খেলা
হৃদয়ের শাস্তি কমাতে আইন পরিবর্তন
সিসিডিএম-টেকনিক্যাল কমিটির পাল্টাপাল্টি বক্তব্য!
সৌরভ কুমার দাস
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
‘আগে ছিল আবাহনী এখন হইছে মোহামেডান! শুধু ক্লাবই বদলেছে, পেশিশক্তির চর্চা চলছেই’ আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন ঢাকার একজন ক্লাব সংগঠক। বাস্তবে অবশ্য এই লাইনেই ফুটে উঠেছে ঢাকার ক্রিকেট সংস্কৃতি! সম্প্রতি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে (ডিপিএল) আম্পায়ারদের সঙ্গে অসদাচরণ ও তাদের নিয়ে কটূক্তি করায় ২ ম্যাচ নিষিদ্ধ হন মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেডের অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন তিনি। তাহলে কি শাস্তি কমেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল শাস্তি কমার প্রয়োজন হয়নি। কারণ হৃদয়কে খেলাতে আইনই বদলে ফেলা হয়েছে!
লীগ পর্বের শেষ রাউন্ডে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচের সময় বেশ কয়েক দফায় দুই আম্পায়ার তানভীর আহমেদ ও শরফৌদ্দুলা ইবনে বিন শহীদ সৈকতের সঙ্গে তর্কে জড়ান মোহামেডান অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়। এমনকি ম্যাচের পর সৈকতকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে করেন আপত্তিকর মন্তব্য। মাঠে অসদারচণের জন্য প্রথমে এক ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তাকে। এরপরের দিন সংবাদমাধ্যমে করা মন্তব্য আমলে নেয়ার পর টেকনিক্যাল কমিটির টেবিলে তাওহীদের ভাগ্যে যোগ হয় বাড়তি ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট। এতে নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে ২ ম্যাচ আর ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় মোহামেডান অধিনায়ককে।
এই শাস্তি অনুযায়ী সুপার লীগে প্রথম দুই ম্যাচে বাইরে থাকতে হতো হৃদয়কে। প্রথম ম্যাচের আগে শোনা যাচ্ছিল মোহামেডান ও হৃদয় শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করবেন। কিন্তু ওই ম্যাচের আগের দিন ডিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির একটি সূত্র দৈনিক মানবজমিনকে জানায়, কোনো অফিশিয়াল আপিল তারা পাননি। হৃদয় শুধু একটা চিঠি দিয়েছে শাস্তি কমানো যায় কিনা দেখতে। আর মোহামেডানের ম্যানেজার শিপন আহমেদ জানান, শাস্তি কমছে না।
কিন্তু গত রোববার দেখা যায় অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে ঠিকই মাঠে নেমেছেন মোহামেডানের হৃদয়। এমনকি দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। এরপরই এ নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়। সিসিডিএম বা টেকনিক্যাল কমিটি কেউ জানে না শাস্তি কে কমালো বা হৃদয়কে খেলানোর অনুমতি কে দিলো! দুই পক্ষই এ নিয়ে রীতিমতো লুকোচুরি শুরু করে। একপর্যায়ে জানা যায় টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান এনামুল হক মনি পদত্যাগ করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন, ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট।’
কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটির একটি সূত্র মানবজমিনকে জানায়, ‘এসব ক্ষেত্রে কি কেউ সরাসরি বলতে পারে? তাকে তো একটা কারণ দেখাতেই হতো। কিন্তু একটা টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান হুট করে কেন পদত্যাগ করে সেটা তো বুঝতেছেনই। আমি এ বিষয়ে কিছু বলবো না কিন্তু তিনি অসন্তোষ নিয়ে ছেড়েছেন।’ এদিকে হৃদয়ের শাস্তি কমানো নিয়ে সিসিডিএম সদস্য সচিব সাজ্জাদ হোসেন তো দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেয়াকেই ভুল ছিল বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘৪ থেকে ৭ ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে তো ১ ম্যাচই নিষিদ্ধ হবে।’ তবে কি আগের শাস্তি দেয়াই ভুল ছিল প্রশ্নে সাজ্জাদ বলেন, ‘হ্যাঁ, না মানে ভুল না আর কি। এক ম্যাচও নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, সর্বোচ্চ ২ ম্যাচ আর কি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিসিডিএম তো টুর্নামেন্টের আয়োজক। শাস্তি দেয়া বা কমানো তো টেকনিক্যাল কমিটির ব্যাপার।’ সাজ্জাদের দাবি অনুযায়ী টেকনিক্যাল কমিটির অনুমোদন পেয়েই হৃদয়কে খেলার অনুমতি দিয়েছে সিসিডিএম। টেকনিক্যাল কমিটি আবার বলছে উল্টো কথা। এই কমিটির সূত্রকে যখন সাজ্জাদের মন্তব্য জানানো হয়, তখন তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘ওই কর্মকর্তা কি মূর্খ, সে কিছু জানে না? সবই তো বাইলজেই লেখা আছে! তাহলে তিনি আন্দাজে কেন বলবেন যে টেকনিক্যাল কমিটি করেছে। গতকাল থেকে এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কয়েকটি পত্রিকায় এ নিয়ে রিপোর্টও দেখলাম, কিন্তু বিষয়টি তো একদমই ভিন্ন।’ তাহলে বিষয়টা কি? এমন প্রশ্ন করতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও একবার মনে করিয়ে দেন ওই কর্মকর্তা। সেটার নিশ্চয়তা দিলে তিনি বলেন, ‘হৃদয়ের শাস্তি তো কমানোর প্রয়োজন হয়নি। তার শাস্তি যা ছিল তাই আছে। কিন্তু তাকে তো খেলাতে হবে, সেটা পেশিশক্তি ব্যবহার করে হলেও! গেল ১৫ বছর যেটা আবাহনী করেছে এবার সেটা শুরু করেছে মোহামেডান। যেহেতু টেকনিক্যাল কমিটির টেবিল বদলে গেছে, সেহেতু নিয়মও বদলে গেছে। এখন ৪ থেকে ৭ ডিমেরিট পয়েন্ট পেলেও এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা! ফলে শাস্তি কমেনি বদলেছে নিয়ম।’ নিয়ম কারা বদলালো প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টের আয়োজক সিসিডিএম আর তারা আবার বিসিবি’র অধীনে। তাইলে বিসিবি যদি চায় সবই করতে পারে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জায়গা থেকে বলা ঠিক হবে না। দেখেন, এখন বলতে পারে হৃদয়কে খেলানোর অনুমোদনের চিঠিতে আমার স্বাক্ষর আছে। কিন্তু দেখতে হবে স্বাক্ষরের নিচে আমার ডেজিগনেশন কি লেখা! ওটা দেখলেই পরিষ্কার হবে আমি টেকনিক্যাল কমিটির কেউ হিসেবে স্বাক্ষর করিনি।’