ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

বরিশালে বিএনপিতে কোন্দল, সুবিধা নিচ্ছে ইসলামী দলগুলো

জিয়া শাহীন, বরিশাল থেকে
১১ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার

বিএনপিতে দলীয় কোন্দল আর গ্রুপিং এখন প্রকাশ্যে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি’র দুর্গ হিসেবে পরিচিত বরিশাল সদর আসনে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে চায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসন তন্ত্র আন্দোলন। নির্বাচনে জয়ের আশা দু’টি দলেরই। আশির দশক থেকে বরিশাল সদর আসন বিএনপি’র ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। চরম দুঃসময়েও এখান থেকে বিজয়ের মার্গ থেকে বিমুখ হতে হয়নি দলটিকে। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সাল থেকে টানা ২০০৮ সাল পর্যন্ত সদর আসনে বিজয়ই হয়। এছাড়া ২০০৩ ও ২০১২ সালে সিটি নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে বরিশালকে বিএনপি’র ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। আর ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে দলটি সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে, সে আন্দোলনেও বরিশাল বিএনপি’র ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। 
সরকার পতনের দীর্ঘ আন্দোলনসহ গত ১৫ বছরে বিএনপি’র ওপর চরম দমন-নিপীড়ন চালালেও তাদের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বরিশাল বিএনপি’র নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় দলটির সাংগঠনিক কাঠামোতে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটে বরিশালে। সবশেষ আদালত পাড়ায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি এখন টক অব দ্য সিটি। এমন অবস্থায় নগর বিএনপি’র নেতৃত্বের যোগ্যতার বিষয়টিও সামনে চলে আসে। দলটির বর্তমান  কোন্দল আর গ্রুপিং, যা তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপি’র বরিশাল সদরের আসনটি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।
বরিশালে এখন বিএনপি’র একাধিক গ্রুপ সক্রিয়। মহানগর বিএনপি বিভক্ত পদধারী আর পদবঞ্চিত। পদধারীদের আবার দু’টি গ্রুপ। একদিকে সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার অপর দিকে আফরোজা খানম নাসরিন। পদবঞ্চিত কেউ কেউ হাঁটছেন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসিচব মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে, আবার কেউ সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবিরের সঙ্গে। জেলা বিএনপিতেও ২/৩টি গ্রুপ। একটিতে সভাপতি আবুল হোসেন বনাম রাজন গ্রুপ। একাধিক গ্রুপের কারণে বরিশাল বিএনপি’র তৃণমূল কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। এবারের রমজানে এ কারণে একাধিক ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ইফতার পার্টিতে ছিলেন অনুপস্থিত। 
মহানগর বিএনপি’র সাবেক দপ্তর সম্পাদক জাহিদুর রহমান রিপন বলেন, ৫ই আগস্টের পর আমাদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে, এটা সত্য। অচিরেই এই সমস্যা সমাধান না করতে পারলে আগামী নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনটি বিএনপি’র হাতছাড়া হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে এই কোন্দল। বিএনপিকর্মী মো. ঝুনু বলেন, বরিশাল সদর আসন বিএনপি’র ঘাঁটি, এটি যেমন সত্য, তেমনি এটিও সত্য যে, বর্তমানে  আমাদের মধ্যে দলীয় কোন্দল এখন প্রকাশ্যে আর এই সুযোগ নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের মতো ইসলামিক দলগুলো। 
এ বিষয়ে বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, দেখা গেছে, নেতা নন কিন্তু দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে আছেন। তাদের যোগ্য নেতৃত্ব দেয়ার জায়গায়ও অনেকটা ঘাটতি রয়েছে। এমন লোকজন নেতা হয়েছেন। ফলে বরিশাল মহানগর বিএনপি’র মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ ও নানা গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান নেতৃত্ব এসব পক্ষকে একমঞ্চে আনতে পারেননি। আবার কারও কারও মধ্যে আন্তরিকতারও ঘাটতি দেখা গেছে। নিজের মধ্যে সমস্যা থাকলে বিভিন্ন পক্ষই তার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে- এটা স্বাভাবিক। তবে মনোনয়ন দেয়ার পর বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতারা এক হয়ে দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন বলেও আশা করেন বিএনপির এই নেতা।
এদিকে সামপ্রতিক সময়ে বরিশালে সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। দল দু’টির শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারা কারও কাঁধে ভর করে কিংবা কোনো দলের কোন্দলকে পুঁজি করে এগোতে চান না। জনগণের আস্থা আর বিশ্বাস অর্জনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হতে চান তারা। আর নির্বাচনে জয়ের জন্য আশাবাদী দু’টি দলই। 
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বরিশাল মহানগর শাখার আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মু. বাবর  বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক দল। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল ছাড়া প্রতিটি নির্বাচনে তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। জামায়াত দেশের মানুষকে নিয়ে কাজ করে। তৃণমূল পর্যন্ত জামায়াতের সংগঠন রয়েছে। এ অবস্থায় কোনো দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে কী নেই, তা দেখার এবং কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ ও ইচ্ছা আমাদের নেই। আমাদের ভরসা হলো জনগণ। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। কোনো দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা এগিয়ে যেতে পারে। জামায়াতে ইসলামী জনগণের সমর্থন ও শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কোনো দলের অভ্যন্তরীণ  দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিংয়ের ওপরে ভর করে নয়।
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি প্রফেসর মো. লোকমান হাকিম বলেন, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। এ অঞ্চলের মানুষ আমাদের নেতৃত্বকে ভালোবাসে। দীর্ঘ সময় ধরে তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। ফলে কোনো দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে পুঁজি করে ইসলামী আন্দোলন এগোতে চায় না। বরিশালের মানুষের ভালোবাসা ও তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা রাজনীতির মাঠে আছি। আশা করি, আগামীতে বরিশাল সদর আসনে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থীই জয়ী হবেন।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status