অনলাইন
ইসরাইলের সাহায্য বন্ধের ফলে গাজার সমস্ত মজুদ খাদ্য শেষ হয়ে আসছে: জাতিসংঘ
মানবজমিন ডিজিটাল
(৯ ঘন্টা আগে) ২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৪:৪৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন
ইসরাইল সাত সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজায় সমস্ত সাহায্য পাঠানোর পথ বন্ধ করে দিয়েছে। যার জেরে ধাক্কা খেয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। গাজার সমস্ত মজুদ খাদ্য শেষ হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। ১৮ মাসের যুদ্ধের পর, গাজার পরিস্থিতি "সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ" বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয়। এর ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান ইসরাইলের সাহায্য বন্ধের এই পদক্ষেপকে "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অনাহার সৃষ্টির কৌশল বলে অভিহিত করেছেন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে খাদ্য সহায়তার অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী ডব্লিউএফপি (World Food Programme) জানিয়েছে যে তারা শুক্রবার গাজা উপত্যকায় তাদের অবশিষ্ট যে খাদ্য মজুদ ছিল তা পৌঁছে দিয়েছে ।
আগামী দিনগুলোতে খাবার সম্পূর্ণরূপে ফুরিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা UNRWA-এর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি বলেছেন যে এই সংকট "মানবসৃষ্ট"। তিনি এক্সে লিখেছেন- 'ইসরাইল সরকার গাজায় খাদ্য এবং অন্যান্য মৌলিক জিনিসপত্রের প্রবেশ বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রায় দুই মাস ধরে অবরোধ চলছে। সরবরাহ আনার আহ্বানে সাড়া দেওয়া হচ্ছে না।' বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে চিকিৎসা সরবরাহের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একইরকম ।হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অচলাবস্থার সময় সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার পর, ইসরাইল ১৮ মার্চ গাজায় আবার বোমাবর্ষণ শুরু করে। এরপর স্থল আক্রমণ শুরু করে। গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা উদ্ধার সংস্থার একজন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-মুগাইর বলেছেন, শুক্রবার ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ জনে পৌঁছেছে। সেদিন সন্ধ্যায়, ইসরাইলি সেনাবাহিনী আরেকটি পরিকল্পিত হামলার আগে জেইতুন এবং উত্তরাঞ্চলের কাছাকাছি দুটি এলাকার ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলে।
দাবি করে যে ''তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়ায় শক্তি প্রয়োগ করছে"। গাজার বাসিন্দারা বলছেন যে তারা কেবল বোমাবর্ষণ নয়, খাদ্যের অভাবের কারণেও মৃত্যুর সম্মুখীন। WFP ছাড়াও, বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা এবং পশ্চিমা সরকারগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গাজা সিটির বাসিন্দা তাসনিম আবু মাতার বলছেন - ' আমরা আক্ষরিক অর্থেই ক্ষুধায় মারা যাচ্ছি। WFP জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে, গাজার মানুষের জন্য গরম খাবারের রান্নাঘরই ( hot meal kitchen) খাদ্য সহায়তার একমাত্র ধারাবাহিক উৎস। দৈনিক খাদ্য চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ জনসংখ্যার কাছে পৌঁছানো সত্ত্বেও, এটি মানুষের কাছে লাইফলাইনের মতো। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে ১,১৬,০০০ মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা - যা চার মাস পর্যন্ত ১০ লক্ষ মানুষকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট। এটি আপাতত ত্রাণ করিডোরে মজুত রাখা হয়েছে যা সীমান্ত পুনরায় খোলার সাথে সাথে গাজায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। ডব্লিউএফপির সতর্কবার্তার পর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসুস বলেন যে গাজায় চিকিৎসা সরবরাহও ব্যাহত হচ্ছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৬টি ট্রাক প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। এই অবরোধ অবশ্যই তুলতে হবে। মানুষের জীবন এর উপর নির্ভর করছে।
WFP আরও জানিয়েছে যে, গাজায় তাদের সমর্থিত ২৫টি বেকারি ৩১ মার্চ তারা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল কারণ গাজা উপত্যকার দীর্ঘতম অবরোধের সময় গমের আটা এবং রান্নার তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে তার দেশ সাহায্য বন্ধ করেছে হামাসকে চাপে রাখতে। এর আগে, জার্মানি, ফ্রান্স এবং বৃটেন "অসহনীয়" অবরোধের অবসানের আহ্বান জানিয়েছে এবং ক্ষুধা, মহামারী এবং মৃত্যুর তীব্র ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে মানুষকে অনাহারে রাখার অপরাধে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। নেতানিয়াহু অভিযোগগুলোকে "অযৌক্তিক এবং মিথ্যা" বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় কমপক্ষে ২,০৬২ জন নিহত হয়েছে।অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে যুদ্ধে মোট মৃতের সংখ্যা ৫১,৪৩৯ জনে পৌঁছেছে। যার বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট