প্রথম পাতা
সিন্ধু নদের বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত গঙ্গা চুক্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে
মানবজমিন ডিজিটাল
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি ‘স্থগিত’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। যা প্রমাণ করে, নদী তীরবর্তী প্রতিবেশীদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটলে ভারত পানিকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করবে না। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত। দ্য হিন্দুকে পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নিশাত বলেন, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তি পুনর্নবীকরণের সম্ভাবনার ওপরও ‘ছায়া ফেলেছে’। যখন ঢাকা ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা পানি চুক্তি স্বাক্ষর করে তখন বাংলাদেশের সন্দেহ ছিল যে, ভারত প্রতিশ্রুতি অনুসারে গঙ্গার পানি সত্যিই ভাগাভাগি করবে কিনা, কারণ নদীর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ভারতের হাতে। সিন্ধু নদের পানি চুক্তি একটি বৃহৎ চুক্তি যা ভারতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল।
অধ্যাপক নিশাত মনে করেন, ‘সমালোচকরা এখানে সিন্ধু নদের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করতে পারেন এবং যুক্তি দিতে পারেন যে, গঙ্গার বিষয়ে ভারতের আশ্বাসেরও কোনো মূল্য নেই।’ শেখ হাসিনার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বকালে ১৯৯৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়া এবং প্রধানমন্ত্রী (সাবেক) শেখ হাসিনার মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি বাংলাদেশকে বর্ষাকালে ন্যূনতম পানি প্রবাহের সুযোগ করে দেয়। তিন দশক পর ‘পারস্পরিক সম্মতিতে’ এই চুক্তি নবায়ন করা যেতে পারে। সেই অনুযায়ী চুক্তিটি ২০২৬ সালে নবায়নের জন্য উত্থাপিত হবে।
অধ্যাপক নিশাত বলছেন, ‘গঙ্গা চুক্তি নবায়নের বিষয়টি আগামী বছর আসবে, কিন্তু ভারত যদি সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখে তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনে ভারতের আগ্রহ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।’
সামপ্রতিক অতীতে একাধিকবার ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নের বিষয়টি উভয় দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় স্থান পেয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই বিষয়টি উঠে আসে। এটি ছিল ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বিদ্রোহের আগে হাসিনার শেষ রাষ্ট্রীয় সফর। এরপর তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঙ্গা নদী বিষয়ে সংলাপ জারি রেখেছে। গত ৬ই মার্চ কলকাতায় ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি টিমের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যেখানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা পানি চুক্তি। এই উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ফারাক্কায় যৌথ পর্যবেক্ষণ স্থানটিও পরিদর্শন করে।
অধ্যাপক নিশাত মনে করেন, চুক্তিগুলো নিয়ে আইনি দলিল রয়েছে। যা থেকে বোঝা যায় এই ধরনের দলিল রাজনৈতিক অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত হবে না। যদিও সিন্ধুর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অনুভূতি আইনি নথিকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ রাজনৈতিক মতপার্থক্য বৃদ্ধি পেলে ভারত পানিকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করবে না।
গঙ্গা ছাড়াও তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা রয়েছে। তিস্তার ব্যবস্থাপনায় চীনের অংশগ্রহণে সম্মত হয়েছে ঢাকা। এই অধ্যাপক বলছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসিনা আমলের অনেক উদ্যোগের বিরোধিতাকারী অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চীনের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গেও তার সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। গত সপ্তাহে ঢাকায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে দারের ঢাকা সফর আপাতত বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র: দ্য হিন্দু