ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে একমত দলগুলো

স্টাফ রিপোর্টার
১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের জন্য সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে এবং রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারবেন। এই দু’টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু প্রধান বিচারপতি হিসেবে কর্মে নিযুক্ত জ্যেষ্ঠতম একজন, না কর্মে জ্যেষ্ঠ দুইজনের মধ্যে একজন নিয়োগ হবে, সেই বিষয়ে দুটি মত উপস্থিত আছে। এ বিষয়ে কমিশন আলোচনা অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আমরা আরও অনেকটা অগ্রসর হতে পেরেছি। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১১তম দিনের বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।  

ড. আলী রীয়াজ বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে এবং ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বিকল্প দুইটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এই প্রস্তাবের লক্ষ্য ছিল প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে আইনসভার মধ্য থেকেই প্রস্তাব তৈরি করে নিয়োগের ব্যবস্থা করা। এগুলো নিয়ে আজকে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পাওয়া গেছে। এ বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট করতে টেবিলে আছে এবং আজকের আলোচনার ভিত্তিতে আরও একটি সুস্পষ্ট প্রস্তাব হাজির করবো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ভিন্নমত নেই। তবে রাজনৈতিক দলগুলো চাইছেন দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটার প্রতিফলন যেন ঘটে। ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেন কোনো অবস্থাতেই বিতর্কের মুখে না পড়ে। 

জরুরি অবস্থা প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখানে দুটো বিষয়ে একমত হয়েছিল। ১৪১ অনুচ্ছেদের ক- জরুরি অবস্থার ঘোষণার বিষয়টি সংশোধন করতে হবে। রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে যেন জরুরি অবস্থা ব্যবহার না হয়। এটাকে আরও স্পষ্ট করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ও কমিশন মনে করে। আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে এবং আশা রাখছি এ মাসের মধ্যেই একটি সনদ প্রস্তুত করতে পারবো। 

বৈঠক শেষে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনটি বিষয় আলোচনার জন্য ছিল- প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রণালি ও জরুরি অবস্থা সম্পর্কে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অ্যাপিলেড ডিভিশনের জেষ্ঠতম বিচারপতিকে নিয়োগ করতে হবে। অ্যাপিলেড ডিভিশনের মোস্ট সিনিয়র দুইজন বিচারপতির মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ করতে পারেন- এটা তার স্বাধীন ক্ষমতা। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল হয়েছে আপাতত বলা যায়। বিচার বিভাগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে রেখে আরও কয়েকটি যদি আমরা বিকল্প সাজাতে পারি, ঐকমত্যে আসতে পারি, তাহলে সেটা বিবেচনা করা যায়। 

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, তিনটি বিষয়ে আজকে আলোচনার জন্য ছিল- প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, কেয়ারটেকার সরকার ও জরুরি অবস্থা জারি। কেয়ারটেকার সরকারের আগের প্রস্তাব থেকে সরে এসে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন কমিশন। টেবিলে আলোচনার জন্য বিষয়টি আসায় আমরা আলাদা দিনে আলোচনার জন্য বলেছি। হঠাৎ করে মৌলিক এসব বিষয়ে কিছু নিয়ে আসলে প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব বিষয় থাকে। দলীয় আলোচনা ছাড়া এসব মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া যায় না। তবে সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসবে এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। কাঠামোগত বিষয়ে কমিশন মোডিফাই করে আরেকটি প্রস্তাব দেবেন, তখন আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করে থাকেন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আমরা বলেছি। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সব দলের ঐকমত্য আছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গই যেন চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের বাইরে না থাকে। দুইজন জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে বাছাই করবেন। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারে যারা থাকেন তারা কেবল বন্দুক গাড়ে নিয়ে থাকেন না। গত ১৫ বছরে আওয়ামী স্বেচ্ছাচারী শাসনের পেছনে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন,  দুদক এসব সাংবিধানিক জায়গায় দলীয় লোকদের নিয়োগ দিতে গিয়ে- এক ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছিল। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় দিতে হয়েছে। দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে রেখে সাংবিধানিক নিয়োগগুলো দিতে হবে। জ্যেষ্ঠতম দুইজন আপিল বিভাগের যারা সেখানে দায়িত্বরত আছেন- সামগ্রিক বিবেচনা করে একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতি চাইলে যে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে পারতেন। তার জন্য কোনো প্রিন্সিপাল তেমন ছিল না। যার ফলে দলীয় বিবেচনায় প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ঘটনা অতীতে ঘটেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।  

বৈঠকে  কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

অন্যদিকে, বৈঠকে বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), জাসদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি, গণ-অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণফোরামসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status