প্রথম পাতা
বিএনপি’র ৪৪৪ নেতাকর্মীর নাম শহীদের তালিকায়
কিরণ শেখ
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪৪৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এই আন্দোলনে দলটির বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ এখনো শেষ হয়নি, কাজ চলমান রয়েছে। আন্দোলনে দলের শহীদদের পরিবার এবং আহতদের পাশে যেমন বিএনপি দাঁড়াচ্ছে, ঠিক একইভাবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সারা দেশে নিহতদের পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়াচ্ছে দলটি। ঢাকায় ১৯টি স্পটসহ দেশের ৩৪ জেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক নিহতের পরিবার ও আহতের পাশে দাঁড়িয়েছে দলটি। এরমধ্যে শতাধিক নিহতের পরিবার ও আহতের দায়িত্ব নিয়েছে বিএনপি। মূল দলের পাশাপাশি ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এবং দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথক পৃথকভাবে তাদের সহযোগিতা দিয়ে পাশে রয়েছে। সামনেও এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতরা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। তাদের ভাষ্য, তাদের সন্তানরা বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিলেও তা এখনো দূর হয়নি। এজন্য বিএনপিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। এই ১০ মাস বিএনপি তাদের পাশে না দাঁড়ালে অনেককে ভিক্ষা করে সংসার চালাতে হতো বলেও জানিয়েছে আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। আগামীতেও এই সহযোগিতা যাতে অব্যাহত থাকে সে কথাও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি বিএনপি’র উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদদের সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাজশাহীতে শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী মাখমিন শিল্পী বলেন, সন্তান হারানোর পরে আমি বাড়িতে থাকতে পারি নাই। তারপরেও আমরা বৈষম্যের মধ্যে আছি। এটা দূর করতে হবে। সবাই এগিয়ে আসুন বৈষম্য দূর করুন। দেশ এখনো স্বাধীন হয় নাই।
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, যাদের জন্য আমার ছেলে মারা গেছে, সেই সারজিস (সারজিস আলম) ও হাসনাতকে (হাসনাত আবদুল্লাহ) হাজারটা ফোন দিলেও তারা ফোন ধরে না। এখনই তারা আমাদের খোঁজ নেন না। পরে কি করবেন? বিএনপি যদি আমাদের পাশে না থাকতো তাহলে ভিক্ষা করতে হতো।
নাদিম। তিনি ছাত্রদলের একজন কর্মী। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯শে জুলাই যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে গুলিবিদ্ধ হন। বাম পায়ের হাঁটুর নিচে গুলি লেগে তিন ইঞ্চি হাড় নিয়ে বের হয়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন তা বাম পা চার ইঞ্চি ছোট, দুই ইঞ্চি হাড় নেই। তিনি মানবজমিনকে বলেন, দল থেকে প্রতিনিয়তই তার খোঁজ-খবর নিচ্ছে। সহযোগিতাও পাচ্ছেন তিনি। দলের প্রতি তার কোনো অভিযোগ নেই বলেও জানান নাদিম।
ওদিকে, গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’র নিহতদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৭০ জন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৩ জন, ছাত্রদলের ১৪২ জন, কৃষক দলের ৮ জন, শ্রমিক দলের ৬০ জন, মৎস্যজীবী দলের ২ জন, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) ১ জন, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (জেটেব) ৩ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৩৩ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩ জন, খুলনা বিভাগে ১১ জন, বরিশাল বিভাগে ৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, ফরিদপুর বিভাগে ১ জন, সিলেট বিভাগে ৭ জন এবং কুমিল্লা বিভাগে ১৯ জন বিএনপি’র এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে আরও দু’জন কর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ছাড়া এই আন্দোলনে বিএনপি এবং দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের তালিকা প্রণয়ন করা এখনো শেষ হয়নি। তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
ইঞ্জিনিয়ার শাহরিয়ার। বিএনপি’র একজন কর্মী। ২৩শে জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন মিরপুরে তার মাথায় গুলি লাগে। পরে নিউরোসাইন্স হাসপাতালে মারা যান। তার স্ত্রী রাজিয়া মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি থেকে তার পরিবারের খোঁজ-খবরও নিচ্ছে। দল তাদের পাশে আছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত মাদারীপুর শিবচর উপজেলায় যুবদল নেতা শাহাদাত হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বাম পায়ের উরুতে গুলি লেগে দু’-টুকরো হয়ে যায়। ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার পর এখন কিছুটা ভালো। কিন্তু তার পা ভাঁজ হয় না। সরকার থেকেই তার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা করানো বলেও জানান শাহাদাত। তিনি বলেন, এখন আমার চাওয়া একটাই, দলের আহত ও নিহতদের যেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভুলে না যান।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ২০১০ সাল থেকেই মানবাধিকারমূলক কাজ শুরু হয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আওয়ামী পুলিশের রোষানলে পড়ে বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়। সেই সব নির্যাতিত পরিবারের পাশে নীরবে-নিভৃতে সাধ্যের মধ্যে কাজ করা হয়। ৫ই আগস্ট হাসিনার পলায়নের পর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে সারা দেশে কাজ শুরু করা হয়। এখন পর্যন্ত ৩৪টি জেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’। আগামীতে আরও জেলায় শহীদ ও আহতদের কাছে যাওয়ার কর্মসূচি চূড়ান্ত রয়েছে। এভাবেই মানবিক কাজগুলো করে অসহায় মানুষের কাছে তারেক রহমানের সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করবে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।