ঢাকা, ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

জুলাই অভ্যুত্থানে স্বামীর মৃত্যু, দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মা

ফাহিমা আক্তার সুমি
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
mzamin

ছোট্ট দুই সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন চলছে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে যুদ্ধ করছি। আমার জীবনে তখন থেকে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। আমার সুখের সংসার শেষ হয়ে গেছে। বড় ছেলে সারাক্ষণ ওর  বাবার জন্য কাঁদে। মেয়েটা তো তখন আমার গর্ভে ছিল। এখন নিজেদের অসহায় মনে হয়। আমাদের খবর কেউ রাখছে না। সবাই ব্যস্ত সবার সুবিধা ভোগে। কী হবে আমার দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ? এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে ১৯শে জুলাই গুলিতে শহীদ হওয়া ইমনের স্ত্রী মুলসুমা আক্তার লাকি। অভাব-অনটনে সংসার চালাতে না পেরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছেন তিনি। ছোট্ট দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। গণ-অভ্যুত্থানের পরে সরকারি-বেসরকারি সহায়তাও পাননি যথাযথ। 

শহীদ ইমনের স্ত্রী মুলসুমা মানবজমিনকে বলেন, ১৯শে জুলাই তার মৃত্যুর এক বছর হবে। আমার দুই সন্তান নিয়ে যুদ্ধ থামছে না। যাদের অনেক কষ্ট তাদের খবর না রেখে সবাই ব্যস্ত নিজেদের সুবিধা নিতে। অর্থের অভাবে দুই-তিন মাসের ঘর ভাড়া আটকে যায়। সন্তানদের যত্ন ঠিকভাবে নিতে না পারায় তারা কিছুদিন পর পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওদের রেখে আমাকে কাজে চলে যেতে হয়। আমি খুব সুখেই ছিলাম, যেদিন থেকে আমার স্বামী মারা গেছে সেদিন থেকে আমার জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীতে আসে। সে তার বাবাকে কোনোদিনও দেখতে পারবে না। আমার অবুঝ বাচ্চাদের বাবা হত্যার বিচার চাই। একজন নারীর স্বামী মারা গেলে শুধু সেই বুঝে কতো ঝড় তার ওপর দিয়ে যায়। এত অল্প বয়সে আমার সন্তানরা তাদের বাবাকে ও আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি। আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। দুই সন্তানকে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মা হিসেবে তো সন্তানদের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। রায়েরবাগ থেকে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জে গিয়ে কাজ করতে হয়।

তিনি বলেন, স্বামী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ছিল আমার সংসার। ছয় বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। ছিল ভিটে-বাড়িহীন অভাবের সংসার। ভাগ্য পরিবর্তনে দু’জনে কিশোরগঞ্জ থেকে চলে আসি ঢাকায়। পোশাক কারখানায় চাকরি নেই। ভাগ্যের চাকা কিছুটা পরিবর্তন হলেও আমার সুখের সংসারে নেমে এসেছে অন্ধকার। সে যখন মারা যান তখন আমি সন্তানসম্ভবা ছিলাম। এ বছরের মার্চে আমার কোলজুড়ে আসে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান। এই শিশু সন্তানকে রেখে আমি আবার কাজে যোগ দেই। 
মুলসুমা বলেন, আমার দুই সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবো? কীভাবে পড়াশোনা করাবো সন্তানদের। এসব চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়ছি। সরকারি-বেসরকারিভাবে অল্প কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। কাগজপত্র অনেক জায়গায় জমা দিয়েছি। যে টাকা পেয়েছি সে টাকা দিয়ে এতদিন চলেছি। বর্তমানে অনেক ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। ওদের বাবা মারা যাওয়ার পর কিশোরগঞ্জে চলে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানেও ভিটে-বাড়ি নেই। আমার শ্বশুর অনেক আগে মারা যান। শাশুড়ি মাটি কাটার কাজ করতেন এখন কিছু করতে পারেন না। ১৩ হাজার টাকা বেতন পাই এখানে। বাসা ভাড়া দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। আমি না খেয়ে থাকতে পারি কিন্তু ছোট সন্তান ও বয়স্ক মানুষকে তো না খাইয়ে রাখতে পারি না। ভেবেছিলাম দু’জনে কাজ করে একটু ভিটে-বাড়ি করবো কিন্তু স্বপ্ন দেখার আগেই আমার স্বপ্ন শেষ। ছেলেটাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলাম কিন্তু এখন আর পাঠাতে পারি না সেখানে। একদিকে আর্থিক সমস্যা অন্যদিকে আমি বাসায় না থাকলে তাকে কে দেখবে। 

তিনি বলেন, বাড়িঘর না থাকায় গ্রামেও যেতে পারছি না। ঘরে ঠিকমতো খাবার কিনতে পারি না। ছেলেটাকে ওর বাবা অনেক ভালোবাসতো। ছেলেও বাবাকে ছাড়া থাকতে পারে না। দুই ঈদ গেল ওদের বাবাকে ছাড়া, ছেলেটা বাবার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট মেয়েটাকে দেখে যেতে পারলো না। তার মেয়ে সন্তানের অনেক সখ ছিল। ঘটনার দিন ঘরে বাজার না থাকায় কারখানায় গিয়েছিল টাকা আনতে। সেখান থেকে ফেরার পথে গুলি লাগে বুকের বাম দিকে। সে তো কোনো অন্যায় করেনি। এই হত্যার বিচার চাইবো কার কাছে?।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status