অনলাইন
মানবজমিনকে সিলেটের সাবেক মেয়র
যুগে যুগে সিলেটবাসী রাষ্ট্রের কাছে বৈষম্যের শিকার
আরিফ মাহফুজ, লন্ডন থেকে
(১২ ঘন্টা আগে) ২ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:৩৮ অপরাহ্ন

যুগে যুগে সিলেটবাসী রাষ্ট্রের কাছে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। লন্ডনে মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষৎকারে তিনি এ অভিযোগ করেন।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। সিভিল সার্ভিসে আমাদের পর্যাপ্ত লোক নেই। মিলিটারিতে নেই, রাজনীতিতে জাতীয় পর্যায়ে সিলেট বিভাগকে ডমিনেট করার জন্য বড় লিডারশিপ ডেভেলপ হতে না দেয়া- সব দিক থেকেই আমাদের বিভাগ এক ধরনের শূন্যতার মধ্যে আছে।বিগত ১৭ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিজমের সময় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন সিলেট বিভাগে হয়নি। যতটুকু উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে বিএনপির সরকারের আমলে, তবে আওয়ামী লীগের আমলে একেবারেই শূন্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কারিগরি, যোগাযোগ, নদী খনন, বিমানবন্দরসহ সব ক্ষেত্রেই সিলেটকে চক্রান্ত করে বৈষম্যের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে। আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সম্প্রীতিসহ সকল সামাজিক ক্ষেত্রে সিলেট বিভাগকে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা চলে। তিনবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের জন্য কিছুই করা হয়নি। অথচ নোয়াখালী-কুমিল্লায় বন্যার্তদের জন্য বড় বড় ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট দেয়া হয়েছে। সিলেট-ঢাকা রেল লাইনের কোনো উন্নতি হয়নি, জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। অথচ দেশের অন্যান্য রেলগুলো চমৎকার। বিদুৎতের আন্ডারগ্রাউন্ড প্রজেক্ট বাতিল করে দেয়া হয়েছে। গ্যাস উৎপাদন হয় সিলেটে, কিন্তু আমাদের গ্যাস সমস্যা, অন্যত্র গ্যাস চলে যাচ্ছে। সিলেটবাসী এই বৈষম্য থেকে মুক্তি চায়।
লন্ডনে আসার কারণ সম্পর্কে আরিফ বলেন, তার মেয়ের ঘরের নাতনিকে দেখতেই এসেছেন। তবে লন্ডনে আসলে স্বাভাবিকভাবেই দলের প্রধানের সঙ্গে দেখা হবে।
তবে বিশেষ দুটি মিশন নিয়ে এসেছেন বলে যে খবর বের হচ্ছে, সে মিশনের কোনো সত্যতা নেই বলেও জানান তিনি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রসাশক না এমপি নির্বাচন? কোনটিকে প্রাধান্য দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্পূর্ণভাবে এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। দলের প্রধান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবো। তবে আগামী নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন চাইতেই পারি। কারণ আমি দীর্ঘ দিন দলে শ্রম দিয়েছি, দীর্ঘদিন কারা বরণ করেছি। বৃহত্তর সিলেটে সবচাইতে নির্যাতিত নেতা আমি, আমার তো মনোনয়নের জন্য দলের কাছে দাবি থাকতেই পারে। দল আমাকে বার বার মূল্যায়ন করেছে, মেয়রের মনোনয়ন দিয়েছে। আমার দুর্ঘটনার পর বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। তাছাড়া আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ আমাকে পছন্দ করে। আমিও তাদের জন্য সাধ্যমতো কাজ করেছি। দল যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মনোয়ন দেয় তাহলে তার জন্যও কাজ করবো।
সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে সাবেক এই মেয়র বলেন, বিএনপিকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরাতেই একটি কুচক্রী মহল অপপ্রচার চালিয়েছে। তবে যে দু’একজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদেরকে বহিস্কার করা হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগের ক্ষেত্রেও অ্যাকশন নেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ৫ই আগস্টের পর সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতাদের বাইরে যেতে সহযোগিতার বিষয়ে সাবেক এই মেয়র বলেন, সবাই আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে এমন অপপ্রচার চালিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবসা বাণিজ্য নিজের নামে নিয়ে যারা বহাল তবিয়তে আছে তাদের লিস্ট দলের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে, আশা করি ব্যবস্থাও হবে।
দলীয় রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে ও তারেক রহমানের সঠিক দিক নির্দেশনায় বিএনপি আজও টিকে আছে। দলের নেতাকর্মীরা জেল-জুলুম, গুম, খুনের শিকার হয়েছে তবুও দল ছেড়ে যায়নি। তবে চাটুকারদের আমরা দলে জায়গা দিতে চাই না, বহিরাগতরা এখন দলে এসে ভিড় করছে। জিয়াউর রহমানের দলে চাটুকারদের জায়গা হবে না।
ছাত্রদল করা অবস্থায় জাসদ ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছেন অভিযোগ করে আরিফুল হক আরো বলেন, ছাত্রদল যখন তেমন শক্তশালী ছিল না, তখন সিলেটে জাসদ ছাত্রলীগ আমাদের ওপরে অনেক নির্যাতন করেছে। তবে বর্তমানে এরা বিএনপিতে এসে চাটুকারিতা করছে। এদের দেখলে দাউ দাউ করে বুকে আগুন জলে। এই চাটুকারদের ছাড় নেই। তারা যদি তওবা করে অতীতের দোষের জন্য মাফ চায় তাহলে মাফ করে বিএনপিতে জায়গা দেয়া যেতে পারে।
আগামী নির্বাচীন সম্পর্কে চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই সরকারকে সমর্থন করি। তবে অনির্বাচিত সরকার দিয়ে দেশ চলে না। আমরা আশা করি ড.ইউনূস একজন সজ্জন-সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি তার কথার বরখেলাপ করবেন না এবং সরকার অচিরেই একটি ক্লিয়ার রোডম্যাপ দেবেন।