বাংলারজমিন
কুষ্টিয়ায় প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে হাউজিংয়ের সীমানা প্রাচীর ভাঙলো শিক্ষার্থীরা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৫, বুধবার
কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের প্লট বরাদ্দের দুই সপ্তাহের মাথায় বরাদ্দকৃত প্লট হোল্ডারদের প্লটগুলোর সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর করেছে স্থানীয় একটি স্কুলের ছাত্ররা। এই ভাঙচুরের ঘটনার নেতৃত্ব দেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক। সোমবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্কুল চলাকালীন সময়ে স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় এবং কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের বরাদ্দকৃত মালিকানা জমিতে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির প্লটের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় ছাত্রদের সঙ্গে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন প্লট হোল্ডাররা। দীর্ঘ ১০ বছর অতিবাহিত হলেও স্বৈরাচারী সরকারের কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক এমপি মাহাবুব-উল আলম হানিফের হস্তক্ষেপে জমি বুঝে পাননি আবেদনকারীরা। হানিফের নির্দেশে সে সময় জেলা প্রশাসক এই জমি ফেরত নিয়ে নেয়। তারপর অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের স্থাপনা করার জন্য পরিকল্পনা করে, যার ফলশ্রুতিতে টাকা পরিশোধের পরও প্লট ছিল অধরা।
স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর চলতি বছরের ২৯ ও ৩০শে এপ্রিল জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ প্লটপ্রাপ্ত মালিকদের কাছে প্লট হস্তান্তর করে বুঝিয়ে দেন। প্লট বুঝে পাওয়ার পরে প্লটের মালিকরা তাদের প্লটগুলো সীমানা প্রাচীর, বাঁশ ও খুঁটি দিয়ে তাদের প্লটগুলো চিহ্নিত করে এবং সীমানা নির্ধারণ করে রাখে। কিন্তু সোমবার ছাত্ররা সীমানা প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এর আগে স্কুলের সামনে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কে স্কুলের ছাত্ররা ও শিক্ষকবৃন্দ মিলে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে।
রফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন- আমার ছেলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পূর্ব পাশে ২.৫ কাঠার প্লটের জন্য টাকা প্রদান করেছিল। কিন্তু সাবেক এমপি হানিফের কারণে আমরা কেউ প্লট পাইনি। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনা এবং সাবেক এমপি হানিফের পতনের পরে গত মাসের ২৯ তারিখে আমরা প্লট বুঝে পেয়েছি। তারপর আজ (১২ই মে) হঠাৎ স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেস পরে এসে প্লটের উপরে হামলে পড়ে। এটা কোনোভাবেই স্কুলের ছাত্রদের নিজস্ব বুদ্ধির দ্বারা সম্ভব হয়নি। আমরা দেখেছি মানববন্ধনে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তার ইশারায় এই কাজ হয়েছে বলে আমরা জানি।
আমিনুর রহমান নামের আরেকজন প্লট হোল্ডার বলেন, কয়েকদিন আগে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের কাছে প্লট প্রতি ৫০ হাজার করে চাঁদা দাবি করে। আমরা তাতে রাজি না হলে তারা বলে আমরাও ব্যবস্থা নিতে জানি- সেইসব চাঁদাবাজদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের ইন্ধনে স্কুল চলাকালীন সময়ে ক্লাস বাদ দিয়ে ছাত্রদের দিয়ে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হলো। এ ব্যাপারে লাহিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ছাত্রদেরকে ক্লাসে ফেরানোর জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। মানববন্ধনে যোগ দিয়ে সেখানে তিনি আইটি পার্ক দাবি করেন- এমন প্রশ্ন করলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
প্লট হোল্ডারদের মাধ্যমে জানা গেছে, সাবেক এমপি হানিফের হস্তক্ষেপে আমরা প্লট বুঝে পাইনি, জমি পেতে তারা আলাদা আলাদা ৭টি মামলা করে, এবং হাইকোর্ট থেকে প্রত্যেক মামলায় তাদের পক্ষে রায় দেয় এবং রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই আইনিভাবে এপ্রিল মাসের ২৯ এবং ৩০ তারিখে প্লট হোল্ডারদের জমি বুঝিয়ে দেয়া হয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ থেকে। এ বিষয়ে জানতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদুর রহমানকে মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি; পরে কথা বলবো।