ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজমিন

স্বরাজ্যের প্রতিবেদন

স্বচ্ছতার অভাব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে

মানবজমিন ডেস্ক

(১ বছর আগে) ১২ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার, ৮:৫৩ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন

mzamin

অর্থনীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে অস্বচ্ছতা বাংলাদেশে একটি প্রথাসিদ্ধ আচরণে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট এড়িয়ে আবারও উন্নতির পথে ফিরে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের জন্য সবথেকে বড় বাধা এই অস্বচ্ছতা। ভারতীয় মাসিক ম্যাগাজিন স্বরাজ্যের এক রিপোর্টে এমন কথাই বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত ৪ মে থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে ১০ শতাংশ দাম হারিয়েছে টাকা। এক ডলার কিনতে যেখানে ৮৬.২৭ টাকা লাগতো, এখন সেখানে লাগছে ৯৪.৯৫ টাকা। বিদেশ থেকে জ্বালানি কিংবা সারের মতো পণ্য আমদানি করতে এখন বেশি খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি, ফরেন রিজার্ভ এবং জিডিপি বৃদ্ধির মতো সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। 

ওই রিপোর্টে বলা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে যদিও ২১ জুলাই থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে টাকার মান ১.০৬ শতাংশ কম বলা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এর দাম কমেছে ১৪ শতাংশ। এক ডলার কিনতে ১২০ টাকাও লাগছে। দুটি হিসাবের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। অর্থনীতির একজন আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্রও বুঝবে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা হচ্ছে স্বচ্ছতার অভাব।

বিজ্ঞাপন
কোভিড মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার জিডিপি নিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে তা বিশ্ব ব্যাংকের অনুমান থেকে অনেক বেশি। অথচ সেই বাংলাদেশকেই এখন বেইলআউট প্যাকেজের জন্য ছুটতে হচ্ছে। বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, ঢাকা ৪.৫ থেকে ৭.৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সাহায্য চাইছে আইএমএফ থেকে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি থেকে এক বিলিয়ন ডলার করে সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ। 

সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকার ইউরিয়া সার এবং জ্বালানি তেলের দাম যথাক্রমে ২৫ এবং ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এর আগে এশিয়ার যেসব দেশে সবথেকে কম দামে জ্বালানি পাওয়া যেতো, তারমধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশ। তবে জ্বালানির এই হঠাত মূল্যবৃদ্ধিও স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্বরাজ্যের ওই রিপোর্টে। ২০২১ সালের অক্টোবরে গত ৫ বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় তেলের দাম। এ বছরের মার্চে সেটি ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। কিন্তু এরপরেও ঢাকা শক্ত হয়ে বসেছিল। উপমহাদেশের মধ্যে সবথেকে কম মূল্যস্ফীতির কথা জানাচ্ছিল। কিন্তু গত দুই মাসে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম ৩০ শতাংশ কমে আসে। অথচ সেই সময়েই বাংলাদেশে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করা হলো। 

স্বরাজ্যের ওই রিপোর্টে বলা হয়, স্বচ্ছতা না থাকায় কোনোভাবেই জানার উপায় নেই টাকার মূল্য কমে যাওয়া, আমদানিতে কড়াকড়ি এবং তেল ও সারের দাম বৃদ্ধি অর্থনীতিতে কতখানি প্রভাব ফেলছে। বছরে মাত্র এক বারই প্রবৃদ্ধির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৫ শতাংশ, যদিও সেই রিপোর্ট কেউ বিশ্বাস করছে না। তবে বাস্তবে সবাই প্রভাব ঠিকই টের পাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। 

রিপোর্টে বলা হয়, সামনে বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। যদি এই অস্বচ্ছতা থেকেই যায় তাহলে সর্বত্রই ঝুঁকি থেকে যাবে। বেইলআউট প্যাকেজ হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশকে টিকে থাকতে সাহায্য করবে। কিন্তু সংকট সমাধানে বড় সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে। ঢাকার এখন চীনের কাছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়ার কাছে ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার এবং ভারতের কাছে ৭.৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ রয়েছে। যেসব প্রকল্পের জন্য এসব ঋণ আনা হয়েছে, সেগুলোর ব্যয়ও বাড়ছে। আগামি দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই বাংলাদেশকে বিশাল ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।

ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার এবং ভিয়েতনামের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফরেন রিজার্ভে টান পড়েছে মিয়ানমারের। লাওস পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বাংলাদেশেরও হেঁচকি উঠছে। রপ্তানি, সহযোগিতা, ঋণ এবং ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ ভারতের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত নিজেও যে উন্নতির স্বপ্ন দেখে তার পথে বড় বাধা হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়। বাংলাদেশে যে কোনো সংকটের সরাসরি প্রভাব পড়বে ভারতের পূর্ব এবং উত্তরপূর্ব অঞ্চলগুলোতে। তাই আঞ্চলিক ভালোর জন্য হলেও বাংলাদেশে সংস্কার প্রয়োজন বলে দাবি করা হয় ওই রিপোর্টে।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status