বাংলারজমিন
কালাইয়ে সওজের জলাশয় ৪০ বছর ধরে দখলদারদের কবলে
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারজয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের অধীনে থাকা প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ দু’টি পুরনো উন্মুক্ত জলাশয় ৪০ ধরে স্থানীয় শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে গেছে। সরকারি তদারকির অভাব, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং প্রভাবশালী মহলের দাপটে এ দখল প্রক্রিয়া দিনদিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন হারিয়ে যাচ্ছে সরকারি সম্পত্তি, তেমনি বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ, কৃষি, মৎস্য খাত এবং সরকারি রাজস্ব ব্যবস্থা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের উভয় পাশে বিস্তৃত দু’টি প্রাকৃতিক জলাধার এক সময় কৃষিকাজ ও মৎস্য উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। একটির অবস্থান দক্ষিণ দিকে পাঁচশিরা বাজার থেকে পুনট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। অন্যটি কালাই থানা এলাকার উত্তর দিক থেকে নিশ্চিন্তা বাজার পর্যন্ত। এই দুই জলাধারই একসময় খরা ও বন্যা মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য ছিল নির্ভরতার উৎস। বর্তমানে জলাশয় দু’টি কচুরিপানা, পৌরসভার বর্জ্য ও আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে জলাশয় রূপ নিয়েছে ডোবা ও ভাগাড়ে। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পরিকল্পিতভাবে মাটি ফেলে জলাশয়ের জায়গায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট এমনকি যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণও করেছেন। কয়েকটি স্থানে জলাশয়ের বুক চিরে বাড়ির সংযোগের রাস্তা পর্যন্ত বানানো হয়েছে।
এসব দখলের পেছনে যুক্ত রয়েছেন শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। যার মধ্যে রয়েছেন- খাইরুল আলম, মোজাফ্ফর হোসেন, রঞ্জু মিয়া, শহিদুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, আবু কালাম, আব্দুল হান্নান, মাহমুদুল হাসান, আবুল কাসেম, ফজলুর রহমান, মোহাম্মদ হাসান, আসিফ হোসেন ও ছানোয়ার হোসেন প্রমুখ। প্রত্যেকে ৫-৬ শতক পর্যন্ত জলাশয়ের জায়গা দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন। এছাড়াও, জলাশয়ের একাধিক অংশে সওজের অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- ব্র্যাক অফিস, টিএন্ডটি, ফায়ার সার্ভিস এবং একটি আলুর হিমাগার। এসব স্থাপনাও জলাশয়ের জায়গা দখলে নিয়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, জলাশয়ের দু’পাশে ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে ৫০-৬০টি পাকা ভবন। ১১টি নতুন দোকানঘর নির্মাণাধীন। এসব দোকান ইট, বালি ও পাকা কংক্রিট দিয়ে টেকসই কাঠামোতে তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন নতুন নতুন দোকান নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। ফলে দখল এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, জলাশয় দু’টি ছিল কৃষকের পানি সেচের ভরসা। এখন দখলদাররা নিজের মতো ব্যবহার করছে। এতে আমাদের মতো সাধারণ কৃষক চরম ক্ষতিগ্রস্ত। অপরদিকে, দখলকারী আব্দুল হান্নান দাবি করেন, এই জলাশয় ৪০ বছর ধরে পরিত্যক্ত ছিল। আমার লাগোয়া জমি রয়েছে, যাতায়াতের জন্য কিছু জায়গা মাটি দিয়ে ভরাট করেছি। এতে তো কারও ক্ষতি হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, জলাশয় দু’টিতে সরকারিভাবে মৎস্যচাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয় ছাড়া কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান বলেন, সরকারের কোটি টাকার সম্পদ এভাবে পড়ে থাকতে পারে না। সওজের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে এবং মৎস্য চাষের আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত দখল উচ্ছেদের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুতই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জলাশয় পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।