ঢাকা, ১০ মে ২০২৫, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

বেরোবিতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ, অভিযুক্তদের কুশপুত্তলিকা দাহ

গাজী আজম হোসেন, বেরোবি থেকে
২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। 
জানা  গেছে, গত ১৩ই এপ্রিল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবন ও ওই বিভাগের এক ছাত্রীর কণ্ঠ সদৃশ কথোপকথনের ৩টি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। 
অন্যদিকে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। গত শনিবার (১৯শে এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে শিক্ষক রশীদুল ইসলাম এবং ওই ছাত্রীর ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের স্ক্রিনশটগুলো প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। এর আগে গত ১৭ই এপ্রিল একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র সিংহ এবং অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ তুলে  উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলীর কাছে অভিযোগপত্র জমা দেন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের (১২ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা। 
অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রতীকী জুতার মালা পরিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যৌন নিপীড়ক শিক্ষকদের প্রতীকী জুতার মালা পরিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে।  সোমবার (২১শে এপ্রিল)  দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণচূড়া সড়কে একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রতীকী জুতার মালা পরিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। 
এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রহমান আলী বলেন, যৌন নিপীড়নের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নিপীড়নের আলাদা সেল থাকা উচিত। আমরা কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় যৌন হয়রানির অনেক বিষয় দেখেছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। 
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন,  আমাদের সকলের দাবি একটাই এ সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে যেন এমন শাস্তি দেয়া হয় যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এমন ন্যক্কারজনক কাজ করতে না পারেন।  
প্রশাসন যা বলছেÑ 
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান বলেন, যে একটি যৌন হয়রানি অভিযোগ পেয়েছি। সেটি তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  তিন কার্যদিবসে কমিটি প্রতিবাদ জমা দেবেন।  
তিনি আরও বলেন, আরও কিছু অভিযোগ ফেসবুকে ঘুরছে। কারও কি সৎ সাহস নাই। যা শিক্ষার্থীকে হয়রানি করা হয়েছে সে ঠিকই মজা পেয়েছে, মার্কসও নিয়েছে। 
এই বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, যৌন নিপীড়নের সেল গঠন করা হয়েছে। সেখানে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারবেন। আর পরিসংখ্যান বিভাগের যে অভিযোগপত্র এসেছে সেটির জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। 
কে এই তানজিউল ইসলাম জীবন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষক আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। বিগত আওয়ামীপন্থি ভিসি ড. হাসিবুর রশীদের আমলে ছিলেন গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক। এছাড়াও তার বিভাগে শেখ হাসিনার জন্মদিনে বিভাগের  শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে কেক কেটে আলোচনায় এসেছিলেন। এমনকি নিজের পদোন্নতি নেয়ার জন্য শেখ হাসিনার অর্থনীতির গুণগান করে লিখেছেন আর্টিকেল।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর নীল দলে সক্রিয় এ শিক্ষক ভোল পাল্টে নিজেকে জিয়া পরিষদের সভাপতি পরিচয় দিয়ে বর্তমান প্রশাসনের কাছাকাছি চলে যান। পট পরিবর্তনের পর পেয়েছেন বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব, এছাড়া নিয়ম ভেঙে বাগিয়ে নিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ যদিও বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পরই তানজিউল ইসলামকে ক্যাফেটেরিয়ারও পরিচালক করেছিলেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদে গিয়েই জড়িয়েছেন একের পর এক বিতর্কে। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কৃত রংপুর মহানগরীর জিয়া সাইবার ফোর্সের সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রদল নেতা ও ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন রাফির শাস্তি মওকুফের চেষ্টা করেন জীবন, পরে ঘটনা জানাজানি হলে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করলে এখনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। 
আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র সিংহ ও অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলাম 
বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের ভোট চাওয়া সহ আওয়ামী লীগের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানান পোস্ট দেখা এই দুই শিক্ষকের। এছাড়া হল প্রভোস্ট থাকাকালে রশীদুল ইসলাম বিরিয়ানি কাণ্ডে সমালোচিত।
যাকে যৌন হয়রানি করেছে সেও মজা নিছে, পরীক্ষায় মার্কসও নিছে: বেরোবি প্রক্টর
যাকে যৌন হয়রানি করেছে সেও মজা নিছে, পরীক্ষায় মার্কসও নিছে বলে মন্তব্য করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান।   সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সোমবার (২১শে এপ্রিল) যৌন নিপীড়ক শিক্ষকদের প্রতীকী জুতার মালা পরিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তখন তিনি এ মন্তব্য করেন। তার এ মন্তব্য ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তবে নারী শিক্ষার্থীরা মনে করেন প্রক্টরের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে ভিকটিমকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য নারীর প্রতি অবমাননার শামিল।
তিনি আরও বলেন, যৌন সংক্রান্ত যে ব্যাপারগুলো এগুলো ফেসবুকে লেখালেখি হচ্ছে, এখন পর্যন্ত দুইটা লাইনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দেয় সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে, এখানে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো অভিযোগ পায়নি, কারও বিরুদ্ধেই না। 
এ সময় প্রক্টর বলেন, ‘ফেসবুক ফাঠায় ফালাচ্ছে, খবরে নিউজ হচ্ছে কিন্তু কারও কোনো সৎ সাহস নাই যে, আমাকে যৌন হয়রানি করছে? কেউ দুই লাইন লিখে দিতে পারে না? তারপরই তিনি এ বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন। বলেন সেও মজা নিছে, সেও মার্কস নিছে।
তার এ বক্তব্য বিভিন্ন গ্রুপে প্রচারিত হওয়ার পর অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, ইমন সরকার নামের একজন লিখেছেন, আগেই বলেছিলাম এই প্রক্টর কোনো কাজের না। মোকসুদুূল মমিন নামের আরেকজন লিখেন- আপনারা গোপন রাখতে পারেন না, জুলাই হত্যাকাণ্ডে অভিযোগকারীদের নাম ফ্ল্যাশ হয়ে গেছিল।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status