বাংলারজমিন
লক্ষ্মীপুরে শিশু শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৫, বুধবারপড়া মুখস্ত না করায় লক্ষ্মীপুরে এক মাদ্রাসার হেফজু বিভাগের ৭ বছরের শিক্ষার্থী ছানিম হোসেনকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে শহরের আল মঈন ইসলামী একাডেমী নামের মাদ্রাসায় এঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স'ানে নির্যাতনের চিহৃ রয়েছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) মো. রেজাউল হক,সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল মোন্নাফসহ পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস'ল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও শিক্ষার্থীরদের স্বজনরা জানায়, রায়পুর উপজেলার চরবংশীর কুছিয়া এলাকার হতদরিদ্র হুমায়ুন মাতাব্বর এর ছেলে ছানিম হোসেনকে ২০২৩ সালে আল মঈন ইসলামী একাডেমী মাদ্রাসার হিফজু বিভাগে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে মাদ্রাসায় থেকে লেখা পড়া করে আসছে ছানিম। পড়ালেখার সময় কারনে-অকারনে প্রায়ই শিক্ষক মাহমুদুর রহমানসহ অন্য শিক্ষকরা তাকে মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মাওলানা বসির আহমেদকে জানিয়েও কোন সুরাহ হয়নি। বুধবার সকালে পড়া মুখস্ত করতে না পারায় শিক্ষক মাহমুদর রহমান শিক্ষার্থী ছানিম হোসেনকে বেদম মারধর করে। পরে তাকে মারধর করার বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মা জয়নবকে জানায় ছানিম। এরপর বিকেলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছানিমের মায়ের কাছে ফোন দিয়ে জানায়, তার ছেলে ছানিম গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এখবর ছড়িয়ে পড়ার পর উত্তেজিত জনতা মাদ্রাসার সামনে গিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার ও মাদ্রাসা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ ঘটনাস'লে গিয়ে নিহত শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এদিকে ছেলের এই মৃত্যুর খবর শুনে মা জয়নব ও বাবা হুমায়ুন মাতাব্বর মাদ্রাসায় গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর আগেও এই মাদ্রাসার আরো কয়েক শিশুকে নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিচার না হওয়ায় এই মাদ্রাসার শিক্ষকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচার করার দাবী জানান বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পাশাপাশি মাদ্রাসাটি বন্ধের দাবীও জানান তারা।
শিক্ষার্থীর মা জয়নব ও বাবা হুমায়ুন মাতাব্বর অভিযোগ করে বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলে ছানিমকে কোরআন শিক্ষা দিয়ে হাফেজ বানানো জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করে। প্রতিমাসে মাদ্রাসার বেতন ও হোষ্টেল ভাড়া পরিশোধ করে আসছেন। কিন' মাদ্রাসার শিক্ষক মাহমুদুর রহমানসহ অন্য শিক্ষকরা প্রায় ছানিমকে কারনে-অকারনে মারধর করতো। সবশেষ বুধবার সকালে পড়া মুখস্ত করতে না পারায় ছানিমকে বেদম মারধর করে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ৭ বছরের শিশু কোনদিন আত্মহত্যা করতে পারেনা বলেও দাবী করেন তারা। ছানিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তারা।
প্রধান অধ্যক্ষ মাওলানা বসির আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থী ছানিম নিজে মাদ্রাসার টয়লেটে গিয়ে গলায় গামছা পেছিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে সকালে মাদ্রাসার শিক্ষক মাহমুদুর রহমান শিক্ষার্থী ছানিমকে পড়ালেখা করার জন্য কিছুটা শাসন করেন বলে স্বীকার করেন। কিন' শিক্ষার্থীদের শরীরের কিছু আঘাতের চিহৃ রয়েছে। মাদ্রাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। যোহরের নামাজ পড়ার পর সে টয়লেটে প্রবেশ করে আর বাইর হয়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর-সার্কেল) মো. রেজাউল হক বলেন, শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে শিশুটির গায়ে অনেক আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তাকে শারিরীকভাবে নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এঘটনার সাথে জড়িত শিক্ষক মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস'া নেয়া হবে। পাশাপাশি মামলার প্রস'ুতিও চলছে বলে জানান তিনি।