অনলাইন
৯ বছরে ৩১ দিন নির্মল বাতাস নিয়েছে ঢাকাবাসী
স্টাফ রিপোর্টার
(৬ ঘন্টা আগে) ২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬:৩৪ অপরাহ্ন

রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা গত নয় বছরে ৩ হাজার ১১৪ দিনের মধ্যে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বা ভালো বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। এই হিসাবে বছরের মাত্র এক শতাংশ সময় ঢাকাবাসী বিশুদ্ধ বাতাস পাচ্ছে। অন্যদিকে বছরের অর্ধেকের বেশি সময় অস্বাস্থ্যকর, চরম অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ বাতাস ফুসফুসে টেনে নিচ্ছে ঢাকাবাসী। মঙ্গলবার বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়। বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। বাপার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বাপার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাপা’র সহ-সভাপতি ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর এমেরিটাস অধ্যাপক, ড. এম. ফিরোজ আহমেদ, বাপা’র সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহীদুল ইসলাম, বাপা সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক, হুমায়ুন কবির সুমন প্রমূখ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বায়ুদূষণ ও শব্দ দূষণের মাত্রা এতো বেশী মাত্রায় দাঁড়িয়েছে যে ঢাকা শহরে এখন বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিন দিন এই দূষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই এই দূষণ বন্ধ করতে না পারলে ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে। বায়ু দূষণের শিকার সবচেয়ে বেশী শিশু ও বৃদ্ধ। এর ফলে বৃদ্ধ ও শিশুদের শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজম্মের শিশুদের কথা চিন্তা করে দূষণ বন্ধ করি।
অধ্যাপক, ড. এম. ফিরোজ আহমেদ বলেন, মানুষ প্রতিদিন ৩০ কিউবিকি মিটার বায়ু সেবন করে থাকে। এই বায়ুটুকু যদি দূষিত হয় তবে মানব দেহ মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আগে দুষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ট্রান্সবাউন্ডোরী মুভমেন্ট।
অধ্যাপক ড. এম. শহীদুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ফলে দেশে দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সরকার উন্নয়নের নামে একের পর এক পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সুন্দরবনসহ সমগ্র দেশের পরিবেশ ধ্বংস করেছে। আমরা চাই বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের উন্নয়নে পরিবেশকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিবে।
আলমগীর কবির বলেন, বাপা দেশের প্রাণ-প্রকৃতির সু-রক্ষায় দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে পরিবেশ উপদেষ্টা একজন পরিবেশ কর্মী তাই আমরা আশা করি তিনি থাকা অবস্থায় দেশের প্রাণ-প্রকৃতির সু-রক্ষা নিশ্চিত হবে। পরিবেশ দূষণ বন্ধে দেশের ফিটনেস বিহীন গাড়ী এবং ইটভাটাগুলোকে প্রয়োজনে ভর্তুকী দিয়ে হলেও নতুন গাড়ীক্রয় ও পরিবেশ সম্মত উন্নত প্রযুক্তির ইটের ব্যবস্থা করা জরুরী।
সংবাদ সম্মেলনের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ভূমিকা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। প্রবন্ধে তিনি ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত ২০১৬ হতে ২০২৪ সালের বায়ুমানসূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রাজধানীর বায়ুদূষণের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষনের মাধ্যমে পাওয়া যায় যে, ঢাকায় গত ৯ বছরের ৩১১৪ দিন এর মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন (১%) নির্মল বা ভালো বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। তবে এক্ষত্রে ৬২৪ দিন (২০%) মাঝারি বায়ু, ৮৭৮ দিন (২৮%) সংবেদনশীল বায়ু, ৮৫৩ দিন (২৭%) অস্বাস্থ্যকর, ৬৩৫ দিন (২১%) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৯৩ দিন (৩%) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহন করেন। ২০২৪ সালের সবচেয়ে ভাল ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিনসংখ্যা হল যথাক্রমে ২ ও ৩৫ দিন। বিশ্ব ব্যাংকের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে কমপক্ষে ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এর গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বায়ু ও সীসা দূষণ সহ বিভিন্ন দূষণ, যা শিশুদের আইকিউ হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে যেসব সুপারিশসমূহ তুলে ধরা হয় সেগুলো হলো- দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পরিবেশ সংস্কার কমিশন গঠন করা। বায়ুদূষনকারী মেয়াদউত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি। বায়ু দূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজ সহ সকল স্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামানো। ওঊচগচ সহ বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা এবং নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ। সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া। গৃহঅভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে গ্রামীণ পর্যায়ে জীবাশ্ম জ্বলানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি নিশ্চিত করা।