ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

অগ্নিঝরা জুলাই

মাহিনের বাবার আক্ষেপ

ফাহিমা আক্তার সুমি
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

শূন্যতা আর হাহাকার নিয়ে বেঁচে আছি। আমার ঘরে এখন আর আলো নেই। কার কাছে বিচার দিবো? আমার সন্তান বিজয়টা দেখে যেতে পারেনি। মাহিন আর আমাদের বাবা-মা বলে ডাকে না। হৃদয়ের এই ক্ষত কোনোদিনও মুছবে না। আমার সন্তান দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। কিন্তু অভ্যুত্থানে শহীদদের স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো স্বীকৃতি পায়নি আন্দোলনে শহীদেরা। যে বৈষম্যের জন্য আন্দোলন সেই বৈষম্য রয়ে গেছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি দেশের। 

কথাগুলো বলছিলেন ২০২৪ সালের ৪ঠা আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আব্দুল্লাহ আল মাহিনের (১৬) বাবা জামিল হোসেন। শহীদ মাহিনের বাবা জামিল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়েছে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়, কোটা আন্দোলন, চাঁদাবাজি বন্ধে। কিন্তু বর্তমান সরকার আবার ২৪-এর কোটা বহাল রেখেছে। যদি ২৪-এর কোটা সে রাখে তাহলে কেন ’৭১-এর কোটার জন্য আমার সন্তান জীবন দিয়েছে। এটা কি ঠিক হচ্ছে? আজকে আমার সন্তান মারা গেছে এক বছর কিন্তু আমাদের সন্তানদের কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। আমার সন্তান তো সারা বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছে। সন্তান মারা যাওয়ার কয়েকদিন পর আমরা ময়মনসিংহ চলে আসি। এখান থেকে বলে আমার সন্তানের অধিকার আদায় করতে হলে আমাকে ঢাকায় যেতে হবে, সে ঢাকায় মারা গেছে। 

তিনি আরও বলেন, আমার সন্তানের মামলায় আমি নিজে বাদী। উত্তরা পশ্চিম থানায় গত বছরের ২৮শে আগস্ট মামলা করেছিলাম। তিনি বলেন, মাহিনকে নিয়ে ছিল আমাদের সব স্বপ্ন। সে সময় আমার ফ্লাইট ছিল, সন্তান যেহেতু নেই আমি আর বিদেশ যাইনি।

তিনি বলেন, ৪ঠা আগস্টের সকাল এগারোটার দিকে মাহিন ঘুম থেকে উঠে ফোনে কিছু একটা দেখে দ্রুত মাকে নাশতা দিতে বলে। এরপর নাস্তা না খেয়ে শুধু একটা ডিম সিদ্ধ দুই কামড়ে মুখে পুরে পানি দিয়ে গিলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায়। আধঘণ্টা পর আমি বাসায় ফিরলে ওর বাইরে যাওয়ার কথা শুনে মুঠোফোনে কল দেই। অন্য একজন ফোন ধরে জানায় মাহিন গুলি খেয়েছে। খবর শুনে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে গিয়ে দেখি চিকিৎসক-নার্সরা মাহিনের রক্ত মুছছেন আর কাঁদছেন। সেখান থেকে একটি এম্বুলেন্সে করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে মাহিনকে নিয়ে যাই। রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যায় মাহিন। দুইটা গুলি লেগেছিল মাহিনের বাম চোখ ও মাথার পেছনে। সে সময় আমার সন্তান একদম স্তব্ধ ছিল।

জামিল হোসেন বলেন, দিয়াবাড়ি মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে মাহিনকে ভর্তি করা হয়েছিল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এনআইইটি)। মাহিনের স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। কবরের কাছে প্রতিদিন যায়। আমরা কীভাবে এই শোক সহ্য করতে পারি। এখনো স্বাভাবিক হতে পারছি না, কোনো কিছুর বিনিময়ে এই কষ্ট দূর করা যাবে না। মাহিন ছিল আমার একমাত্র সন্তান। মাহিন মারা যাওয়ার পর আমরা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আর বিদেশ যাবো কার জন্য, বাড়ির সামনে একটা মুদি দোকান দিয়েছি। তিনি বলেন, ওর জন্ম হয়েছে ঢাকার উত্তরায়, মৃত্যুও হয়েছে সেখানে। মাহিনদের স্বপ্ন দেশে বাস্তবায়ন হয়নি। যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে  আন্দোলন সেই বৈষম্য রয়ে গেছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি দেশের। যদি কিছুটা পরিবর্তন হতো তবুও মনটাকে মানানো যেতো। আমাদের সন্তানদের জীবনের বিনিময়ে দেশের পরিবর্তন দেখতে চাই। তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া যাবে না।

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status