প্রথম পাতা
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না এনসিপি
নীলফামারী ও সৈয়দপুর প্রতিনিধি
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি’র) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা অনেক কিছু আশা করছিলাম। কিন্তু আমাদের সব আশা পূরণ হয়নি। আমরা এখনো মনে করি, আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা দেখছি আবারো পুরোনো সিস্টেম ও সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। পুরোনো সংস্কৃতি ফেরত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান যারা করেছেন, তারা এখনো জাগ্রত আছে, এখনো রাজপথে আছেন। কেউ যদি মনে করেন পুরোনো দখলদারিত্ব ও পুরোনো সন্ত্রাসের রাজনীতি আবার ফেরত আনবেন তাহলে তাদের পরিণতিও স্বৈরাচার হাসিনার মতোই হবে। গতকাল দুপুরে, জুলাইয়ের পদযাত্রার তৃতীয় দিনে নীলফামারী শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে অনুষ্ঠিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ বলেন, সকল শহীদরা আমাদের অনুপ্রেরণা। এই মানুষরা জীবন দিয়েছেন, একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য। যে বাংলাদেশে অথনৈতিক বৈষম্য থাকবে না। যে বাংলাদেশে মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে। সাধারণ মানুষ ভাতের অধিকার পাবেন। শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের অধিকার পাবেন। এই রকম একটি বাংলাদেশের জন্য তারা জীবন দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির একটি ছেলে যদি রাস্তায় নেমে পুলিশের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে যেতে পারে, তাহলে আমরা যারা জীবিত আছি তারা কি একটা নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে পারবো না। ছোট ছোট ছেলেরা যারা জীবন দিলো, তাদের জীবনের বিনিময়ে সুন্দর ও স্বপ্নের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। রংপুরের কৃষক সন্তান আবু সাঈদ, নীলফামারীর সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রুবেল ইসলাম ও সৈয়দপুরের সাজ্জাদ হোসেনের বিদ্রোহ আমরা মনে রেখেছি। তারা নিজেদের জীবন দিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ত্বরান্বিত করেছেন। আমরা সেই ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। গণঅভ্যুত্থানের পরে যদি সকল দাবি পূরণ হতো, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দল গড়তে হাতো না। কিন্তু আমরা দেখছি এক বছর হয়েছে। কোনো দাবি পূরণ করা হচ্ছে না। কেবল নির্বাচন নির্বাচন বলে আমাদের সামনে একটা মুলা ঝুলানো হচ্ছে। আমরা এই ধরনের কোনো ধোঁকাবাজিতে বিশ্বাস করি না। আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচিত সরকার চাই। তবে গণঅভ্যুত্থানে যারা হত্যা করেছে সেই শেখ হাসিনা ও তাদের দোসররা আজ বাংলাদেশের প্রতি এলাকায় লুকিয়ে আছে তাদের গ্রেপ্তার করে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কার হতে হবে, সংস্কারের মধ্যদিয়ে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধান লাগবে। আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদী সংবিধান ছুঁড়ে ফেলতে হবে। যে সংবিধান জনগণের সংবিধান নয় সে সংবিধান রাখার কোনো মানে হয় না। পথসভায় উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সায়েদ লিয়ন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, জেলা সমন্বয়ক আব্দুল মজিদসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃৃবৃন্দ। এর আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার তৃতীয় দিন দুপুরে সৈয়দপুর উপজেলার হাতীখানা কবরস্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের কবর জিয়ারতের মধ্যদিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। কবর জিয়ারতে দোয়া পাঠ করান শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের বাবা আলমগীর হোসেন।
এদিকে সৈয়দপুরে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না এনসিপি। দুপুরে সৈয়দপুরের হাতিখানা কবরস্থানে জুলাই শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের কবর জিয়ারত শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আমরা উত্তরাঞ্চল থেকে পদযাত্রা শুরু করেছি। এতে ছাত্র-জনতার ব্যাপক সাড়া মিলছে। আমরা দেশব্যাপী এ পদযাত্রা ছড়িয়ে দেবো। তিনি আরও বলেন, শুধু ঢাকা নিয়ে উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন চিন্তা থাকতে হবে গোটা দেশ নিয়ে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও মাফিয়া তন্ত্র শেষ হয়নি। তিনি উল্লেখ করে বলেন, আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস ধরে রাখতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না যাতে ফ্যাসিস্ট ঘুরে আসে।