ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

স্বাস্থ্যসেবা খাতকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার
১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইনটারটন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান। বৈঠকে উভয়পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় ব্যারোনেস উইনটারটন দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ ও বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। একইসঙ্গে আমরা সন্তুষ্ট যে সরকার কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে দিয়েছে। দেশ একটি রূপান্তরের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি আমাদের জন্য একটি রূপান্তরমূলক সময়। আমরা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন ও অগ্রাধিকার পুনঃনির্ধারণে মনোনিবেশ করছি। বাংলাদেশে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এখন নার্সের সংকট রয়েছে। তবে নার্সিং শুধু জাতীয় সমস্যা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তা। আমরা নার্সদের প্রশিক্ষিত করতে চাই, এটি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয় বরং সারা বিশ্বের জন্য। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকায় স্বাস্থ্যখাত শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের সহায়তার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্য কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর। এখানে যুক্তরাজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আরেকটি সম্ভাবনাময় খাত হলো ওষুধ শিল্প। আমরা অনুরোধ করছি, পেটেন্ট সুরক্ষা তুলে নেয়ার পক্ষে অবস্থান নিন যাতে প্রতিটি দেশ সাশ্রয়ীভাবে সামাজিক ব্যবসা মডেলে টিকা উৎপাদন করতে পারে। উভয়পক্ষ শিক্ষা, টেঙটাইল শিল্প, প্রতিরক্ষা এবং বিমান চলাচলসহ কৌশলগত সহযোগিতার আরও বিস্তৃত ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন। প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, টেঙটাইল খাত আধুনিকীকরণ এবং প্রতিরক্ষা ও বিমান চলাচলে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের সহায়তাকে স্বাগত জানাই। উভয় নেতা এই খাতে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি বিনিময় এবং দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বে আগ্রহ প্রকাশ করেন। জেন্ডার সমতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সব খাতে নারীর অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দিই। নারীর ক্ষমতায়ন আমাদের উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রে রয়েছে। ব্যারোনেস উইনটারটন বর্তমান সংস্কার এজেন্ডার প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের সমর্থন জানান। তিনি বাংলাদেশের সাংবিধানিক সংস্কার কর্মসূচির প্রধান আলী রীয়াজের সঙ্গেও বৈঠক করেন। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো স্বল্প সংস্কার প্রক্রিয়ায় একমত হয়, তবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। তবে যদি বৃহত্তর সংস্কার পথ বেছে নেয়া হয়, তাহলে নির্বাচন জুনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশকে ইন্ডিটেঙের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং হাব হিসেবে দেখছেন ম্যাসেইরাস: বাংলাদেশকে ইন্ডিটেঙের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং হাব হিসেবে অভিহিত করে অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন স্পেনের শীর্ষস্থানীয় পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেঙের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অস্কার গার্সিয়া ম্যাসেইরাস। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এ আগ্রহের কথা জানান। বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাই। সোর্সিংয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত ব্যবসাবান্ধব। বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশ-স্পেন সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বাংলাদেশে ইন্ডিটেঙের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম। ইন্ডিটেঙের প্রধান নির্বাহী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে ‘অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ইন্ডিটেঙ বিশ্বের বৃহত্তম ফাস্ট ফ্যাশন গ্রুপ, যার মালিকানায় রয়েছে জারা, বারশকা এবং মিসিমো ডাট এর মতো ব্র্যান্ড। বিশ্ব বাণিজ্যের জটিলতা এবং এর প্রভাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ উদীয়মান বৈশ্বিক বাণিজ্য গতিশীলতাকে কাজে লাগানোর জন্য আরও ভালো অবস্থানে রয়েছে। তিনি বৈশ্বিক বাণিজ্যের ‘চলমান উপাদানগুলোর’ কথাও স্বীকার করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা পরিদর্শনের পর, ম্যাসেইরাস দেশটিতে উৎপাদিত বৈচিত্র্যময় পণ্যের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি নতুন চুক্তির মাধ্যমে ইন্ডিটেঙ বাংলাদেশের পোশাক কারখানার অন্তত ৫০ জন নারী কর্মীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে। এ ছাড়াও, ইন্ডিটেঙ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্প্যানিশ ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে ‘ইন্ডিটেঙ চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করেছে বলেও জানান ম্যাসেইরাস। প্রধান উপদেষ্টা কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি স্পেনে কাটানো সময় এবং স্পেনের সাবেক রানী সোফিয়ার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বৈঠকে উপস্থিত ইন্ডিটেঙ কর্মকর্তারা জানান, শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার-কার্গো পরিবহন শুরু করবে।
বাংলাদেশের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে থাকার প্রতিশ্রুতি হোলসিম গ্রুপের: এদিকে হোলসিম গ্রুপের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান মার্টিন ক্রিগনার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে দেশের সিমেন্ট খাতের ব্যবহার প্রবণতা, শিল্পটির পরিবেশগত প্রভাব এবং বাংলাদেশের বাজারে হোলসিমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্ববিখ্যাত সিমেন্ট ও নির্মাণসামগ্রী প্রস্তুতকারক হোলসিম গ্রুপ হলো লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের মূল কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি সুনামগঞ্জের ছাতকে দেশের একমাত্র একীভূত সিমেন্ট কারখানা পরিচালনা করছে এবং দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। ক্রিগনার বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের জন্য সরকার যেভাবে আমাদের সহায়তা করে চলেছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি জানান, ছাতক কারখানায় ‘নন-রিসাইকেবল প্লাস্টিক’ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা পরিবেশে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। ক্রিগনার বলেন, টেকসই প্রযুক্তিতে হোলসিম বিশ্বজুড়ে পথপ্রদর্শক এবং বাংলাদেশেও তা কার্যকর করা হচ্ছে। তিনি জানান, হোলসিমের অন্যান্য দেশে কার্বন ক্যাপচার প্রকল্প রয়েছে, যা বাংলাদেশেও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে হোলসিমের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল চৌধুরী গত এক বছরে সিমেন্ট শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশাবাদী। ইকবাল চৌধুরী জানান, প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘অ্যাগ্রিগেটস’ চালু করেছে, যা দেশের শত শত মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রফেসর ইউনূস ছাতকের লাফার্জ কারখানায় অপুনঃচক্রায়িত প্লাস্টিক (নন-রিসাইকেবল) ব্যবহারের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে জানতে চান। হোলসিম আশ্বস্ত করে যে এই জ্বালানির ব্যবহার কার্বন নির্গমন ঘটাবে না। প্রধান উপদেষ্টা দেশে হোলসিমের আরও বিনিয়োগকে স্বাগত জানান এবং সরকারের ব্যবসাবান্ধব ও বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব অবস্থানের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। ক্রিগনার বাংলাদেশের বাজারে দীর্ঘমেয়াদে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status