অনলাইন
বিএসএম’র আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশি-বিদেশি দুই হাজারের বেশি মেডিসিন বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণ
স্টাফ রিপোর্টার
(৭ ঘন্টা আগে) ২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫:৩৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:৪৩ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের ২৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক অধিবেশন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে আগামী রোববার ২৭শে এপ্রিল পর্যন্ত। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাকে কীভাবে আরও আধুনিকীরণ করা যায় সেই উদ্দেশ্যে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ‘সবার জন্য উন্নত চিকিৎসা’ স্লোগানে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী এ আয়োজনে অন্তত ১০টি সেশনে শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হচ্ছে। সম্মেলনে দেশের দুই হাজারেরও বেশি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নিচ্ছেন।
এবারের সম্মেলনে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নিয়েছেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে বিশ্বমানের চিকিৎসা পদ্ধতির সংযোগ স্থাপনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মনির-উজ-জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সরোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হোসেন এবং গেস্ট অব অনার অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকীসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সম্মেলনে অধ্যাপক মনির-উজ-জামান বলেন, ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শহীদ ও আহতদের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা সেই সময়ও চিকিৎসা ফ্রন্টে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। আজকের বাংলাদেশ গড়ার পেছনে তাদের নিরব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেডিসিন হলো চিকিৎসা ব্যবস্থার মূলধারা, যা সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্প খরচে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করে। বর্তমানে দেশে ১১৪টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ৩৭টি সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও, মেডিসিন বিভাগের জনবল এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তিনি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে নতুন পদ সৃষ্টি ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের জোর দাবি জানান।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক মনির-উজ-জামান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের প্রতিটি স্তরে-ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। এরই ফলশ্রুতিতে কোভিড-১৯, ডেঙ্গু, ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করেছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পাশাপাশি বাংলাদেশ সোসাইটি অব একিউট মেডিসিন গঠনের কথাও তিনি উল্লেখ করেন
সম্মেলনের আয়োজকরা জানান, দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিসিন চিকিৎসকদের অবদান এবং ভবিষ্যতে তাদের ভূমিকা আরও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যেই এ আয়োজন।
তারা আশা প্রকাশ করেন, এই সম্মেলন নতুন গবেষণা, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাচর্চার মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যখাতে টেকসই উন্নয়নের পথকে আরও প্রশস্ত করবে।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ জাকারীয়া আল আজিজ বলেন, স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। সংবিধান স্বীকৃত মানুষের এ মৌলিক অধিকার রক্ষার সেবায় সর্বদা নিয়োজিত চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ বিশেষ পেশায় নিয়োজিত থাকতে পেরে আমরা সবাই গর্বিত। চিকিৎসা বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল কারণ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগ ও স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, সেই সঙ্গে আবিষ্কার হচ্ছে রোগ নির্ণয়ের নতুন যন্ত্রপাতি, নতুন ওষুধ। চিকিৎসা শিক্ষাও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই এ পেশা সর্বদাই চ্যালেঞ্জের। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও স্বাস্থ্য সেবাকে প্রান্তিক জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করন, চিকিৎসকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার তাগিদে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর হতে এর পরিধি, কলেবর ও কার্যক্রম সরকারি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিতি লাভ করেছে।