ঢাকা, ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি

ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে রোডম্যাপ ঘোষণা করুন, অন্যথায় সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে

স্টাফ রিপোর্টার

(৫ ঘন্টা আগে) ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪:৫৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:২৮ অপরাহ্ন

mzamin

এই বছরের মধ্যেই নতুন জাতীয় সংসদ গঠনের লক্ষ্যে ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এর অন্যথায় সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে দলটি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যেই একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানাচ্ছে বিএনপি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এটিই প্রধান দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।

লিখিত বক্তব্যে ড. মোশাররফ বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অগণতান্ত্রিক বর্বরতম ফ্যসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টের রক্তাক্ত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যসিবাদ মুক্ত হয়। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীন ও সামাজিক ন্যয় বিচার ভিত্তিক একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণের জন্য এদেশের মানুষ অপেক্ষমাণ।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে, বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান; কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে তা একটি বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। অথচ আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোন বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা ছিল। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোন কোন মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বক্তব্য আমরা বারবার উচ্চারণ করেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা তুলেছিলাম।  অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। অথচ সরকারের মুখপাত্র হিসাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন- যে, “এই সরকারের সবকিছু করার ম্যান্ডেট রয়েছে”।

মানবিক করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেয়া দরকার। এছাড়াও এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ মেয়াদী নীতি নির্ধারণী কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের আছে বলে এদেশের জনগণ মনে করে না। দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যাতে দেশে অস্থিতিশীল কোন পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত কেবল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়াই সমীচীন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যে সমস্ত উপদেষ্টাগণ একটি নুতন রাজনৈতিক দলের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে  জড়িত বলে সবাই জানে ও বুঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার গতকালকের বক্তব্য আবারও নতুন বির্তকের জন্ম দিয়েছে, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা ইতিপূর্বে অনেক বার উত্থাপন করেছি।

যেহেতু, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এই সরকারের প্রধান কাজ, তাই মাথাভারি উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধুমাত্র রুটিন ওয়ার্ক (দৈনন্দিন কার্যক্রম) পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি “সংস্কার সনদ” তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা স্বত্ত্বেও একই বিষয়গুলো নিয়ে  এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদেরকে এবং সরকারকে বিব্রত করে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায়। সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সকল পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে এই কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে সুতরাং আমাদেরকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আশা করব নির্বাচনী ট্রাইবুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে অতিশীঘ্রই সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নিবে।

সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, জনআকাঙ্খা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয় তা যথা সময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি ইতোমধ্যেই সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে এবং অন্যদেরকেও একই প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের বলে আমরা মনে করি।
নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।

তিনি বলেন, জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্রসম্ভব জনআকাঙ্খা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবী জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্খাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া বর্তমান অন্তরবর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসাবে বিএনপি’র পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, যেহেতু, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দু’টাই একই সাথে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
যে বিষয়গুলো এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সে বিষয়গুলো আমাদের আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মত উপেক্ষিত হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক এবং সেক্ষেত্রে অনিবার্যভাবেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কিনা তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।

দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে নির্বাচন পূর্ব সময় পর্যন্ত সরকার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

 

পাঠকের মতামত

Awami League's poop 'n pee, We won’t vote for BNP.

Hasan Kader
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭:৩১ অপরাহ্ন

Election must be held after consensus of rashtra samsker as we don't believe BNP joybangla as they have Indian hand rather public demand

Md. Anisur Rahman
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭:০২ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

‘দ্য উইক’ ম্যাগাজিনে তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি/ ‘নিয়তির সন্তান’

১০

বৃটেনে ইমিগ্রেশন আইনে পরিবর্তন/ ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন স্টারমার

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status