অনলাইন
ইরান থেকে তেল কিনলেই পড়তে হবে নিষেধাজ্ঞার মুখে, চরম হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
মানবজমিন ডিজিটাল
(১৩ ঘন্টা আগে) ২ মে ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২৮ অপরাহ্ন

ইরান থেকে তেল কিনলেই তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তেহরানের দ্রুত অগ্রসরমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পরিকল্পিত আলোচনা স্থগিত হওয়ার পর এই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ইরানি তেল বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের সমস্ত ক্রয় এখনই বন্ধ করতে হবে!” তিনি বলেন, যে কোনও দেশ বা ব্যক্তি ইরান থেকে এই পণ্য কিনলে তারা কোনওভাবেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যবসা করতে পারবে না। ইরানি তেল আমদানিকারী দেশগুলোর উপর দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেওয়ার পর ট্রাম্প কীভাবে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করবেন তা স্পষ্ট নয়। তবে তার বক্তব্য ইরানের শীর্ষস্থানীয় গ্রাহক চীনের সাথে উত্তেজনা বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করেছে। এটি এমন এক সময় যখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের কারণে চীন তীব্রভাবে বিরক্ত । ট্যাঙ্কার ট্র্যাকিং তথ্যের উপর ভিত্তি করে মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন গত অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলেছে যে, ২০২৩ সালে চীন ইরানের অপরিশোধিত তেল এবং কনডেনসেট রপ্তানির প্রায় ৯০% দখল করেছে। ফেডারেল রাজস্ব বৃদ্ধি এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ট্রাম্প আলাদাভাবে চীনের উপর ১৪৫% শুল্ক আরোপ করেছেন।
ওমান আগামী সপ্তাহান্তে পরিকল্পিত পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ার পর ট্রাম্পের এই হুমকি এলো। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল-বুসাইদি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্টে পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন -'লজিস্টিক কারণে আমরা ৩রা মে শনিবারের জন্য অস্থায়ীভাবে পরিকল্পিত মার্কিন ইরান বৈঠকের সময়সূচী পুনর্নির্ধারণ করছি। পারস্পরিক সম্মতিতে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।" আল-বুসাইদি, যিনি এখন পর্যন্ত তিন দফা আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছেন, তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচিও আলোচনা স্থগিত করার জন্য "লজিস্টিক এবং কারিগরি কারণ" কে দায়ী করেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন -' ইরানের পক্ষ থেকে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্পের কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমরা একটি ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি অর্জনের জন্য আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। যে চুক্তি মোতাবেক ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি চিরকাল শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং ইরানের অধিকারকে সম্মান করা হবে। ' এদিকে, মার্কিন আলোচকদের সাথে পরিচিত একজন ব্যক্তি বলেছেন যে আমেরিকা রোমে চতুর্থ দফার আলোচনায় কখনও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেনি । তবে, সেই ব্যক্তিটি বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশা করে যে "অদূর ভবিষ্যতে" হয়তোবা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য ভ্যাটিকান আগামী সপ্তাহে রোমে তাদের সম্মেলন শুরু করবে। ওমানের রাজধানী মাস্কাটে মার্কিন-ইরান আলোচনার আরও দুটি দফা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আলোচনায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে আমেরিকার ইরানের উপর আরোপিত কিছু কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে। আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরাঘচি এবং মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ। ট্রাম্প বারবার হুমকি দিয়েছেন যে, যদি কোনও চুক্তিতে পৌঁছানো না হয়, তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হবে। ইরানি কর্মকর্তারা ক্রমবর্ধমানভাবে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে তারা ঘরে মজুদ ইউরেনিয়াম দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা জারি রাখবে। ২০১৫ সালে বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি তেহরানের কর্মসূচি সীমিত করেছিল। তবে, ২০১৮ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে তা থেকে সরে আসেন, যার ফলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের কারণে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য এখনও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। ইতিমধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "অপারেশন রাফ রাইডার" নামে একটি বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে চলছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার ভোরে ইরানকে বিদ্রোহীদের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন -' হুথিদের প্রতি তোমার (ইরান) প্রাণঘাতী সমর্থন আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা জানি তুমি ঠিক কী করছো। তুমি খুব ভালো করেই জানো যে মার্কিন সামরিক বাহিনী কী করতে সক্ষম এবং তোমাকে সতর্ক করা হচ্ছে । নয়তো এর ফল ভোগ করতে হবে।'
সূত্র :এবিসি নিউজ