ঢাকা, ১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

চৌদ্দগ্রামে ইউপি চেয়ারম্যানের লুটপাটের রাজত্ব

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ করে বাকি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। ভুয়া ভাউচার তৈরি করে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এছাড়াও একই রাস্তা নামে-বেনামে সংস্কারের কথা বলে একাধিবার প্রকল্প পাস করে বরাদ্দকৃত টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুথানে স্বৈরাচার পতনের পর পালিয়ে যান জাফর ইকবাল। 
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে জাফর ইকবালের ক্যাডার বাহিনীর হাতে বিএনপি ও জামায়াতের বহু নেতাকর্মী মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালে প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ইচ্ছামতো অফিস পরিচালনা করতেন। ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড সদস্যরা তার কথার বাহিরে গেলে বন্ধ রাখা হতো বিভিন্ন বেতন-ভাতা। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। এছাড়াও এলজিএসপি’র ৯ বছরের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ একাধিক ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে। কাজের উন্নয়ন শতভাগ দেখানো হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। ২০-২১, ২১-২২, ২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে টিআর, কাবিখা, এডিপি ও নন ওয়েজ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন দেখিয়ে উত্তোলন করেছে কোটি টাকা। ৪০ দিনের কর্মসূচিতে কোন শ্রমিক না লাগিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে পুরো এক তৃতীয়াংশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 
আত্মসাতের কয়েকটি প্রকল্প হলো- ২০-২১ অর্থবছরে হিংগুলা চানখাঁর দিঘীর পূর্ব-উত্তর কর্নারে ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকার কাজ করেছেন মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। জাগজুর বুড়ি মলিয়ারা থেকে পন্নারা বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণে ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দে ১ লাখ টাকার কাজ করেন। জঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাটের জন্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও কাজ করেছেন মাত্র ২০ হাজার টাকার। বুদ্দিন শাহিনের বাড়ির রাস্তা সিসি ঢালাই ৪ লাখ টাকার কাজ হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। বীরঙ্গনা আফিয়া খাতুনের বাড়ির রাস্তা নির্মাণে ব্যয়ে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হলেও কাজ হয়েছে মাত্র লক্ষাধিক টাকার মতো। এছাড়াও বেশ কয়েকটি কাজের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। 
এ বিষয়ে ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরিফ আহমেদ বলেন, ২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমাকে ২০ মাসের বেতন দেয়নি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জঙ্গলপুর সড়ক থেকে মাহফুজের বাড়ির রাস্তার আরসিসি ঢালাই প্রকল্পের সভাপতি ছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে না জানিয়ে এই টাকা উত্তোলন করেন। পরে আমি টাকার জন্য চাপ দিলে কোরবানির সময় দিবেন বলে আমাকে জানান। যদি টাকা না পাই তাহলে নির্বাহী অফিসারের কাছে আমি লিখিত জানাবো’।  ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মীর হোসেন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ঠিকমত বেতন-ভাতা পাইনি। কাজের জন্য একাধিকবার অনুরোধ করার পরেও তিনি আমাকে দেননি। সেই স্বৈরাচারি কায়দায় সব সময় অফিস পরিচালনা করতেন। পরে জানলাম কোনো হিসাব না দিয়ে মধুমতি ব্যাংক একাউন্ট থেকে চেয়ারম্যান প্রায় ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। 
এ বিষয়ে কনকাপৈত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবালের ব্যক্তিগত মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় বারবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ.দা.) গোলাম মাওলা বলেন, ওই সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবো। তদন্ত স্বাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো যাবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জামাল হোসেন বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবালের বিভিন্ন অনিয়মের তথ্যটি কেউ অবহিত করেনি। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status