শেষের পাতা
গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ আরও অনেক বিষয় অমীমাংসিত থেকে গেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে বেশকিছু সুপারিশের বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন তিনি।
এর মধ্যে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতোবার নির্বাচিত হতে পারবেন, একজন সংসদ সদস্য কতোগুলো পদে থাকতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া কী হবে- এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অমীমাংসিত থেকে গেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বের সংলাপ শেষে অগ্রগতি তুলে ধরতে গতকাল সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার মধ্যদিয়ে জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মে মাসের শেষে বা জুনের শুরুতে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হবে। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
সংবিধান সংস্কারে যেসব বিষয়ে একমত হওয়া গেছে তা তুলে ধরতে গিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে ‘বহুত্ববাদ’ না রাখার ব্যাপারে অধিকাংশ দল মতামত দিয়েছে। অন্য চারটি মূলনীতির ব্যাপারে এক ধরনের ঐকমত্য আছে। তবে অনেক দল এই চারটির বাইরেও অন্যান্য বিষয় যুক্ত করার কথা বলেছে।
তিনি বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কিছু দল অবশ্য এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। নিম্নকক্ষে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষণের প্রশ্নে এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে দলগুলোর মধ্যে। তবে এর পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। যারা সংসদের উভয় কক্ষের পক্ষে এবং যারা এক কক্ষবিশিষ্ট আইন সভার পক্ষে, উভয়ই আইন সভায় ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধী দল থেকে দেয়ার পক্ষে বলে জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ৪৮(ক) অনুচ্ছেদ যা কার্যত রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নির্ধারণ করে, তা সংশোধনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।
আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা রদ করে আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কোনো কোনো দল প্রবীণতম তিন বিচারকের মধ্যে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশনের যেসব সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তা তুলে ধরতে গিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, দল নিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বিধান করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কিংবা শপথ ভঙ্গ করলে মেয়াদ শেষে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করবে প্রস্তাবিত সংসদীয় কমিটি। এরপর সেই কমিটি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ পাঠাবেন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে। এ বিধানের বিষয়ে বেশির ভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার প্রশ্নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। এর আইনি দিক বিবেচনার জন্য অধিকাংশ দল গুরুত্ব দিয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির সঙ্গে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন প্রশ্নে অধিকাংশ দল একমত পোষণ করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে পুনর্গঠন করে তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করার ব্যাপারে বেশির ভাগ দল নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের পুরনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা, বিদ্যমান জেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল করা, ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে পৌরসভার চেয়্যারম্যান নির্বাচিত হওয়া এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে বেশির ভাগ দল একমত হয়নি।
দুদক সংস্কার কমিশনের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, দুদক সংস্কারে কমিশনের সব সুপারিশের পক্ষেই মোটাদাগে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
পাঠকের মতামত
সংস্কার, কমিশন, ঐকমত্য, বৈঠক এ সবই ক্ষমতাকে দির্ঘায়িত করার ইউনূসীয় ধান্ধাবাজী এবং কৌশল। ইউনূস একটা আন্তর্জাতিক ধান্ধাবাজ। ক্ষমতা আর সম্পদের লোভ তার এত ভয়াবহ ভয়ঙ্কর রকমের বেশি যে, মা মেয়ের ইজ্জত কে ও হার মানায়।