বাংলারজমিন
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারপাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) আট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে, গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির ১৮ জন প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ড. জাহেদুল হাছানের সই করা এক অফিস আদেশে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন রূপপুর প্রকল্পের সাইড ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস। বরখাস্ত সংক্রান্ত নোটিশ বুধবার সকালে ই-মেইলের মাধ্যমে প্রকল্পে পৌঁছায় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন নিয়ম লঙ্ঘন, অসদাচরণ বা সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের ১০ (দশ) দিনের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। কেন তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। ইচ্ছা করলে তারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে শুনানির সুযোগও পাবেন। বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- সহকারী ব্যবস্থাপক ইকতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিপ্লব, শামীম আহমেদ, গোলাম আজম, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন; ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মনির; উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক হোসেনুজ্জামান খান; টেকনিশিয়ান রিয়াজ উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন। প্রকল্প এলাকায় নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে এই আটজনকে সাময়িকভাবে প্রকল্প এলাকায় ঢুকতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বরখাস্ত থাকার সময় তারা নিয়ম অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে চলতে বলেছে। কয়েকজন কর্মকর্তার দাবি, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় তাদের এভাবে একে একে বরখাস্ত ও চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক প্রকৌশলী বলেন, প্রতিষ্ঠানে ন্যায্য দাবি তুললেই আমাদের চাপে রাখা হয়। যারা মুখ খুলেছেন, তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টিই পূর্বপরিকল্পিত ছিল, যাতে কর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি তৈরি হয়।
এ বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক ড. জাহেদুল হাছানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ২৮শে এপ্রিল থেকে রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত প্রায় ১ হাজার ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলনে নামেন। ৬ই মে ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। পরদিন প্রকল্প এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ হয়। এরপর এনপিসিবিএল থেকে নিয়ম মেনে চলার নির্দেশনা পাঠানো হয়। সর্বশেষ, গত বৃহস্পতিবার ১৮ জন প্রকৌশলীকে চাকরিচ্যুত করা হয়।