অনলাইন
পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়াতে কাশ্মীরে জলাধার সংস্কার কাজে মন দিয়েছে ভারত
মানবজমিন ডিজিটাল
(৪ ঘন্টা আগে) ৫ মে ২০২৫, সোমবার, ৫:৫৮ অপরাহ্ন

২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। হামলার অভিযোগে পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। সেইসঙ্গে জলধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হিমালয় অঞ্চলে কাশ্মীরের দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তথা বাঁধের জলাধার সংস্কার করাচ্ছে মোদি সরকার। বিষয়টির সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র রয়টার্সকে এখবর জানিয়েছে। এই কর্মকাণ্ডটি সিন্ধু পানি চুক্তির আওতাভুক্ত বাইরের চুক্তিগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম পদক্ষেপ। যা ১৯৬০ সাল থেকে তিনটি যুদ্ধ এবং একাধিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও মেনে আসছিল উভয় দেশ। তবে গত মাসে কাশ্মীরে ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর তদন্তকারীরা যখন তিনজন হামলাকারীর মধ্যে দুজনকে পাকিস্তানি হিসেবে শনাক্ত করে তখন নয়াদিল্লি ৮০ শতাংশ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার চুক্তিটি পাকিস্তানের সাথে স্থগিত করে।
ইসলামাবাদ এই হামলায় তাদের কোনও ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে।সেইসঙ্গে স্থগিতাদেশের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে বলেছে, ‘পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বন্ধ বা ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধের একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।’
তিনটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভারতের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কোম্পানি, রাষ্ট্রায়ত্ত এনএইচপিসি লিমিটেড (NHPC.NS) দ্বারা জলাধারের পলি অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে যাকে ফ্লাশিং অপারেশন বলা হয়। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রাথমিকভাবে জলাধারগুলো থেকে পলি-ভরা পানি নীচের দিকে ছেড়ে দেয়া হয়, যার ফলে হঠাৎ করে প্লাবনের সম্ভাবনা থাকে। তারপরে জলাধারগুলো পুনরায় পূরণ করার সাথে সাথে পানির প্রবাহ হ্রাস পায়।
ভারতের এই পদক্ষেপটি তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানে পানির সরবরাহকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে না, কারণ পাকিস্তান তার সেচ এবং জলবিদ্যুতের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর উপর নির্ভরশীল। তবে ভারত যদি অন্যান্য বাঁধগুলোতেও একই ধরণের প্রচেষ্টা শুরু করে তবে চাপের মুখে পড়তে পারে পাকিস্তান। কাশ্মীর অঞ্চলে এরকম অর্ধ ডজনেরও বেশি প্রকল্প রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, সালাল এবং বাগলিহার প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে ভারত পাকিস্তানকে অবহিত করেনি। ১৯৮৭ এবং ২০০৮/০৯ সালে নির্মিত হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো এই প্রকল্পের কাজে হাত দেয়া হচ্ছে। কারণ চুক্তি অনুসারে এই ধরনের কাজ বন্ধ ছিল।
ভারতের এনএইচপিসি এবং দুই দেশের সরকারই এ বিষয়ে রয়টার্সের পাঠানো ইমেলের কোনও জবাব দেয়নি। ১ মে থেকে তিন দিন ধরে এই ফ্লাশিং অপারেশন চলেছে। রয়টার্সকে একটি সূত্র জানিয়েছে , 'প্রথমবারের মতো এই ধরণের মহড়া অনুষ্ঠিত হলো। এটি আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করবে এবং টারবাইনের ক্ষতি রোধ করবে। আমাদের জলাধার পরিষ্কারের জন্য অন্যান্য গেটগুলোও খুলতে বলা হয়েছে , যা আমরা ১ মে থেকে শুরু করেছি।এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য বাঁধের কার্যক্রমকে অবাধ করা ।
'কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে চেনাব নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষজন জানিয়েছেন যে, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সালাল এবং বাগলিহার উভয় বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে যে নদীর কিছু অংশ পূর্ণ প্রবাহে রয়েছে এবং অন্য অংশগুলো বিশাল পলি জমার কারণে আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
দুটি সূত্র জানিয়েছে যে, ৬৯০ মেগাওয়াট সালাল প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ তার ক্ষমতার অনেক কম ছিল, কারণ পাকিস্তান এই ধরনের ফ্লাশিং অপারেশনে বাধা দিয়েছিলো । অন্যদিকে পলি জমা হওয়ার ফলে ৯০০ মেগাওয়াট বাগলিহার প্রকল্পের উৎপাদনও প্রভাবিত হয়েছিল। একজন সূত্র জানিয়েছে, 'ফ্লাশিং কোনো সাধারণ বিষয় নয় কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। যদি এর ফলে কোনও প্লাবন ঘটে তবে ভাটির দেশগুলোকে অবহিত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।'
দুটি প্রকল্পই নির্মাণের জন্য পাকিস্তানের সাথে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন ছিল, কারণ পাকিস্তান তার ভাগের পানি হারানোর বিষয়ে চিন্তিত। ১৯৬০ সালের চুক্তির অধীনে, সিন্ধু এবং এর উপনদীগুলোকে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিভক্ত করা হয়েছিল। ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের তথ্য এবং বন্যার সতর্কতা কথা ভারত পাকিস্তানের সাথে শেয়ার করেছিল।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ভারতের পানিমন্ত্রী গত মাসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ‘সিন্ধু নদীর এক ফোঁটাও পানি পাকিস্তানে পৌঁছাবে না’। উভয় পক্ষের সরকারি কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ভারত তাৎক্ষণিকভাবে পানির প্রবাহ বন্ধ করতে পারে না, কারণ চুক্তিটি পাকিস্তানকে বরাদ্দকৃত তিনটি নদীর উপর তথাকথিত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে, যার জন্য উল্লেখযোগ্য জলাধারের প্রয়োজন হয় না। ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান কুশবিন্দর ভোহরা, যিনি পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু নদীর বিরোধ নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন, বলেছেন সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতাদেশের অর্থ হল ভারত এখন স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিতে পারে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করেছে এবং দু দেশ হেগের সালিশি আদালতে তাদের কিছু মতবিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছে।
সূত্র : রয়টার্স
পাঠকের মতামত
ভারত শক্তের ভক্ত নরমের যম।