বাংলারজমিন
চলনবিলে ধানের বাম্পার ফলন, দামও ভালো
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারশস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল অঞ্চলে শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের বোরো ধান কাটা। একইসঙ্গে চলছে মাড়াই। চলনবিলের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে সবুজ ও সোনালি শীষের সমারোহ। হিমেল বাতাস ও মিষ্টি রোদে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ। প্রতিটি মাঠে মাঠে এখন কৃষকের সবুজ স্বপ্নে ছেয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বোরো ধানের দৃশ্য দেখে মনে হবে আবহমান বাংলার চিরায়িত রূপের কথা। দৃষ্টিসীমা ছাপিয়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ধানের সোনালি শীষ। সেই দোলায় লুকিয়ে রয়েছে চলনবিল অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন।
চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলাতে কৃষকরা প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যেই শুরু করেছেন আগাম জাতের বোরো ধান কাটা। প্রচণ্ড খরতাপ আর ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হতে পারে সে কারণেই কিছুটা আগেভাগেই শুরু করেছেন ধান কাটা। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হচ্ছে। সেইসঙ্গে ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক।
আগামী সপ্তাহেই পুরোদমে শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব। সেই উৎসবকে ঘিরে চলছে ধান কাটার শ্রমিক সংগ্রহ, খোলা পরিষ্কার ও মাড়াই যন্ত্র মেরামতসহ জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তোলার নানা প্রস্তুতি। বসে নেই কৃষক পরিবারের সদস্যরা।
বর্ষা মৌসুমে চলনবিলের জমিতে প্রচুর পরিমাণে পলি পড়ায় উর্বর হয় জমি আর সে কারণে চলনবিলের জমিগুলোতে ফলন বেশি হয়, তাজপুর ইউনিয়নের কয়রা বাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, এ বছর বিলের পানি আগে নেমে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ তার জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছে, ফলনও ভালো দামও বেশি পাচ্ছি। আমি প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে কৃষি আবাদ ধান চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে জমির সব ধান ঘরে তুলতে পারবো।
পাবনা থেকে চলনবিলে ধান কাটতে আসা শ্রমিক রহিম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ধান যেমন বেশি তেমনি দামও বেশি হওয়ার পরেও আমাদের শ্রমিকের মূল্য বেশি পাচ্ছি না। তাজপুরের শহরবাড়ি গ্রামের কৃষক আমিন আলী বলেন, এ বছর তিনি ৬০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত ১৩ বিঘা ধান কর্তন করেছেন। ধানের ফলন এবার অনেক ভালো পাচ্ছেন। দামও অনেক ভালো। কিছুদিন আগে দুইদিন বৃষ্টি হলেও ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। ঠিকমতো ধান কাটতে পারলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার মনের স্বপ্নটা পূরণ হবে।
ধান ব্যবসায়ী আ. মতিন মৃধা বলেন, গতবছরের তুলনায় এ বছর শুরুতেই কৃষক তার ধানের সঠিক দাম পাচ্ছে, আমরা মিনিকেট ধান কিনছি এক হাজার ৫০০ টাকা করে এবং আব্দুল গুটি ও কাটারিভোগ সবগুলো ধানের দাম এবার একটু বেশি। হয়তো আরও দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করছি।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আশেপাশের জেলা থেকে প্রচুর পরিমাণ ধান কাটা শ্রমিক সিংড়ার প্রতিটি গ্রামে আসছে। তা ছাড়াও কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়েও কৃষক তার জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানিয়েছে, চলতি মৌশুমে উপজেলায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন বেশি এবং তেমন কোনো পোকামাকড়ের প্রভাব পড়েনি। কৃষি জমিতে আমাদের কর্মরত ফিল্ড সুপারভাইজাররা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়। এ বছর দাম ভালো হওয়ায় কৃষক লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ শতাংশ ধান ইতিমধ্যে কর্তন শেষ হয়েছে। আশা করছি আর কিছুদিনের মধ্যে বাকি ধান কর্তন শেষ হবে।