ঢাকা, ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

শহীদ শাকিলের বাবার আক্ষেপ

ফাহিমা আক্তার সুমি
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

সন্তান হারানোর এই যন্ত্রণা কীভাবে কমবে? সবসময় মনে হয় ‘আব্বু আব্বু’ বলে আমার সন্তান ডাকছে। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনেছিলাম। ওরা আমার বুকের মানিককে কেড়ে নিলো। ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার ইচ্ছা ছিল শাকিলের। পড়াশোনা শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। বাবা-মাকে অনেক যত্নে রাখবে। এখনো বিচার ব্যবস্থার কোনো অগ্রগতি দেখছি না। তখনকার ফ্যাসিস্টরা এখনো দেশের বড় বড় স্থান দখল করে বসে আছে। কথাগুলো বলছিলেন অভ্যুত্থানে শহীদ শাকিলের বাবা বেলায়েত হোসেন। ২০২৪-এর ১৮ই জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হন মো. শাকিল হোসেন। তিনি মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী ছিলেন।

শহীদ শাকিলের বাবা বেলায়েত হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সন্তানের মৃত্যুর পর আমরা দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কখনো ভাবিনি সন্তানকে ছাড়া এই বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকতে হবে। আমার শাকিল তো আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। আবার জুলাই ফিরে এলেও জুলাই অভ্যুত্থানে এত এত সন্তান হত্যার বিচার এখনো পাইনি। বিচার ব্যবস্থার কোনো অগ্রগতি দেখছি না। বরং তখনকার ফ্যাসিস্টরা দেশের বড় বড় স্থান দখল করে বসে আছে। তাদের নিয়ে দেশ পরিচালনা হচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে; আমরা তো সেটি চাই না, আমার সন্তান আমার কোলে নেই। জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে এই দেশকে তারা উর্বর করে রেখে গেছে, সেই উর্বর জমির উপরে বসে অনেকে এখন ফ্যাসিবাদীদের পক্ষে কাজ করছে। 

সন্তানের স্মৃতি মনে করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সন্তান যে বিছানায় ঘুমাতো সেই বিছানায় এখন আমি ঘুমাই। যে টেবিল-চেয়ারে বসে পড়াশোনা করতো ওখানে আমি বসি। দরজায় কলিংবেল বাজলে এখনো মনে হয় দরজা খুললে ‘আব্বু’ বলে শাকিল জড়িয়ে ধরবে। বুকের ভেতরের কষ্ট আমি কীভাবে কমাবো। সবসময় মনে হয় আমার সন্তান যদি ফিরে আসতো। ওর সঙ্গে যে কতো কথা বলার আছে, কতো কথা যে জমানো রয়েছে। আমার সন্তানের মৃত্যুর দিন থেকে আমরাও মারা গিয়েছি। সন্তানের লাশ কাঁধে নেয়ার পর কি কোনো বাবা বেঁচে থাকতে পারে! ওর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সারাক্ষণ সন্তানের কথা বলে কাঁদতে থাকে। এখনো আমি সারারাত বসে বসে শাকিলের কথা ভেবে কাঁদি। পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে। আমার পরিবারের আলো ছিল শাকিল। এখন আমাদের কে দেখবে? ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমার মা শহীদ হয়েছেন। ২০২৪ সালে এসে আমার সন্তান শহীদ হয়েছে। তিন মেয়ের পরে সে ছিল আমার একমাত্র ছেলে। ওর মা পারভীন আক্তার দীর্ঘ আট বছর ধরে শয্যাশায়ী। দুইবার স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। নিজে হাতে খেতেও পারে না। এখন সন্তানের শোকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ৩৬ বছর ধরে পরিবার নিয়ে টঙ্গীতে ভাড়া থাকি। শাকিল আমাকে খুব অনুসরণ করতো। শাকিলকে সবসময় লেখাপড়ার দিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিতাম। তার জামা-কাপড়গুলো সাজিয়ে রেখেছি সুন্দর করে। ওর সাজানো সবকিছুর দিকে তাকালে মনে হয় আমার শাকিল আছে, ঘোরাঘুরি করছে। এই অনুভবগুলো রাত-দিন আমার সঙ্গে এখনো ঘুরছে।

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status