প্রথম পাতা
এনসিপি’র সাধারণ সভা
গঠনতন্ত্র, নির্বাহী কাউন্সিল ও পলিটিক্যাল কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
রাজনীতিতে চমক দেখিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও ইমেজ সংকটে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি। নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দলের নেতাদের মূল্যায়ন, নানা কারণে আস্থা হারাচ্ছে জনমানুষের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় কাঠামো সুসংগঠিত করে তৃণমূলে সংগঠন বিস্তারে জোর দিচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কাউন্সিল গঠন করা হবে। এছাড়া সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি ‘পলিটিক্যাল কাউন্সিল’ গঠন করবে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন দলটি। সংগঠন বিস্তারে সারা দেশকে ১৮টি জোনে ভাগ করে শিগগিরই দায়িত্ব দেয়া হবে কেন্দ্রীয় নেতাদের। এদিকে দল গঠনের দুই মাস পর গঠনতন্ত্র প্রণয়ন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কাজ করতে যাচ্ছে এনসিপি। গঠন করা হবে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি। যাদের দায়িত্ব থাকবে দ্রুত সময়ে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা।
শনিবার এনসিপি’র চতুর্থ সাধারণ সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয় দলটির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় বাংলা মোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে।
সভার একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাহী কাউন্সিল গঠন নিয়ে গত সভায়ও আলোচনা হয়েছিল। তবে শনিবার অনুষ্ঠিত সভা সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়েই ডাকা হয়। সেখানে নির্বাহী কমিটিতে কারা থাকবে ও কীভাবে থাকবে সেসব নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের ২১৭ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচটি ক্যাটাগরি থেকে নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। সেগুলো হলো- আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, সংগঠক, সমন্বয়ক ও সদস্য। এসব ক্যাটাগরিতে থাকা যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্য সচিব, সংগঠক, যুগ্ম সমন্বয়ক ও সাধারণ সদস্যরা নির্বাহী কমিটিতে স্থান পাবেন। শুরুতে নির্বাহী কমিটি শীর্ষ নেতাদের প্রস্তাবনার আলোকে সাধারণ সভায় থেকে পাস করানো হবে। কিন্তু সাধারণ সভার সদস্যদের চাওয়ায় সেটি হচ্ছে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাহী কাউন্সিল গঠন করা হবে।
এদিকে সভায় নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়েও আলোচনা হয়। গত সভার মতো এ সভায়ও আত্মসমলোচনা ছিল সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে। নেতাদের যাদের বিষয়ে নেতিবাচক আলোচনা আছে তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্কতামূলক বক্তব্য আসে অন্য নেতাদের কাছ থেকে।
তারা বলেন, এনসিপি ইতিমধ্যে জনমানুষের কাছে আস্থা হারাচ্ছে। তাই এটি পুনরুদ্ধারে কাজ করা না গেলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার এনসিপি’র। অনেকে দাবি করেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বন্ধে আরও কঠোর হতে হবে দলকে।
অন্যদিকে সংস্কারের দলটির যেসব প্রস্তাব মেনে নেয়া হবে না সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দলটি মৌলিক বিষয়ে কী ধরনের অবস্থান নেবে তা আলোচনা পায় সাধারণ সভায়। সভায় কয়েকজন বলেন, মৌলিক বিষয়ে ছাড় দিলে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে। তাই এনসিপিকে এসব বিষয়ে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। আর নির্বাচন সরকারের দেয়া রোডম্যাপ অনুযায়ী করার বিষয়েও প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। যেসব নেতা নির্বাচন করবেন তাদের এলাকা কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে জোর দিতে বলা হয়েছে।
সভা শেষে এনসিপির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি ‘পলিটিক্যাল কাউন্সিল’ গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যা সংগঠনের সকল নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। ‘পলিটিক্যাল কাউন্সিল’ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সভায় একটি ‘নির্বাহী কাউন্সিল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিন মাস পর এই কমিটি অবস্থা বিচারে নবায়ন, পূণর্মূল্যায়ন বা নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্ত করা হবে। একইসঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে পাঁচ বা ততোধিক সদস্যের সমন্বয়ে একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন টিম গঠনের সিদ্ধান্ত সাধারণ সভায় গৃহীত হয়। উক্ত টিমকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দলের খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়নের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়াও, সভায় আওয়ামী লীগের দলগতভাবে বিচার, নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে সারা দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আগামী ২রা মে, এনসিপি ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে একই দাবিতে ঢাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।