দেশ বিদেশ
রংপুরে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড
শেখ হাসিনাসহ ২৬ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে
স্টাফ রিপোর্টার
১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবারবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৬ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়াও এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২ মাসের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য ২ সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এ সময় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, আবদুস সাত্তার পালোয়ান উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সকালে আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গত ২রা মার্চ তাদের হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
যে ৪ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা হলেন- সাবেক এএসআই আমির হোসেন, তাজহাট থানার কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।
শুনানি শেষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই আন্দোলনে রংপুরের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। এ হত্যা মামলায় আটক ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ মামলার তদন্তকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষ করতে আরও ২ মাস সময় দেয়া হয়েছে তদন্ত সংস্থাকে। আগামী ১৫ই জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আবু সাঈদের হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের আগে রংপুরে ২টা মামলা হয়েছে। এরমধ্যে তৎকালীন পুলিশের করা একটি মিথ্যা মামলায় ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছিল। আরেকটি মামলা ৫ই আগস্টের পর আবু সাঈদের পরিবার করেছিলো। কিন্তু সেখানে মামলা থাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা যাবে না, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা আমাদের মতো তদন্ত করছি। তবে রংপুরের মামলার সকল আসামি যদি ট্রাইব্যুনালের মামলায় গ্রেপ্তার হয়, স্বাভাবিকভাবেই ওই মামলাটা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
এদিকে ২০১৬ সালে রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজ বিল্ডিংয়ে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের নামে ৯ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি একেএম শহিদুল হক, ডিএমপি’র সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও মিরপুর জোনের তৎকালীন এসি জসিম উদ্দিনকে ১ দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এপ্রিলের ২১, ২২ ও ২৩ তারিখে আসামিদের পৃথক পৃথকভাবে সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ও পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ই মে দিন ধার্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর ও আইনজীবীদের মামলার শুনানির সময় গাউন পরার নির্দেশনা দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল থেকে বলা হয়েছে, এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র আছে। তাই গাউন পরতে হবে।
এ ছাড়াও প্রতিটি কোর্টে যেন এসি থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এটা (সব আদালতে এসি’র ব্যবস্থা করা) আমাদের হাম্বল রিকোয়েস্ট টু দ্য অথরিটি (কর্তৃপক্ষের কাছে সবিনয় অনুরোধ)। কারণ আদালতে নানা ধরনের মানুষ আসেন। যদি বিচার চাইতে এসে গরমে অজ্ঞান হয়ে যান, তাহলে কীভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।
গতকাল শুনানি চলার সময় বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নজরে আনেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম। তিনি গরমে গাউন না পরার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা তুলে ধরেন এবং ট্রাইব্যুনালেও সেই নির্দেশনা মানতে হবে কিনা, তা জানতে চান। তখন ট্রাইব্যুনাল গাউন পরার নির্দেশনা দেন।
জানা যায়, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের আদেশ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৫শে মার্চ বলা হয়, দেশব্যাপী তাপপ্রবাহের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলা শুনানিকালে আইনজীবীদের গাউন পরিধানের আবশ্যকতা শিথিল করা হলো। এ নির্দেশনা ৬ই এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।