় অনুষ্ঠানে বিদেশি কূনৈতিক ও অতিথিদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ব শান্তির সমাধানে ঐক্যবদ্ধ। সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ত্যাগ ও তিতিক্ষার শিক্ষা থেকে আমাদের চেতনা উদ্বুদ্ধ। আমরা ভবিষ্যতে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। আরও বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনাররা, তিন বাহিনীর প্রধানরা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর মসজিদ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়/র্যালি-২০২৫’ এর মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়/র্যালি-২০২৫’ উদ্বোধন করেন। এরপর বেলা ১১টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকালীন শাহাদতবরণকারীদের জন্য এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়।