প্রথম পাতা
যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে মরিয়া ঢাকা
মিজানুর রহমান
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
ওয়াশিংটনে সিরিজ মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা। অন্তিম মুহূর্তে ‘যারপর নাই’ চেষ্টা করছেন তারা। সময় যত গড়াচ্ছে আশার আলো ততই কমছে এমনটা দাবি করে দরকষাকষিতে যুক্ত দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে- পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রভাব কমাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করার বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগী বাংলাদেশ। দরকষাকষির সূচনা থেকেই হস্ত এবং হৃদয় দুটো খোলা রেখেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ কারণে এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন লাখ টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। টন প্রতি ২০-২৫ ডলার বেশি দিয়ে ওই গম কেনা হচ্ছে কেবলমাত্র ট্রাম্প প্রশাসনের মন পেতে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- মার্কিন প্রশাসন যেন বাংলাদেশের প্রতি একটু সদয় থাকে এজন্য লোকসান স্বীকার করে হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনকূলে কিছু বাণিজ্য বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক’টি উড়োজাহাজ (বোয়িং) আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিমাণ বাড়ানোরও চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত বেশির ভাগ পণ্য ‘শূন্য শুল্ক’ করে দেয়া হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে। স্মরণ করা যায়- ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। আর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৩৬ কোটি ডলার। সূত্র মতে, শর্তগুলোর বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত শুল্ক চুক্তি আটকে গেছে। ৯ই জুলাই’র আগে এ নিয়ে আলোচনায় কাক্সিক্ষত অগ্রগতির সম্ভাবনা কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন চুক্তি হলে ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের হার কিছুটা কমতো। সূত্র মতে, মার্কিন প্রশাসন বিশেষত বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে এই ক’দিনে। সেই আলোচনার বিভিন্ন পর্বে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন। ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের ভাষ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত শুল্ক চুক্তিতে অনেক শর্ত যুক্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় যেসব শর্ত মানা সম্ভব তাতে ওয়াশিংটনের সায় মিললেই চুক্তিতে উপনীত হবে দুই দেশ। সে পর্যন্ত নেগোসিয়েশন চলবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে আসছে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩রা এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। শুল্কের হার কম-বেশি করে দেশটি একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় ৬০টি দেশের বিষয়ে। বাড়তি শুল্ক আরোপ কার্যকরের কথা ছিল গত ৯ই এপ্রিলে। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্ক হারের ঘোষণা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে আগামীকাল অর্থাৎ ৯ই জুলাই।
উল্লেখ্য, তিন মাসের জন্য সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে এপ্রিলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানো নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে বলে জানানো হয়।
কাছাকাছি সময়ে মার্কিন বাণিজ্য দূত জেমিসন গ্রিয়ার বরাবর আলাদা চিঠি পাঠান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। চিঠিতে রপ্তানির যে কোন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে ঢাকা সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী বলে জানানো হয়। অবশ্য চিঠি দু’টি ওয়াশিংটনে পৌঁছার আগেই ৩ মাসের স্থগিতাদেশ আসে। সেটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি অনুরোধ রয়েছে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কায় থাকা দেশগুলোর।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, ভিয়েতনাম, জাপান ইত্যাদি দেশ পাল্টা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ইতিমধ্যে জানিয়েছে যে, তারা এ নিয়ে আর কোনো আলোচনায় বসবে না। দেখার বিষয় ৯ই জুলাই (বাংলাদেশ সময় ১০ই জুলাই) ট্রাম্পের তরফে নতুন কী ঘোষণা আসে?