প্রথম পাতা
ভারত পাকিস্তান বাকযুদ্ধ
মানবজমিন ডেস্ক
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
বাকযুদ্ধ চরমে। ভারতের নেতারা পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানকে দায়ী করে হুঙ্কার দিচ্ছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে। তেমনি হুঙ্কার দিচ্ছেন পাকিস্তানি নেতারাও। তারপর সামরিক উত্তেজনা তো আছেই। পাকিস্তানের ভিতরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি উঠেছে ভারতের বিভিন্ন মহল থেকে। তবে সরকার কোনপথে হঁাঁটবে- তা এখনো নিশ্চিত নয়। ওদিকে সিন্ধু নদের পানিচুক্তি স্থগিত করায় চটেছেন পাকিস্তানি নেতারা। পাকিস্তান পিপল্স পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সিন্ধু নদে হয়তো পানি প্রবাহিত হবে, না হয় তাদের রক্ত প্রবাহিত হবে। সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির পুনর্বার বলেছেন, আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত পাকিস্তান। নিজেদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবদ্ধ। যেকোনো বহির্শক্তির হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম পাকিস্তান। তবে শান্তির পক্ষে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান শান্তির পক্ষে। তাই বলে একে দুর্বলতা ভাবা যাবে না। মঙ্গলবার কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় বিশ্বনেতারা উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। ভারত ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে। কোনো তথ্যপ্রমাণ বা অনুসন্ধান ছাড়া এভাবে দায়ী করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ পেহেলগাম হামলার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছেন। আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের দিয়ে যেকোনো তদন্তে সহযোগিতায় পাকিস্তান প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি। ওদিকে পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনার সমাধান চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু কাশ্মীরে সন্দেহজনকভাবে বেশ কিছু ব্যক্তির বাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। পেহেলগাম পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া অতিরঞ্জিত করছে বলে অভিযোগ করেছেন পাঞ্জাবের তথ্যমন্ত্রী আজমা বুখারী। তিনি বলেন, হামলার পর প্রকৃত কোনো তদন্ত হয়নি। হামলার ১০ মিনিটের মধ্যে একটি এফআইআর করা হয়েছে। তাতে ‘ফরেন মাস্টার’ এবং ‘ক্রস বর্ডার’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। বুখারী বলেন, যুদ্ধ শুধু অস্ত্র আর সেনাবাহিনী দিয়েই হয় না। যুদ্ধ হয় শহীদি উদ্দীপনা এবং বিশ্বাসের অনুপ্রেরণা দিয়ে। আমরা আর যুদ্ধ চাই না। পরিস্থিতিকে কেউ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করুক- তা চাই না। কড়া বক্তব্য দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনির। তিনি বলেছেন, দেশের স্থিতিস্থাপকতা ও শক্তি নিহিত আছে এর ইতিহাস ও আত্মত্যাগের মধ্যে। পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে দেয়া বক্তব্যে তিনি দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের বিষয়ে কথা বলেন। বলেন, এর ভিত্তিতেই মুসলিম ও হিন্দুদের আলাদা করা হয়েছে। এটাই পাকিস্তানের পরিচয় ও অস্তিত্ব। পাকিস্তানের পূর্ব- পুরুষরা দেশ সৃষ্টিতে যে অসীম আত্মত্যাগ করেছেন তাও তুলে ধরেন তিনি। ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য ভারতীয় মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের মতে, ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে আরও ৫টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। পুলওয়ামায় এহসান আহমেদ শেখ, আহসান উল হক এবং হারিস আহমেদের বাড়ি, কুলগামে জাকির আহমেদ গানাইয়ের বাড়ি এবং শোপিয়ানে শাহিদ আহমেদ কুতাই-এর বাড়ি বিস্ফোরক ব্যবহার করে ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। এর আগের দিন পুলওয়ামা এবং জম্মু-কাশ্মীরের ইসলামাবাদে আসিফ শেখ এবং আদিল থোকারের পূর্ব-পূরুষের বাড়িও উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, যেকোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত পাকিস্তান। তিনি আরও বলেন, আমি অবশ্যই বলবো পানি হলো পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ। আমাদের ২৪ কোটি মানুষের জন্য এটা হলো- লাইফলাইন। যেকোনো মূল্যে এবং সার্বিক পরিস্থিতিতে এই পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পাকিস্তান বৈশ্বিক শান্তি এবং ঐক্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পাকিস্তান। পাকিস্তান শান্তির পক্ষে। এর অর্থ এই নয় যে, পাকিস্তান দুর্বল।
পাকিস্তান কখনো তার আত্মমর্যাদার সঙ্গে আপস করবে না। তিনি ২০১৯ সালে পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলা এবং তার জবাবে পাকিস্তানের প্রতিশোধ নেয়ার কথা তুলে ধরেন। বলেন, তার দেশ এরই মধ্যে সামরিক সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। ভবিষ্যতে এমন মিসঅ্যাডভেঞ্চার চালালে একই রকম প্রতিশোধের মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেন শেহবাজ শরীফ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রস্তুত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি সিন্ধু নদের পানিচুক্তির অধীনে পাকিস্তানের পাওনা পানি বন্ধ করলে বা গতিপথ পরিবর্তনের যেকোনো উদ্যোগের বিরুদ্ধে ভারতকে সতর্ক করেন। শেহবাজ শরীফ বলেন, এক্ষেত্রে যেকোনো হস্তক্ষেপ পূর্ণশক্তির সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে। এই ফ্রন্টে পাকিস্তানের দৃঢ়তা সম্পর্কে কারও কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানকে জড়িয়ে ভারতের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্য কোনো তদন্ত বা নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। শেহবাজ শরীফ বলেন, ভারত থেকে এ রকম দোষারোপের ধারা বন্ধ হতে হবে।
ওদিকে অনলাইন এনডিটিভি বলছে, পেহেলগাম হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের অন্যতম আদিল আহমেদ থোকার। তিনি ২০১৮ সালে পাকিস্তান গিয়েছিলেন এবং তিন থেকে চারজন সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে ৬ বছর পর দেশে ফিরেছেন। আদিল আহমেদ থোকার জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বিজবেহারায় অবস্থিত গুরের গ্রামের অধিবাসী। পেহেলগাম হামলায় মূল কারিগরদের অন্যতম হিসেবে তাকে মনে করছে ভারত।
ভারত-পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে আবারো গুলিবিনিময়
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দামামার মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় আগের রাতের মতো গত রাতেও দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। অবশ্য এর জন্য বিনা উস্কানিতে পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালিয়েছে বলে দাবি করেছে অনলাইন এনডিটিভি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ও শুক্রবার দিবাগত রাতের মধ্যে এটি দ্বিতীয় ঘটনা। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পৃথককারী কার্যত সীমানা নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে একাধিক পোস্ট থেকে গুলি চালানোর খবর দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানি গুলিবর্ষণের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গুলি বিনিময়ে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিবৃতিতে বলা হয়-২০২৫ সালের ২৫-২৬শে এপ্রিল রাতে কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একাধিক পোস্ট বিনা উস্কানিতে ছোট আকারে গুলি চালায়। ভারতীয় সেনারা ছোট অস্ত্র দিয়ে যথাযথ জবাব দেয়। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগের রাতেও গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। সামরিক সূত্রের খবর অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ভারতের অভ্যন্তরে আহ্বান জোরালো হয়েছে। এরইমধ্যে পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় সেনাদের সতর্কতা পরীক্ষা করার চেষ্টা করছে। পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের গৃহীত একাধিক পদক্ষেপের পর এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে দাবি ভারতের। মঙ্গলবারের হত্যাকাণ্ডে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত বৈসারন তৃণভূমিতে ছুটি কাটাতে যাওয়া কমপক্ষে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিককে পাঁচ সন্ত্রাসী গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-এ-তৈয়বা (এলইটি)-এর সঙ্গে যুক্ত রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ‘পাকিস্তানের অব্যাহত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ’ উল্লেখ করে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। দিল্লি থেকে এক কড়া বার্তায় পানিমন্ত্রী সিআর পাতিল হুমকি দিয়েছেন- সিন্ধু নদীর ‘এক ফোঁটাও’ পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হবে না।
প্রতিটি সন্ত্রাসীকে শাস্তি দেয়ার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন- ভারতীয় সেনারা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাদের তাড়া করবে। সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত এবং ষড়যন্ত্রকারীদের এমন শাস্তি দেয়া হবে যা তারা কল্পনাও করতে পারে না। ভারত ও পাকিস্তান পাল্টাপাল্টিভাবে তাদের কূটনৈতিক কর্মীদের প্রত্যাহার করেছে এবং একে অপরের নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। দর্শনার্থীদের এখন তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সময়সীমা রয়েছে এবং পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত ভ্রমণ পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম। ভারতের সঙ্গে সকল দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করেছে ইসলামাবাদ। এরমধ্যে সিমলা চুক্তিও রয়েছে। ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
যুদ্ধ নয়, যুদ্ধের ভান ধরতে পারে ভারত: ভারতীয় বিশ্লেষক
শুক্রবার ভারতের করপোরেট টিভি চ্যানেলগুলোতে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছে। বিজেপি’র কণ্ঠের প্রতিধ্বনি স্পন্দিত হচ্ছে তাতে। কিন্তু অনলাইন পোর্টালগুলোতেও শান্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানের অনলাইন ডন এ খবর দিয়ে লিখেছে, শুক্রবার একজন অভিজ্ঞ ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পহেলগাঁও ট্র্যাজেডি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কেন কোনো উত্তপ্ত যুদ্ধ হতে পারে না তার যুক্তিসঙ্গত কারণ তুলে ধরেছেন। তবে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য যুদ্ধ করার ভান করা হবে। নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর বিদ্যমান যুদ্ধবিরতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উভয়পক্ষ থেকে আবারো গোলাগুলি শুরু হতে পারে। এতে সীমান্তবর্তী স্থানীয় কৃষকদের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক শান্তির দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তিসঙ্গত এমন সব কথা যারা বলেছেন তার মধ্যে অন্যতম ভারতীয় সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক প্রবীণ সাহনি। যুদ্ধ হতে পারে না- এ বিষয়টি মূল্যায়নের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রধান হলো চীন। সাওনি বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা বিতর্কিতভাবে পরিবর্তন পাকিস্তানের চেয়ে চীনকে বেশি বিরক্ত করেছে। ২০২০ সালের এপ্রিলে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে গালওয়ান সহিংসতা ছিল এরই একটি অংশ। চীন সীমান্তে অনেক বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে- উল্লেখ করে সাওনি বলেন, ভারতের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে যুদ্ধের ঢাক খুব শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন একজন ভারতীয় নেতা, যিনি যুদ্ধের ভান করায় বিশ্বাস করেন। কারণ এটি তার রাজনীতির সঙ্গে খাপ খায়। ডন আরও লিখেছে, নিউজ পোর্টালগুলো উল্লেখ করেছে, মোদি বৃহস্পতিবার বিহারে একটি নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেননি- যেখানে সরকার প্রথমবারের মতো গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সব সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি সৌরভ গাঙ্গুলীর
পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানের কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সব সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত। তার মতে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদ সংস্থার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সৌরভ গাঙ্গুলী বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে ১০০ শতাংশ সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এটা কোনো রসিকতা নয়।’ তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর এমন ঘটনা ঘটবে। এটা কোনো মজার বিষয় নয়। সন্ত্রাসবাদ সহ্য করা যায় না।’ পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডও কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। আইসিসি ইভেন্টে ভারত ও পাকিস্তানের দল একই গ্রুপে যাতে না থাকে সেজন্য ভারতীয় বোর্ড চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। সৌরভ সেই সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানিয়েছেন। আগামী কয়েক মাসে ভারত ও পাকিস্তান এশিয়া কাপ, মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপ, আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপসহ অনেক বড় টুর্নামেন্টে একে অপরের মুখোমুখি হবে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব ইরানের
পেহেলগাঁওয়ে মঙ্গলবার সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে। এমন সময়ে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। এক্ষেত্রে তারা কবি সাদি সিরাজির লেখা ‘বনি আদম’ কবিতা উদ্ধৃত করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, ইরান এ অঞ্চলের কয়েক শতাব্দীর সভ্যতার বন্ধনের কথা উল্লেখ করে এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীর পারসি ভাষার ওই কবিতা উদ্ধৃত করেছে। তেহরান বলেছে, তারা এ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনে প্রস্তুত। শুক্রবার ভারত ও পাকিস্তানকে ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী আখ্যায়িত করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি। তিনি বলেন, ইরানের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। তারা কয়েক শতাব্দীর পুরনো সংস্কৃতি ও সভ্যতার সম্পর্ক উপভোগ করছে। অন্য প্রতিবেশীদের মতো আমরা তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করি। এই কঠিন সময়ে ইসলামাবাদ এবং নয়াদিল্লিকে তাদের উত্তম বোঝাপড়ার জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণে প্রস্তুত তেহরান। তিনি ‘বনি আদম’ কবিতার যে অংশকে উদ্ধৃত করেছেন তাতে বলা হয়েছে, মানবজাতি পুরোটা একটি সামগ্রিক অংশ। একটির আত্মা যদি বেদনা ভোগ করে, তাহলে অন্যদের অস্বস্তি কাজ করবে। উল্লেখ্য, ‘বনি আদম’ শব্দের অর্থ হলো আদমের সন্তানরা। এই কবিতা ২০০৯ সালে ইরানের জনগণকে নতুন বছরের বার্তা দিতে এর আগে ব্যবহার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওদিকে, ইরানের মধ্যস্থতার প্রস্তাবের পাশাপাশি সৌদি আরবও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে আলাদা ফোনে কথা বলেছেন। পরে জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে বলেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে। তাতে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলা এবং তার আন্তঃসীমান্ত যোগসূত্রের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।