বাংলারজমিন
নিরাপদ কৃষির পথে দেবীগঞ্জ, এঅচ পদ্ধতিতে করলা চাষ শুরু
দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবারপঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে প্রথমবারের মতো রপ্তানিমুখী নিরাপদ সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে “এড়ড়ফ অমৎরপঁষঃঁৎধষ চৎধপঃরপব” (এঅচ) পদ্ধতিতে করলা চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের মাঝাপাড়া এলাকার কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান ‘পার্টনার’ প্রকল্পের আওতায় এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে এক একর জমিতে এই আধুনিক চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। মূল লক্ষ্য- স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে মানসম্মত করলা রপ্তানি করা।
‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের আধুনিক, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এঅচ পদ্ধতির মূলমন্ত্র হলো- নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এই চাষাবাদে মাটি ও পানি পরীক্ষা, সঠিক মাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, জৈব পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন, জমির পরিচ্ছন্নতা এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়।
সরজমিন দেখা যায়, করলার ক্ষেতটি নেট দিয়ে ঘেরা, যাতে পশু বা পাখির আক্রমণ ঠেকানো যায়। নেটের গায়ে সচেতনতামূলক পোস্টার টানানো হয়েছে। ক্ষেতের ভেতরে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়েছে হলুদ আঠালো ফাঁদ। শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন- মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, মাথায় ক্যাপ।
কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “এঅচ পদ্ধতি আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আগে মাটি-পানির পরীক্ষা ছাড়া রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে চাষ করতাম। এবার সবকিছু নিয়ম মেনে করছি। ফলনও অনেক ভালো হচ্ছে, খরচ তুলনামূলক কম। আশা করছি রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নাঈম মোর্শেদ বলেন, “দেশে প্রতিবছর ফল ও সবজির উৎপাদন বাড়ছে, কিন্তু রপ্তানিতে পিছিয়ে আছি। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে সবজি রপ্তানির জন্য নিরাপদ ও মানসম্মত উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এঅচ পদ্ধতিই সে পথ খুলে দিতে পারে। দেবীগঞ্জে প্রথমবারের মতো করলার ক্ষেত্রে এ উদ্যোগ সফল হলে অন্যান্য কৃষকও উদ্বুদ্ধ হবেন।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, এঅচ পদ্ধতি শুধু ফলন বাড়ায় না, কৃষক ও ভোক্তা- উভয়ের জন্যই স্বাস্থ্যকর ও লাভজনক। এটি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ শুধু দেবীগঞ্জ নয়, গোটা উত্তরবঙ্গের কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এঅচ পদ্ধতিকে ঘিরে বাংলাদেশ এখন নিরাপদ কৃষিপণ্যের বিশ্ববাজারে প্রবেশের পথে।