ঢাকা, ১৪ মে ২০২৫, বুধবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের আদেশের প্রতিবাদে আন্দোলনের হুমকি বিভিন্ন সংগঠনের

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে
১৪ মে ২০২৫, বুধবার

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি আদেশকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে হুমকি দিয়েছেন দেশের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষসহ লাখ লাখ নিম্ন আয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। একই সঙ্গে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ওই আদেশের ফলে দেশের একমাত্র দেশীয় মদ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু এন্ড কোম্পানীর উৎপাদনও হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে এই প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে বন্ধ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সূত্র বলছে, সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে হরিজন সম্প্রদায়, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ডোমসহ বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত নিম্নআয়ের মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত কেরু এন্ড কোম্পানী দেশীয় মদ উৎপাদন করে। এই মদ দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাজারজাত করে। গত ৪ঠা মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, প্রধান কার্যালয়ের  উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হাবীব তৌহিদ ইমাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশের কারণে মাথায় হাত উঠেছে দেশীয় মদের ভোক্তা ও পরিবেশবাদীদের। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কেরু এন্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিমিটেড কর্তৃক উৎপাদিত দেশী লিকারের বোতলের গায়ে যথাক্রমে লেবেলিং নিশ্চিতকরণ করতে হবে। এর আগে গত ২৬শে নভেম্বর অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন, অর্থ ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ মামুন মিয়া স্বাক্ষরিত স্বারকে শর্ত দেয়া হয়, পরিবেশ বান্ধব বোতলের ধরণ নির্ধারণে (প্লাস্টিক/কাঁচ) প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে। 
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত গত ১২ই ফেব্রুয়ারি স্বারক পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, চঊঞ  বোতলে  মদ বাজারজাতকরণের পূর্বে পবিরেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কেরু এন্ড কোম্পানির ডিস্ট্রিলারি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। এ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত বছরের ২৮শে আগস্ট প্লাস্টিক বোতলকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। একইদিনে আরেক স্বারক পত্রে কেরু এন্ড কোম্পানীর চঊঞ বোতলে  দেশীয় বাংলা মদ বিক্রির অনুমোদন বাতিল করার জন্য নির্দেশ দেন। এসব নির্দেশনার কারণে চরম বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন দেশীয় বাংলা মদের ভোক্তারা। তারা জানান, এটা গরিবরা খায়। যাদের উচ্চমূল্যে বিদেশী লিকার খাওয়ার কোন সুযোগ নেই তাদের জন্য সরকারিভাবে ব্রিটিশ আমল থেকে এ ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর অজানা কারণে প্লাস্টিক বোতলে লেভেলিং করে মার্কেটিং করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। এর ফলে দেশী মদের বাজার মূল্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। সাধারণ  ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে এই দেশি মদের বাজার ধ্বংস হবে। 
এ বিষয়ে হরিজন সম্প্রদায়ের নেতা হিরোন কুমার দাস বলেন, এটা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চক্রান্ত। বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেয়ার জন্যই দেশি মদ নিয়ে এ চক্রান্ত শুরু করেছে। এটা সহ্য করবো না। হরিজন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষকে সাথে নিয়ে রাস্তায় নামবো। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, যে কোন ধরনের প্লাস্টিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। মাইক্রো প্লাস্টিক মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। এই মাইক্রো প্লাস্টিকের প্রভাবে মানুষের শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে শুরু করে নানা রকম দূরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। আর চঊঞ বোতল ওটিএম আরো মারাত্মক ক্ষতিকর। কারন এটা ভূমিতে যাওয়ার আগেই মাইক্রো আকারে মানুষের পাকস্থলিতে যাবে, যার ফলে মানুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। 
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাদিকুল ইসলাম বলেন, যে কোন ধরনের প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী গত ১২ই ফেব্রুয়ারি এক পত্রের মাধ্যমে প্লাস্টিক বোতলে বাংলা বা দেশি মদের বাজারজাতকরণের অনুমোদন বাতিল করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই পত্রের বিষয়টি আড়াল করে গত বছরের ২৬শে নভেম্বরের এক পত্রের আদেশ বলে ফের কেরু এন্ড কোম্পানির উৎপাদিত দেশি বা বাংলা মদ প্লাস্টিক চঊঞ  বোতল ওটিএম এর মাধ্যমে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষমিতর কারণ হতে পারে। কেরু এন্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাবিক হাসান বলেন, এটা মন্তণালয় ও অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status