ঢাকা, ৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের মেয়াদের প্রস্তাবে জামায়াতের দ্বিমত

স্টাফ রিপোর্টার
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
mzamin

সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের মেয়াদের প্রস্তাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে  ইসলামী। এ ছাড়া একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয় বিষয়ে একমত, বহুত্ববাদকে পুরো বাদ, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা এবং জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে দলটি। তারা বলছে, পিআর সিস্টেমে নির্বাচন, সংবিধানে আর্টিকেল-৭০ এ তিনটি বিষয় ছাড়া যেকোনো দলের সংসদ সদস্য যেকোনো বিষয়ে মত ও অবস্থানের বিপরীতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

শনিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দিনভর আলোচনা শেষে বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এসব এসব তথ্য জানান। 
তিনি বলেন, প্রস্তাব করেছি সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য। ১০ জনের একটি সমন্বয় কমিটি বৈঠকে অংশ নেন জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনা অসমাপ্ত আছে, আবার বসা হবে। বেশি তাড়াহুড়ো করছি না। উল্লেখযোগ্য সংস্কারের লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছি। কমিশনেরও লক্ষ্য জাতির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে পৌঁছানো। আজ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে নিজেরা প্রস্তাব দিয়েছি, কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। পরবর্তীতে আবার আলোচনা হবে। একমত হয়েছি একই ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। 

সংবিধানের মৌলিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, আর্টিকেল-৭০ এর ক্ষেত্রে কিছু সংশোধন সহকারে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছি। সংবিধান পরিবর্তন, অর্থবিল বা বাজেট অনুমোদনের ক্ষেত্রে এবং আস্থা ভোট এই তিনটি বিষয় ছাড়া যেকোনো বিষয়ে একজন সংসদ সদস্য দলের মত ও অবস্থানের বিপরীতে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিলের (এনসিসি) ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। আরও বিস্তারিত আলোচনা দরকার। এটি গঠনের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে কমিটিতে না রাখতে বলেছি। 
নায়েবে আমীর বলেন, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করার প্রস্তাব দেয়া হয়। আমরা এর সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছি। আমরা বলেছি, সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর থাকবে।
আনুপাতিক হার (পিআর) সিস্টেমে নির্বাচনে মত দেয়ার উল্লেখ করে ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এটা হলে নির্বাচনে যে দুর্নীতি, জবরদখল, ভোটবিহীন নির্বাচন ও টাকার খেলা বন্ধ হবে। বিশ্বের ৬০টির মতো দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছি। 

নায়েবে আমীর বলেন, আজ মূলত সংবিধানের ওপর আলোচনা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে এ বিষয়ে পরে আলোচনা হবে। নারী আসন বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা এখনো হয়নি, কিছু আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বহুত্ববাদকে পুরো বাদ দিতে বলেছি। প্রস্তাব করেছি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য।
এর আগে আলোচনার শুরুতে আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী কোনো রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না, পরোয়া করে না। একটি টেকসই গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্রের জন্য জামায়াত কাজ করছে। দেশের জন্য, জাতির স্বার্থে মোরালবেইজড জবাবদিহিতা চাই।

তিনি বলেন, যেখানে যেখানে নতুন কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন আছে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর, সেখানে আমরা ব্যক্তি, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি বা স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে চাই না, দেবোও না। এর ঊর্ধ্বে থেকে দেশ জাতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য যেটা প্রয়োজন জামায়াতে ইসলামী সেই কাজে সংস্কারে, পরিবর্তনে পরিপূর্ণ একমত পোষণ করে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কতিপয় ব্যাপারে খুবই দৃঢ় ও অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে তাহের বলেন, প্রথমত হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। এজন্য আমরা কোনো রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে ভয় করি না। স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা কারও হস্তক্ষেপ স্বীকার করি না। দ্বিতীয়ত, ক্রেডিবল ও সাসটেইনেবল গণতন্ত্রের জন্য জামায়াতে ইসলামী অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা শুধু রাষ্ট্রের ভেতরে নয়, দলের ভেতরেও আমরা এই গণতান্ত্রিক চর্চা করি। আমাদের দলীয় নির্বাচন সময়মতো হয়। ক্যাম্পেইন ছাড়া, প্রার্থী ছাড়া, প্যানেল ছাড়া অপেন ব্যালটে আমাদের দলীয় নির্বাচন হয়। আমরা বলি এটাই আমাদের বৈশিষ্ট্য যে, নো ক্যাম্পেইন, নো ক্যান্ডিডেট, নো প্যানেল। এ ধরনের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের চর্চা আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি। বাংলাদেশে স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় জামায়াত। আমরা এমন নির্বাচন চাই, যেটিকে দেশের মানুষ, সারা বিশ্ব নির্বাচন বলবে। আজকে আমাদের বড় ক্রাইসিসের কারণ গত তিন টার্ম যে নির্বাচন হয়েছে তা কোনো নির্বাচন ছিল না। 

আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের আরও বলেন, নির্বাচন ছাড়া যাতে ক্ষমতায় থাকা যায় তার জন্য যা যা করার তাই করা হয়েছিল। জবাবদিহিতা ছিল না। তার পরিণতি তারা আমরা সমগ্র জাতি ভোগ করছি। আমরা এটার পুনরাবৃত্তি চাই না।
জামায়াতের সাবেক এই এমপি বলেন, একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চায় জামায়াত। আমরা মনে করি বাংলাদেশের বর্তমান দুরবস্থার পেছনে বড় দায় এই দুর্নীতি। একজন মানুষ যদি দুর্নীতিবাজ না হয়, দুর্নীতি না করে তাহলে তো কোনো নৈরাজ্য হওয়ার সুযোগ নেই। ভোট ছাড়া নির্বাচন করা বড় করাপশন, পরিশ্রম ছাড়া টাকা আয় বড় করাপশন, দুর্নীতির নামে উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা ভোগ করা বড় করাপশন। যে তথ্য এসেছে যে, ২৩০/২৩৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অর্থ একজন বা দু’জন ব্যক্তিই পাচার করে নিয়ে গেছে। তাহলে অন্যরা কি করেছে? এই অর্থ যদি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান ও উন্নয়ন, যাতায়াতের জন্য বরাদ্দ বা খরচা করা হতো তাহলে বাংলাদেশ এই পর্যায়ে থাকতো না। আমরা খুব করে চাই, সিরিয়াস ডিমান্ড-আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহির বাংলাদেশ।
জামায়াতের নায়েবে আমীর বলেন, আমরা উন্নত শিক্ষা চাই যেখানে থাকবে নৈতিকতার শিক্ষা। দেশের জন্য, জাতির স্বার্থে মোরালবেইজড জবাবদিহিতা চাই। জবাবদিহিতা, নৈতিকতার সমস্যা বড় সমস্যা। আমরা নৈতিকতাসম্পন্ন উন্নত শিক্ষার আলোকিত সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে চায়। সে আলোকে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ ও কাজ করছি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা কেবল সরকারের একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং তা জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। রাজনৈতিক দল, ছাত্র সমাজ, সাধারণ মানুষ সবার পক্ষ থেকেই এ প্রক্রিয়ার তাগিদ এসেছে। আপনারা আন্তরিকভাবে তাতে অংশ নিয়েছেন, এজন্য আবারো ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবদান নিঃসন্দেহে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা আশা করি, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথচলায় আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় জামায়াতের নেতাকর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন। কেউ কেউ প্রাণও দিয়েছেন, অনেকে কারাগারে থেকেও আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি জাতীয় সনদে পৌঁছানো। কিন্তু এই মুহূর্তটিকে ঐতিহাসিক জ্ঞান করে আমরা যেন সুযোগ হাতছাড়া না করি। যেন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায় যেখানে কেউ যেন নিপীড়নের শিকার না হয়, বিচারবহির্ভূত ব্যবস্থা না থাকে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন- দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে ছিলেন মহিউদ্দিন সরকার।

পাঠকের মতামত

এই সব সংস্কারগুলি আইন গতভাবে করতে পারে একমাত্র জাতীয় সংসদ। এই সব নেতাদের মতামতের কোন আইনগত ভিত্তি নেই। শুধুই "বেহুদা পেচাল" মাত্র।

Muhammad Hussain
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: news@emanabzamin.com
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status