বাংলারজমিন
রংপুরে একই সড়কে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রাণ গেল ৫ জনের
জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে
১৪ মে ২০২৫, বুধবাররংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে প্রাণ গেল একই পরিবারের তিনজনের। যাদের মধ্যে দুই বছরের শিশু ও এসএসসি পরীক্ষার্থীও ছিলেন। গত দু’দিনের ব্যবধানে এ মহাসড়কে ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ মহাসড়কে থ্রি-হুইলার যানবাহনের কারণে প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।
মঙ্গলবার সকালে কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ মহেষা গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম (৩৮) তার ভাতিজি এসএসসি পরীক্ষার্থী আফসানা আক্তার স্নেহা (১৭)কে মোটরসাইকেলে করে কাউনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। ওই মোটরসাইকেলে আরও ছিল আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী রুবিনা বেগম (৩২) ও ছেলে রহমত আলী (২)। তাদের মোটরসাইকেলটি সকাল সাড়ে ৯টায় কুর্শা ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর জুম্মারপাড় এলাকায় আসলে সামনে থাকা থ্রি-হুইলারটি হঠাৎ ব্রেক করে। এতে আশরাফুল মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং ভাতিজি স্নেহা, স্ত্রী রুবিনা ও শিশু সন্তান রহমত রাস্তায় ছিটকে পড়ে যায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাস চাপা দিলে ঘটনাস'লেই তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত আশরাফুলকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে এলাকাবাসী।
এদিকে রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে গত রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। মীরবাগ বুড়াইল ব্রিজ এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় নিহত হন কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানা মাস্টারপাড়া গ্রামের আজিমুদ্দিনের ছেলে বেলাল হোসেন (৪৫) ও কবির মামুদ গ্রামের নিবারণ চন্দ্র রায়ের ছেলে সঞ্জয় কুমার রায় (৪২)। গত দু’দিনে এ সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫ জন। স'ানীয়দের অভিযোগ, যানবাহনের চাপের তুলনায় সড়কের প্রশস্ততা কম এবং বেপরোয়া থ্রি-হুইলার চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা।
জানা যায়, রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান, ট্রলি, পিকআপ, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচল করে। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় যাওয়ার প্রধান রুট হওয়ায় সব সময় যানবাহনে ব্যস্ত থাকে আঞ্চলিক এ মহাসড়কটি। সড়কে ডিভাইডার না থাকায় ওভারটেকিং করতে গিয়ে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টি ও শীতকালে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয় এ সড়কে।
রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম বারী রাজ বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। কিন' প্রশাসনের নীরবতার কারণে মহাসড়কে বেপরোয়াভাবে এসব থ্রি-হুইলার চলাচল করছে। ফলে আজ একই পরিবারে ৩ জনের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় বাসচালকদের দোষী করা হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বাস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর কতো প্রাণ ঝরলে প্রশাসন ব্যবস'া নেবে, তা এখন দেখার বিষয়। রংপুর রিজিওয়নের হাইওয়ে পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, থ্রি-হুইলার সারা দেশে একটি বড় সমস্যা। এটি সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণও বটে। হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়ক সুরক্ষিত রাখতে থ্রি-হুইলারের চলাচল সীমিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত এক মাসে রংপুর রিজিওয়নে ১২শ’ মামলার মধ্যে প্রায় ৪শ’ মামলা হয়েছে থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে।