বাংলারজমিন
নবীনগরে পানির প্রকল্পটি ৩ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি
শ্যামা প্রসাদ চক্রবর্তী শ্যামল, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারনবীনগর পৌরসভায় ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত পানির প্রকল্পটি তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। তিন বছর আগে পৌরবাসীকে পানি দেয়া হবে বলা হয়েছিল। অন্যদিকে পৌরবাসীর অভিযোগ সরবরাহ প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই পানি পাচ্ছে না- এমন অভিযোগ পৌরবাসীর। কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ দেখালেও বাস্তবে এর অগ্রগতি প্রায় শূন্য। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২০শে অক্টোবর তৎকালীন পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শিব শংকর দাস নবীনগর পৌর পানি সরবরাহ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বাস্তবায়নকারী সংস্থা ছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ঠিকাদারি কাজ পায় ‘এনপিআইএল-কম্বাইন্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ ও ‘মেসার্স তানভীর আহমেদ জেভি’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের আওতায় ১৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো, ৩ হাজার ৮৫৫টি হাউস কানেকশন এবং ১২টি স্ট্রিট হাইড্রেন্ট স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বসানো হয়েছে মাত্র দুটি নলকূপ- একটি পশ্চিম পাড়া এলাকায়, অপরটি ভোলাচং বাজারে। এবং এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুজন কেয়ার টেকার রাখা হয়েছে। পৌরসভা থেকে তাদেরকে মাসে মাসে বেতন দেওয়া হচ্ছে। এটিকে সচল রাখার জন্য ট্রায়াল দেওয়া হচ্ছে- এজন্য মাসে মাসে বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে পৌরসভাকে। অথচ অধিকাংশ এলাকায় কোনো পাইপলাইন বসানো হয়নি। যেসব এলাকায় বসানো হয়েছিল, সেগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। পৌরবাসির অভিযোগ, পরীক্ষামূলকভাবে কোথাও কোথাও পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হলে পাইপ ফেটে যায়, লিক হয়ে পানি বেরুতে থাকে। এরপর থেকেই প্রকল্পটি নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায় রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হওয়ায় দুটি কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বিল উত্তোলন করে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। দীর্ঘদিনেও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি ও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক কাউন্সিলর বলেন, কাজ কাগজে হয়েছে, বাস্তবে নয়। টাকা ভাগ হয়ে গেছে- উপরে-নিচে সবাই পেয়েছে। এটা ছিল সবচেয়ে বড় কমিশনের প্রজেক্ট। তৎকালীন পৌর মেয়র ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শিব শংকর দাসের ছত্রছায়ায় সবাই লাভবান হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় রাস্তাঘাট খুঁড়ে পাইপ লাইন বসানোর নাম করে বহু এলাকায় রাস্তা ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে সেগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে রাস্তা মেরামত করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজেরও পৌরসভা বিল করেছে। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম ও শাহ আলম বলেন, এটা শুধু পানি প্রকল্প নয়, বরং উন্নয়ন বাজেটের ভয়াবহ লুটপাট। আমরা তিন বছর ধরে শুধু নাটক দেখে যাচ্ছি, কিন্তু পানি পাচ্ছি না। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি চাই।
এদিকে, এনপিআইএল - কম্বাইন্ড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ঠিকাদার নজরুল ইসলাম ও সাবেক মেয়র শিব শংকর দাস এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন ।
অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স তানভীর আহমেদ জেভি’র মালিক সামিম আহমেদ দাবি করেন, তৎকালীন মেয়র আমাদের ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আটকে রাখায় কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে পানির মিটার ও সরঞ্জামের ঘাটতি কাটিয়ে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা এ বিষয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ সারোয়ার বাতেন বলেন, এই কাজটি সম্পূর্ণরূপে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করেছে, পৌরসভা এতে জড়িত নয়। দুর্নীতির অভিযোগও সত্য নয়। নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রাজীব চৌধুরী বলেন, এই প্রকল্পটি আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগের তবে আশা করছি, অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে। এবং পৌরবাসী দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানি পাবে ।