অনলাইন
অবৈধভাবে বসবাস
মার্কিন আদালতে বাংলাদেশিকে ২২ কোটি টাকা জরিমানা !
সিদ্দিকুর রহমান সুমন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
(১২ ঘন্টা আগে) ২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৫:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
২০০৫ সালে ইমিগ্রেশন কেস ডিনাই হওয়ার পরও অবৈধভাবে বসবাসের কারণে এক বাংলাদেশিকে ১৮ লাখ ২০ হাজার ৩শ ৫২ ডলার সিভিল পেনাল্টি (জরিমানা) করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা (১ ডলারে ১২৫ টাকা হিসেবে)।
সম্প্রতি আদালত থেকে জরিমানার এই চিঠি পেয়ে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই প্রবাসী বাংলাদেশি। ৩০ দিনের সময় বেঁধে দিলেও জরিমানার টাকা পরিশোধ করার পাশাপাশি তাকে দেশেও ফিরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। (মানবজমিনের কাছে বিস্তারিত তথ্য থাকলেও গোপনীয়তার স্বার্থে ওই ব্যক্তির নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।)
নিউ ইয়র্কের কুইন্সের এস্টোরিয়ার বাসিন্দা আরিফুল (ছদ্মনাম) স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসে প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছেন দুঃস্বপ্নকে সঙ্গী করে। ২০০৫ সালে বৈধতার সুযোগ পাওয়ার আশায় আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মার্কিন আদালতে তার এই আবেদন ইমিগ্রেশন জজ “কেস রিমুভালের” অর্ডার আদেশ দেন ২০০৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর (মামলার নাম্বারের শেষ তিন ডিজিট …৯৫৩)। এই অর্ডারের বিপরীতে আরিফুল আপিল করলেও ভাগ্য তার সহায় ছিল না। প্রায় ১৭ মাস পর ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে কেস “ডিসমিসড” হয়ে যায় । এরপর তিনি আর আদালতে মামলা রিওপেন করার সুযোগ পাননি। ফলে রায় অনুযায়ী দেশে ফেরার কথা থাকলেও আরিফুল তা অমান্য করে আমেরিকায় বসবাস করেন। বিশেষ করে বাচ্চা ছোট থাকায় এই সুযোগ কাজে লাগানো হয়। আদালতও এ ব্যাপারে আর আক্রমণাত্মক হয়নি। এরই মধ্যে তার স্ত্রী সন্তান মার্কিন নাগরিকত্বও পেয়েছেন। তবে বিপত্তি ঘটেছে ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার গ্রহণের পর থেকে। বিশেষ করে জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পরই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেন। একের পর এক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে । বৈধ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভাগকে কাজে লাগানো হয়। বিগত দিনে ইমিগ্রেশন একটু শীতল হলেও ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যেন কঠিন সময় পার করছে। এরই অংশ হিসেবে নিউ ইয়র্কের ২৬ ফেডারেল প্লাজায় অবস্থিত আদালত কর্তৃক বাংলাদেশি আরিফুল প্রায় ২০ বছর পর এই জরিমানার সম্মুখীন হলেন। তবে পরিবারের সদস্যরা (স্ত্রী-সন্তান) ওই মামলায় তালিকাভুক্ত না থাকায় আমেরিকায় বসবাসের ক্ষেত্রে তাদের কোনো সমস্যা হবে না।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, ২০০৫ সালে কেস রিমুভাল হওয়ার পর ২০০৭ সালে আপিলও ওই প্রবাসীর কেস ডিসমিসড হয়ে যায়। তবে কয়েকবার রিওপেন করার চেষ্টা করা হলেও ইমিগ্রেশন আদালতে তা গ্রহণ করা হয়নি। জরিমানা পরিশোধ না করা হলে সরকার চাইলে তার সম্পত্তি থেকেও আদায় করতে পারে । সরকার সব জানে বলেই নোটিশ জারি করেছে। তিনি জানান, আইন পূর্বেও ছিলো কিন্তু এক্সিকিউট ছিল না। বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৫২ এ্যাক্ট ১৯৯৬ থেকে এমান্ডেমেন্ট হয়েছিলো, সেই আইন অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা পরিশোধের বিষয়ে ১ মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। যেখানে ওই প্রবাসী আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ পাবেন বলে আশাবাদীও তিনি। আর ৩০ দিনের ভেতর কোনো আবেদন না করলে আদালত কর্তৃক এই জরিমানা চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করা হবে। ক্রিমিনাল অফেন্স না থাকায় তাকে জেলে নেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করেন তিনি।
মঈন চৌধুরী জানান, মানবিক বিবেচনায় সরকারের কাছে জরিমানার বিষয়ে আবেদন করা যাবে, যদি আবেদন গৃহীত না হয় তাহলে আরিফুলকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে । মঈন চৌধুরী জানান, এই জরিমানার মাধ্যমে সব অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে ।
পাঠকের মতামত
You are done with your life in the USA. Kids are settled—no point in staying there. Leave the country and live like a king in BD