ঢাকা, ১৮ মে ২০২৫, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

সহযোগীদের খবর

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক

(৬ ঘন্টা আগে) ১৮ মে ২০২৫, রবিবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৩:৪৯ অপরাহ্ন

mzamin

প্রথম আলো

ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি নূরুল কবীর। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই দ্য রেড মাওলানা, বার্থ অব বাংলাদেশ, ডিপোজিং অব আ ডিক্টেটর। গণ-অভ্যুত্থানের পর গণমাধ্যমের পরিস্থিতি, রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ও মনজুরুল ইসলাম।

প্রথম আলো: ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর ৯ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর তথা সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে সাফল্য–ব্যর্থতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

নূরুল কবীর: পাকিস্তানের পশ্চিমভিত্তিক অগণতান্ত্রিক শাসকশ্রেণির শাসন-নিপীড়ন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি জনযুদ্ধের ভেতর দিয়ে উত্থিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অঙ্গীকার ছিল ‘সাম্য, সামাজিক ন্যায়পরতা ও নাগরিকদের মানবিক মর্যাদা’ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ গড়ে তোলা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের স্বৈরতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, অর্ধশতাব্দীর বেশিকাল ধরে এখানে একটি যথার্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি, বরং এ দেশের শাসকশ্রেণির বিভিন্ন সংগঠন আপন আপন সংকীর্ণ স্বার্থে এখানে একটি শোষণ-নিপীড়নমূলক স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিকাশ নিষ্পন্ন করেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় যার নৃশংস রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।

ইতিপূর্বে বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ ও ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ ঐতিহাসিক অপরিহার্যতা নিয়ে কথা বলেছে। তবে বিগত গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এই রাজনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি ও ন্যায্যতা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পাটাতনের ওপর প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারণা ও কোনো কোনো উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ ও ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা গত ৯ মাসে ক্রমেই হ্রাস পেয়ে চলেছে। এসব উপদেষ্টার সহযোগিতায় বরং কোনো কোনো প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের পথ প্রশস্ত হচ্ছে।

প্রথম আলো: বিগত সরকারের আমলে মতপ্রকাশ বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গুরুতরভাবে সংকুচিত ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই পরিস্থিতির কতটা পরিবর্তন হয়েছে?

নূরুল কবীর: অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আওয়ামী লীগের স্বৈরতান্ত্রিক জমানার তুলনায় সাধারণভাবে অবশ্যই সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সরকারকে বরং সমালোচনা করার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা তাঁর সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে, এমনকি তাঁর নিজের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কেও আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রেখেছি।

আমার জানামতে, পত্রিকার সম্পাদকদের এখন আর আওয়ামী জমানার মতো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সাংবাদিকতা সম্পর্কে নসিহতমূলক বার্তা গ্রহণ করতে হয় না। তবে সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি হিসেবে আমি জানি, সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ও গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী কোনো কোনো নেতা ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার প্রতি খানিকটা বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছেন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা অনাকাঙ্ক্ষিত বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এটা নিশ্চয় বিপজ্জনক লক্ষণ। এই লক্ষণের বিরুদ্ধে যৌক্তিকভাবে সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা প্রয়োজন।

এখানে বলা প্রয়োজন যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু লীগপন্থী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো স্বৈরতান্ত্রিক সরকারকে বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থন জানানো একটি নৈতিকতাবিবর্জিত রাজনৈতিক অপরাধ, কিন্তু তা সাধারণভাবে কখনো একটি ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আর্থিক দুর্নীতিচর্চার মামলাও রুজু করা হয়েছে। যথাযথ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে, স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়ায় সেসব অভিযোগের বিচার হতেই পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে খুনের মামলা দায়েরের ব্যাপারটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথম আলো: ‘মব’ নামে পরিচিত ননস্টেট অ্যাক্টরগুলো নানাভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করছে, এমন অভিযোগ আছে। এ বিষয়কে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

নূরুল কবীর: কোনো স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল সংগ্রাম পরিচালনার প্রক্রিয়ায়, সংগ্রামীদের কারও কারও মননের ভেতর, তাঁদের অজান্তেই, কিছু কিছু স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতার অনুপ্রবেশ ঘটে। ফলে সংগ্রামের মুখে সেই স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতনের পর বিজয়ী সংগ্রামীদের সেই সুপ্ত প্রবণতা নানা প্রতিক্রিয়ার আকারে সমাজে অভিব্যক্তি লাভ করে।

বিদ্যমান ক্ষেত্রে ‘রাষ্ট্রবহির্ভূত’ কিন্তু রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত, এসব ননস্টেট ব্যক্তির কারও কারও ভেতর এই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যা কখনো কখনো ‘মব অ্যাকশন’ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এ দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হলে এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সচেতনভাবে সতর্কতার সঙ্গে ভাবাদর্শগত সংগ্রাম পরিচালনা করা প্রয়োজন হয়। আমাদেরও তা করতে হবে। তবে প্রতিবাদী তারুণ্যের কোনো ন্যায়সংগত প্রতিবাদকে আমরা যেন ‘মব জাস্টিস’ হিসেবে চিহ্নিত না করি।

প্রথম আলো: অন্তর্বর্তী সরকার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আমলে পাস হওয়া একটি আইন ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

নূরুল কবীর: অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক ‘আওয়ামী লীগ আমলে পাস হওয়া আইন ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা’ করেনি, সেই আইনের ভেতর নতুন বিধান সংযুক্ত করে সংগঠন হিসেবে লীগের অপরাধের বিচার ও বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তার রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ অর্থাৎ স্থগিত ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে সরকার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অনুমোদন গ্রহণ করেছে।

যাহোক, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে, প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে, রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগমূলক ক্ষমতার অপব্যবহার করে, রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত রেখে এ দেশে একটি লুটপাটতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। আবার এই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লীগ সরকার মাত্র তিন সপ্তাহে দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এবং ২০ হাজার মানুষকে গুলি করে তাঁদের অনেককেই চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে।

এমন একটি রাজনৈতিক দলের স্বৈরতান্ত্রিক নেতা-নেত্রীসহ খোদ সেই দলটিকেও ‘সংগঠন হিসেবে’ বিচারের আওতায় আনাকে আমি একটি ন্যায্য পদক্ষেপ হিসেবেই গণ্য করি। তা ছাড়া নতুন এই আইনি বিধানের অধীনে লীগের হত্যাযজ্ঞ বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করার ফলে এ দেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যাযজ্ঞে জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সমর্থনের জন্য সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের আইনগত পথও প্রশস্ত হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার কর্তৃক জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোনো হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করা অন্যায়।

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপিসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে যে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছিল, সেখান থেকে বিভিন্ন আপত্তিকর স্লোগান শোনা গেছে। জাতীয় সংগীত গাওয়ায়ও বাধা আসে। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে কোনো পক্ষ কি মুক্তিযুদ্ধেরও বিরোধিতা করছে?

নূরুল কবীর: হ্যাঁ, লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এনসিপি আয়োজিত সমাবেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসবিরোধী কয়েকটি স্লোগান উচ্চারিত হয়েছে। ফলে তা অবশ্যই ‘আপত্তিকর’। তবে আশার কথা হলো, একই সমাবেশ থেকে ওই সব ‘অনৈতিহাসিকতার’ দোষে দুষ্ট স্লোগানের বিরুদ্ধে যথার্থ প্রতিবাদও উত্থাপিত হয়েছে। সেখানে জাতীয় সংগীত গাওয়ায় বাধা দিলে, তারও যথাযথ প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে।

কোনো রাষ্ট্রের ‘জাতীয় সংগীতের’ যাথার্থ নিয়ে বিতর্ক উঠতেই পারে, যথার্থ ইতিহাসের আলোকে, সততার সঙ্গে, নানা গঠনমূলক বিতর্কের মাধ্যমে তার নিষ্পত্তিও হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উত্থানের জন্য এ দেশের মানুষকে যে রক্তাক্ত স্বাধীনতাযুদ্ধের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, সেই যুদ্ধের সময় যারা এ দেশের মানুষের স্বাধীনতা-প্রয়াসের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করেছিল, তারা যখন ‘জাতীয় সংগীতের’ যাথার্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসৎ রাজনৈতিক তৎপরতা হিসেবে ধরে নিতে হবে। গণতন্ত্রপরায়ণ দেশপ্রেমিক নাগরিকদের তরফে এসব অপতৎপরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিল এ কথা যেমন সত্য, জামায়াতসহ দু-একটি অনুল্লেখযোগ্য সংগঠন ছাড়া অপরাপর সব রাজনৈতিক দল সেই যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল, এ কথাও তেমন সত্য। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ওপর লীগের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার অনুগামী অসত্য বয়ান গ্রহণযোগ্য নয়। এ অবস্থায় স্বাধীনতা-পরবর্তী লীগের নানা রাজনৈতিক অপকর্মের বিরোধিতা করার নামে, খোদ স্বাধীনতাযুদ্ধ কিংবা স্বাধীনতাযুদ্ধের গণচেতনার বিরোধিতাকে প্রশ্রয় দেওয়ারও সুযোগ নেই।

প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা কিংবা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভুল বয়ান বা ন্যারেটিভ প্রচার করে কি বাংলাদেশে গঠনমূলক রাজনীতি করা সম্ভব?

নূরুল কবীর: প্রায় ৫৪ বছর আগে সংগঠিত বাংলাদেশের বিজয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধকে এখন কে কীভাবে বিরোধিতা করবে? প্রশ্নটা হলো, সেই মহান জনযুদ্ধের ‘ভুল বয়ান’ প্রচার করে বাংলাদেশে গঠনমূলক রাজনীতি করা সম্ভব কি না? না, সম্ভব না। মুক্তিযুদ্ধের ‘দলীয়কৃত’, অর্থাৎ ভুল বয়ান প্রচার করে লীগ ও তার রাজনৈতিক দোসররাই যেখানে ‘গঠনমূলক রাজনীতি’ চর্চা করতে পারেনি, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী’ শক্তি নামক স্লোগানের অধীনে দেশের গোটা জনসাধারণকে খাড়াখাড়িভাবে বিভক্ত করে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি’ হিসেবে তকমা দিয়ে, দেশ গঠনে জনগণের সম্মিলিত শক্তিকে দ্বিখণ্ডিত করে, বাংলাদেশের সামষ্টিক আত্মশক্তি বিকাশের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে, সেখানে অন্যরা আবার আরেক ধরনের ‘ভুল বয়ান’ প্রচার করে কীভাবে গঠনমূলক রাজনীতি চর্চার পথ প্রশস্ত করবে? অসম্ভব।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে একটি ‘জনযুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে, সেই যুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মৌল চেতনার সাম্য, সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা ও নাগরিকের মানবিক মর্যাদার আলোকে রাষ্ট্র ও রাজনীতির গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাধ্যমেই কেবল এ দেশে ‘গঠনমূলক রাজনীতি’ চর্চা সম্ভব।

প্রথম আলো: সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বাংলাদেশে উগ্রপন্থার উত্থানের আশঙ্কা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আপনার মন্তব্য কী?

নূরুল কবীর: কোনো দেশের শাসকশ্রেণির বিভিন্ন দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সমাজে দীর্ঘকাল ধরে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতন্ত্রী কিংবা কর্তৃত্ববাদী শোষণ-নিপীড়নমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা জারি রাখে, তখন সে সমাজে প্রতিবাদী রাজনীতি হামেশাই ‘উগ্র রূপ’ ধারণ করে। কেননা, স্বৈরতান্ত্রিক কিংবা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা নিজেই অন্যান্য আরও নেতিবাচক নীতি-আদর্শের সঙ্গে উগ্রতার উপাদানে গঠিত। সাধারণভাবে বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসকশ্রেণি ও তার রাষ্ট্রের, বিশেষত দেড়-দশকব্যাপী লীগ সরকারের প্রবল উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরের রাজনীতির তুলনামূলকভাবে দুর্বল একাংশও ‘উগ্রতার’ দিকে ঝুঁকেছে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এবং এ দেশের মূলধারার রাজনীতি ও অর্থনীতির যথার্থ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভেতর দিয়েই কেবল এখন পর্যন্ত দুর্বল ‘উগ্রপন্থী’ রাজনীতি বিকাশের পথরোধ করা যেতে পারে। নতুবা এখানে আরও বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক উগ্রপন্থার বিকাশ ঘটতে থাকবে। এই প্রবণতা শেষ বিচারে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না। ফলে গণতন্ত্রের তরফে, যেকোনো উগ্রবাদিতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক সংগ্রাম পরিচালনা করা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হিসেবে সমাজে হাজির রয়েছে।

প্রথম আলো: সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আশ্বস্ত হতে পারছে না। এই অবস্থার জন্য আপনি কাকে দায়ী করবেন?

নূরুল কবীর: রাষ্ট্র ও রাজনীতির গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের জন্য রাষ্ট্রের সব পরিসরে নির্বাচন কোনো পরস্পরবিরোধী প্রতিপাদ্য নয়। দুটিই দরকার। কিছু সংস্কার জাতীয় নির্বাচনের আগে, আর কিছু পরে কার্যকর হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সংস্কারের নামে নির্বাচন প্রলম্বিত করা কিংবা নির্বাচনের নামে সংস্কারপ্রক্রিয়ায় বিঘ্ন তৈরি করা ঠিক হবে না। তবে হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনে নির্বাচনের কথা বারবার বললেও, অনেক রাজনৈতিক দল আশ্বস্ত হতে পারছে না। তার কারণ হলো, ঠিক কবে, কোন মাসে, ‘নির্বাচনী তফসিল’ ঘোষিত হবে, সরকার তা-ও পরিষ্কার করে বলছে না।

সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন, সরকারের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই আছেন, যাঁরা নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেশ কয়েক বছর ক্ষমতায় রেখে, নিজেদের নানা ব্যক্তিগত ও দলগত সুবিধা আদায় করতে চান। এ অবস্থায় নির্বাচনী শিডিউলের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষিত না হওয়ার কারণে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির গতিশীলতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই অনতিবিলম্বে এই সংশয় ও সন্দেহের নিরসন হওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মনে রাখা প্রয়োজন, রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক নীতিমালা কোনো সরকারের জন্যই অনির্দিষ্ট মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ধারণা অনুমোদন করে না।

প্রথম আলো: অন্তর্বর্তী সরকারের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার মতামত কী? সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছে না—বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে। আপনি কীভাবে দেখছেন?

নূরুল কবীর: দু-একটা নির্দিষ্ট এলাকা বাদ দিলে, অন্তর্বর্তী সরকারের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়। দীর্ঘ ৯ মাসে রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিসরেই কোনো দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তন নেই। সবকিছু পুরোনো পদ্ধতিতেই চলছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রকাশ্য অনুমোদন সত্ত্বেও সেই দলের চাঁদাবাজ-দখলবাজ কর্মীদের গ্রেপ্তার করার সরকারি উদ্যোগ নেই। আর ‘নিরপেক্ষতা’ বলতে যদি আপনি ‘রাজনৈতিক দলনিরপেক্ষতা’ বুঝিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও বিএনপির অভিযোগের খানিকটা ন্যায্যতা তো রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। ফলে রাষ্ট্রের নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তাঁরা সরকারের ওপর যতটা প্রভাব জারি রাখতে পারেন, অন্যদের সে সুযোগ নেই। এটা অদূর ভবিষ্যতে একধরনের নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।

প্রথম আলো: অতীতে অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। কিন্তু মিয়ানমারে মানবিক চ্যানেল ইস্যু কিংবা চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে আপত্তি তুলছে। বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

নূরুল কবীর: অন্তর্বর্তী সরকারের সব সময় মনে রাখা প্রয়োজন যে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তার যথাযথ ‘আইনগত বৈধতা’ নেই। লীগ সরকারের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিজয়ী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের শিক্ষার্থী নেতৃত্বের প্রস্তাব, লীগবিরোধী সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের সবার সমর্থনই বিদ্যমান সরকারকে ‘রাজনৈতিক ন্যায্যতা’ জুগিয়েছে। ফলে রাষ্ট্রের তরফে কোনো বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাক্কালে, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এই শক্তিসমূহের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথ কিংবা আলাদাভাবে আলোচনা করা বাঞ্ছনীয়।

রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক চ্যানেল’ দেওয়া না–দেওয়া বা বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করার মতো সিদ্ধান্তগুলো অত্যন্ত জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা দেশের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে বাধ্য। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একা একা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। বাংলাদেশ যখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তখন গণতন্ত্রপরায়ণ শক্তিসমূহের সম্মিলিত ভাবনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

যুগান্তর

‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি বিএনপির: যমুনামুখী লংমার্চের হুঁশিয়ারি’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক? হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আপনি ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন। আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট সাধারণ নির্বাচন করা।

তিনি সরকারপ্রধানকে বলেন, আপনি অবলীলায় বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর, করিডর-সব বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করবেন-কী চুক্তি করে এসেছেন? কী এখতিয়ার আছে আপনার? তিনি বলেন, আপনার সরকার একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছে। একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত রিপোর্ট দেবে-ভাবলেন কীভাবে? বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এই বিদেশি নাগরিক ষড়যন্ত্র করছেন। আমরা তা হতে দেব না। এই নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বিদায় করুন। এছাড়া আপনার সরকারে এনসিপির দুজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করতে বলেন। শনিবার বিকালে খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কী ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছেন? আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট বাংলাদেশে একটা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। সুন্দর, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তিনি বলেন, আমরা বলছিলাম যথেষ্ট হয়েছে-নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার, সেসব সংস্কার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন, আবার আপনি সরে গেলেন। আপনি বিচার ও সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না।

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী এবং যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আপনার সরকার একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছে। তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চান। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত এরোগেন্টলি আপনার সেই উপদেষ্টা বলছেন, তাতে নাকি কিছু যায় আসে না। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। হয় তিনি নিজে পদত্যাগ করবেন, না হয় আপনি তাকে বিদায় করবেন। এ দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত দায়িত্ব বিদেশি কোনো নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না।

সরকারপ্রধানকে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনি মনে করছেন জনগণ আপনাকে অসীম ক্ষমতাশালী বানিয়েছেন? বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ আপনার মানার দরকার নেই? যদি তাই মনে করেন, আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে উচ্চাভিলাষ প্রণয়ন করছে। তাদের উদ্দেশ্য অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অনির্বাচিতভাবে যেন এই সরকার থাকতে পারে। যাদের কথায়, যাদের পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন, সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করুন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম আপনার উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে। আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম, এখন কিছু বিদেশিদের দোসর আছে। আমরা এখন তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছেন, যারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নেই, তাদের আপনি অপসারণ করুন। না হলে আপনি সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আমি অত্যন্ত সংশয় প্রকাশ করি।

ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইব। এখন মানুষ আপনার সরকারকে বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, আবার এনসিপি সংগঠন করে। অফিশিয়ালি করে না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে। ওপেন সিক্রেট। এদের পদত্যাগ করতে বলেন। যদি পদত্যাগ না করে, আপনি বিদায় করুন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস জন্মলগ্ন থেকেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। ঢাকার মাটিতে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, দাফন হয়েছে দিল্লিতে। তিনি বলেন, গণহত্যা চালানোর পরও শেখ হাসিনা ও তার দলের কোনো অনুশোচনা নেই। তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি, তারা দুঃখপ্রকাশ করেনি। উলটো দিল্লিতে বসে এ দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের অপরাধী হিসাবে তকমা দিচ্ছে।

শতাধিক গাড়ি নিয়ে তারুণ্যের সমাবেশে বরিশাল বিএনপি : ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা’র ডাকে সাড়া দিয়ে শতাধিক যানবাহন নিয়ে খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিয়েছে বরিশাল বিএনপি। বরিশাল যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শনিবার দুপুরে খুলনায় পৌঁছান। তারা দুপুরেই সার্কিট হাউজ ময়দানে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দেন।

কালের কণ্ঠ

‘রাজস্ব খাতে অচলাবস্থা কাটছে না’-এটি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের টানা তিন দিনের কলমবিরতিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের রাজস্ব কার্যক্রম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দৈনিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত তিন দিনে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। এবার আরো এক দিনের কলমবিরতির ঘোষণা আসায় আজ রবিবারও সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি।

আগের মতোই আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি ও বাজেট কার্যক্রম এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ‘আমরা সংস্কারের পক্ষে, আমরা সংস্কার চাই। রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আলাদা হওয়ার বিষয়েও আমরা একমত।

তবে তা হতে হবে বাস্তবমুখী। অংশীজনের মতামত ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ মূল্যায়নের মাধ্যমে। অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে কোনো মতামত না নিয়ে ও সংস্কার কমিটির সুপারিশ গোপন রেখে। সুপারিশ পর্যালোচনারও সুযোগ রাখা হয়নি। এতে রাজস্ব ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।’

সমকাল

দৈনিক সমকালের প্রথম পাতার খবর ‘পুশইন নিয়ে প্রশ্ন ভারতের মানবাধিকারকর্মীদের’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে লোকজনকে ঠেলে পাঠানোর (পুশইন) ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, আদালতের রায় ছাড়া কাউকে ঠেলে পাঠানো বেআইনি। আর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক ধরনের চাপ তৈরি করতে হঠাৎ পুশইন। এটিকে উস্কানি মনে করছেন কেউ কেউ।

গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করে ভারত। উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলাও হয়। এরই মধ্যে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর অনুপ্রবেশকারী ধরতে অভিযান শুরু করে ভারত। অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারীদের আটক করা হয়। এদের অনেককে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। ফিরে আসার পর অনেকে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। গত ৪ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ৩৪৬ জনকে ঠেলে পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়েকজন রোহিঙ্গাও রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিমত, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কার্ডধারী কয়েকজন রোহিঙ্গা ভারতে বসবাস করতেন। তাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের কাছে প্রতিবাদ জানানো জরুরি।

গতকাল রাতে ভারতের সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরীটি রায় সমকালকে বলেন, যদি কোনো নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করে, তাহলে তাঁকে আইনিভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এখানে ফরেনার্স অ্যাক্ট রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বিদেশি নাগরিক শনাক্ত হওয়ার আগে তাঁকে জোর করে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে– এটি বেআইনি। গুজরাট ও উত্তর প্রদেশে অভিযান চালিয়ে ধরা হচ্ছে। এরপর কাউকে আবার বিমানে উড়িয়ে সীমান্তে নিয়ে ওপারে ঠেলে পাঠানো হয়। আদালতের কাজ এখন পুলিশ করছে। পুলিশ ও প্রসিকিউশন একই হলে কীভাবে চলবে? পুশইনের ঘটনায় আমরা রোববার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেব।

ইত্তেফাক

‘ভর্তুকি নামছে প্রায় অর্ধেকে, আবার বাড়বে বিদ্যুতের দাম’-এটি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিদ্যুত্ খাতে ভর্তুকি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর ফলে জাতীয় কোষাগারে আগামী বছর চাপ কমবে। তবে বিদ্যুতের দাম বেড়ে খরচের চাপ বাড়বে জনগণের ওপর।

অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদ্যুত্ খাতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে এ বরাদ্দ কমিয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাত্ চলতি বছরের চেয়ে আগামী বছর বরাদ্দ প্রায় ৪৪ শতাংশ কমতে যাচ্ছে।

বিদ্যুত্ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরে বিদ্যুত্ খাতে বরাদ্দের বড় একটি অংশ ব্যবহার করা হয়েছে গত তিন-চার বছরের জমে থাকা বকেয়া বিল পরিশোধে। সম্প্রতি বিদ্যুত্ উত্পাদনকারী দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত বকেয়া (ওভারডিউ) পরিশোধ করে দিয়েছে সরকার। এখন নিয়মিত বেচাকেনার বিল পরিশোধে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে যেন অর্থনীতির ওপর ফের বাড়তি চাপ না পড়ে। ফলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ কমানো সম্ভব হচ্ছে।

বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু ভর্তুকি কমিয়ে এ খাতের উত্পাদন ও খরচ ব্যবস্থাপনা করবে না সরকার। বিদ্যুত্ খাতে নানা সংস্কারের মাধ্যমে ১০ শতাংশ খরচ কমিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকন্দ্র থাকায় জীবাশ্ম জ্বালানি-চালিত নতুন বিদ্যুৎকন্দ্র নির্মাণ করা হবে না। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়িয়ে তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে উত্পাদিত বিদ্যুত্ উত্পাদনের খরচ কমানো হবে। এছাড়া আগামী বছর জ্বালানির দামও কিছুটা কমবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। সিস্টেম লস বা অপচয় কমানোর ক্ষেত্রেও জোর দেওয়া হয়েছে।

বণিক বার্তা

দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম ‘বড় প্রকল্পে না হাঁটার অঙ্গীকার করলেও সে পথেই অন্তর্বর্তী সরকার’। খবরে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওই সভায় বলেছিলেন, ‘‌এখন থেকে মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেয়া হবে।’ পরে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও বড় প্রকল্প না নেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। অথচ গত ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকার ‘‌বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি)’।

চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগরের পাড়ঘেঁষে হালিশহরের পাশে বিশাল আকারের এ বে টার্মিনাল হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। বাকি ৪ হাজার ১৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা খরচ হবে সরকারি তহবিল থেকে।

অথচ বৃহৎ এ প্রকল্প অনুমোদনের মাস ছয়েক আগেই (২ সেপ্টেম্বর) পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘ঋণ করে অবকাঠামো নির্মাণ সক্ষমতার প্রমাণ নয়। আমরা একের পর এক বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প করে যাচ্ছি। এগুলো ঋণের মাধ্যমে করা হচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের বৈদেশিক ঋণ ৫০ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ঋণ ফেরত দিতে হবে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার। আমরা যদি ভবিষ্যতে আরো ঋণ নিতে থাকি তাহলে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। এজন্য লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে আমাদের বড় অবকাঠামো প্রকল্প নিতে হবে।’

বে টার্মিনালের পর এবার ভোলা-বরিশালে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের আরেকটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাবিত এ সেতু নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন। এ সময় সরকারের সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অনুষ্ঠিত এক সভায় জানানো হয়, আগামী জানুয়ারিতে ভোলা-বরিশাল সেতুর কাজ শুরু হতে পারে।

আজকের পত্রিকা

‘ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড ছাড়াই টিকা ব্যবহার’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, দেশে দেড় দশক ধরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে বিনা মূল্যে টিকা দিচ্ছে সরকার। শুরুর প্রায় পাঁচ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রি-কোয়ালিফায়েড টিকা আমদানি করে দেওয়া হয়েছে। এক দশক ধরে দেওয়া হচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি টিকা।

জানা গেছে, এক দশক ধরে দেশীয় ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তৈরি র‍্যাবিক্স-ভিসি টিকা কিনছে সরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবদেহে প্রয়োগ করা টিকার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, জলাতঙ্কের বর্তমান টিকার প্রি-কোয়ালিফিকেশন না থাকলেও এটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদিত।

অবশ্য ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস বলেছে, কোনো দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রি-কোয়ালিফিকেশন না থাকলে ডব্লিউএইচও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে এই সনদ দেয় না। তাদের এই টিকা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ আসেনি।

দেশে জলাতঙ্ক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের জন্য ২০১০ সালে ‘জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি’ নেয় সরকার। পরের বছর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগ যুক্ত হয়। সেই থেকে দেশে বিনা মূল্যে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে টিকা দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি)। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জুনোটিক ডিজিজ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্র জানায়, কুকুর, বিড়াল, বেজি, বানর, খ্যাঁকশিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর কামড়, আঁচড়ের কারণে র‍্যাবিস ভাইরাসের (জলাতঙ্ক) সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে তিন থেকে চার ডোজ র‍্যাবিস টিকা দিতে হয়। প্রাণীর আক্রমণে রক্তাক্ত আহতদের অতিরিক্ত হিসেবে র‍্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) দেওয়া হয়। এক ভায়াল টিকার দাম স্থানীয় বাজারে ৫০০ টাকা। আরআইজির দাম ১ হাজার টাকা। সারা দেশে উপজেলা, জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর চার শতাধিক টিকাকেন্দ্রে প্রাণীর আক্রমণের শিকার ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে এই টিকা দেওয়া হয়।

দেশ রূপান্তর

দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘নড়বড়ে নাটবল্টু বিমানে’। খবরে বলা হয়, ঘটনাটি ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবরের। সাত বছর সাত মাস পর আবার একই ঘটনা ঘটল। তাও আবার একই মডেলের ড্যাস-৮ এয়ারক্রাফটে। সেদিন এয়ারক্রাফটটি উড়েছিল সৈয়দপুর থেকে। গত শুক্রবার কক্সবাজার থেকে। দুবারই এয়ারক্রাফট থেকে চাকা খুলে পড়ে। প্রতিবারই এয়ারক্রাফটে ছিল ৭১ জন যাত্রী ও ক্রু। ক্যাপ্টেন ও পাইলটের দক্ষতায় প্রাণে বাঁচেন তারা।

বিমান বহরের এয়ারক্রাফটগুলোর নাটবল্টু বরাবরই নড়বড়ে। তা সেটা অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট হোক বা আন্তর্জাতিক। এমনকি ভিভিআইপি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটের নাটও নড়ে। এ কারণেই কি না এ ধরনের এয়ারলাইনসের যাত্রীরা এমনকি অফিসিয়ালরাও ‘দান-সদকায়’ মুক্তি খোঁজেন।

বারবার কেন এয়ারক্রাফট থেকে চাকা খুলে পড়ে? চাকা খুলে পড়ে গেলে ল্যান্ড করানো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে কয়েকজন পাইলট এবং ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। তারা বলেছেন, এ রকম পরিস্থিতিতে পাইলটের দক্ষতাই আসল। পাইলটকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ল্যান্ড করাতে হয়। প্রচ- ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ঠিকমতো ল্যান্ড করাতে না পারলে এয়ারক্রাফট রানওয়ে থেকে ছিটকে যেতে পারে। এয়ারক্রাফটে ফাটল ধরতে পারে এবং আগুন লেগে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

গত শুক্রবার এয়ারক্রাফটিতে ক্যাপ্টেন হিসেবে ছিলেন জামিল বিল্লাহ এবং তার ফার্স্ট অফিসার হিসেবে ছিলেন পাইলট জাওয়াদ। বিমানের কোড অব কন্ডাক্টের কারণে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিমানও তাদের প্রেসের মুখোমুখি করানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ গত শুক্রবার এই চাকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমগুলো সরব ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাপ্টেন-পাইলটের প্রশংসা করা হলেও বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ফুটে উঠেছে। এয়ারক্রাফট নিয়ে ক্যাপ্টেন ও পাইলট আকাশে ওড়ার আগে উড্ডয়ন উপযোগী কি না তা যাচাইবাছাই করা প্রকৌশল বিভাগের কাজ। তারা ধারাবাহিকভাবেই এ কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘দিনদিন বাড়ছে অসন্তোষ’-এটি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার আশার বাণী শোনাচ্ছেন। নতুন নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তুলতে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তাঁর যুগোপযোগী উদ্যোগ আর আশার বাণীতে কেউ আশস্ত হতে পারছেন না। রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা, মামলাবাণিজ্য, চাঁদাবাজি, শিক্ষাঙ্গনে লাগাতার আন্দোলনসহ সব ক্ষেত্রে দিনদিন অসন্তোষ বাড়ছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও একটি বিদেশি বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

যে ছাত্র-জনতা এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাদের মধ্যেও অসন্তোষ দিনদিন বাড়ছে। ঢাকা নগর যেন সভা-সমাবেশ ও দাবি আদায়ের মোক্ষম ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। এ যেন চারদিকেই অস্থিরতা। আর এ দাবি আদায়ে সবার টার্গেট প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা। অতীতে কোনো সরকারপ্রধানের বাসভবন মুখে এমন ঘন ঘন অভিযাত্রা দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। প্রতিদিনই নতুন দাবিতে আন্দোলনে নামছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সচিবালয়ের উচ্চপদের কর্মকর্তা থেকে গ্রামপুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজ, রিকশাচালক থেকে রেলকর্মী সবাই দাবি আদায়ের মিছিলে। ঢাকা যেন হয়ে উঠেছে ‘দাবির নগরী’।

প্রশ্ন উঠছে, দাবির আন্দোলন থামছে না কেন? বিশ্লেষকরা বলছেন, দাবির আন্দোলনগুলো বিভিন্ন ধরনের। কিছু দাবি যৌক্তিক ও সময়োপযোগী। যেমন শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও রেলকর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা ইত্যাদি। এ ছাড়া সামাজিক অস্থিরতা, বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে, যা দাবির আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে।

পাঠকের মতামত

নিউ এজ সম্পাদক জনাব নুরুল কবির এর সাক্ষাৎকারটি তাৎপর্যপূর্ণ।

Harun Rashid
১৮ মে ২০২৫, রবিবার, ৩:৩৯ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

‘দ্য উইক’ ম্যাগাজিনে তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি/ ‘নিয়তির সন্তান’

বৃটেনে ইমিগ্রেশন আইনে পরিবর্তন/ ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন স্টারমার

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status