ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

নির্বাসিত দাউদ হায়দার না আমরা?

আরিফ হায়দার
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
mzamin

আমাদের পারিবারিক মিলনমেলা আর হবে না। অগ্রজ দাউদ হায়দার, আমাদের  খোকন ভাই চলে গেলেন  না ফেরার দেশে। ১৯৭৪ সালে একটি কবিতা লেখার জন্য বাংলাদেশ থেকে  নির্বাসিত  করা হয় তাকে। প্রথমে নির্বাসিত জীবন কাটান ভারতে, পরবর্তীতে জার্মানিতে। 

কবি দাউদ হায়দার দুইবার নির্বাসিত হন। প্রথমবার  বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয়বার ভারত থেকে। শেষ ডেরা বাঁধেন জার্মানিতে। সে অনেক কথা। তবু ভারত সরকার মাঝেমধ্যে ভারতে আসবার অনুমতি (ভিসা) দিতেন আর সেই সুবাদে খোকন ভাই আমাদের দেখার জন্য কলকাতায় ছুটে আসতেন। আর আসার সময় সূচি পেলেই আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে আনন্দের ঝড় বয়ে যেত। এ যেন একটা উৎসব। আমরা সবাই মিলে মিটিং করতাম কে কবে কলকাতায় যাচ্ছি। সিদ্ধান্ত হতো সবাই যেন একসঙ্গে যেতে পারি, তাতে মিলনমেলাটা ভালো হবে, আর খোকন ভাইয়ের  সময়টাও অনেকটা বাঁচবে। সময় বাঁচার কথাটা বলার কারণ তার অনেক সেমিনার থাকতো, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, প্রকাশকের সঙ্গে দেখা করা। মাত্র এক মাসের জন্য ভারতে থাকার অনুমতি এর মধ্যে সবকিছু ঠিক ঠাক করতে হবে। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে শেষ দেখা হলো। শরীরটা বেশ একটা ভালো ছিল না, তবু মনের শক্তিতে যেন চলাফেরা। এর আগে কখনো বলতে শুনিনি “এবার আসলাম, আগামীতে আসতে পারবো কিনা জানি না...। “তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে হাঁটতে শুরু করলেন।

২০২৪-এ অনেকটা সময় ছিলাম। আমরা চার ভাই, এক বোন। আমি  নোয়া ভাই (মাকিদ হায়দার), স্বপন ভাই (জাহিদ হায়দার),  হেনা আপা (ফরিদা হায়দার) তখন থেকেই নোয়া  ভাইয়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। কলকাতা থেকে ফিরে এসে না ফেরার দেশে চলে গেলেন নোয়া ভাই। আর আজ (গতকাল) ২৭শে এপ্রিল ২০২৫ চলে গেলেন খোকন ভাই (দাউদ হায়দার)।  এখন বুঝতে পারছি নিজের মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার সময় কাছে থাকতে না পারাটা কতো কষ্টের। ঠিক এই রকম ভাবে মা, সোনা ভাই (জিয়া হায়দার),  দাদু ভাই (রশীদ হায়দার),  নোয়া ভাই (মাকিদ হায়দার)  এরকম পরিবারের অনেক আত্মীয়স্বজন যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তখন দূর থেকে ফোনে খোকন ভাই শুধু বলতো “সবাই আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে...)’’। তার এই কথার মধ্যে যে কি যন্ত্রণা ছিল তখন বুঝতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি- না দেখার যন্ত্রণাটা কি! আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি আর কখনো খোকন ভাইকে   ঘিরে মিলনমেলা হবে না।

চার ভাই পৃথিবী ছেড়ে একে একে চলে গেলেন। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না- দাউদ হায়দার ভাইয়ের চলে যাওয়ার খবরটা কতোটুকু সত্য।  কথাটা বলার কারণ, আমাকে যারা ফোনকল করছেন প্রত্যেকের একটাই কথা “সংবাদটা কি সত্য!’’ আমার বাংলাদেশ এখন সত্য-মিথ্যার উপর ভাসমান। অনুজ হিসেবে অনেক কথা বলার আছে, তা হয়তো এ সময়ে বলা যাবে না। আমাদের ভাগ্য এতটাই খারাপ খোকন ভাইয়ের শেষ সময় কাছে থাকতে পারলাম না। আজ যারা তার কাছে আছেন তারাই বড্ড আপন  মানুষ।  বার্লিনে থাকা তার বাঙালি বন্ধুরা শেষ কাজটি  করছেন, এই দূরে থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা  ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। এখন আপনারাই খোকন ভাই (দাউদ হায়দার)-এর কাছে একখণ্ড বাংলাদেশ। দাউদ ভাইয়ের ঘরে একটা কাঁচের বোতলে বাংলাদেশের মাটি ছিল, সেই মাটিগুলো তার সমাধির উপর দিয়ে দিলে হয়তো বাংলাদেশের মাটি বুকে করে ঘুমিয়ে থাকবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status