দেশ বিদেশ
সচিবালয়মুখো চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ
স্টাফ রিপোর্টার
৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবারচাকরিতে পুনর্বহাল, ক্ষতিপূরণ, পেনশনসহ বিভিন্ন দাবিতে কাফনের কাপড় গায়ে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল করেছেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। তবে সচিবালয়ের আগেই গতকাল দুপুরে শিক্ষা ভবনের সামনে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে তাদেরকে আটকে দেয় পুলিশ। পরে সড়কে বসে আন্দোলন শুরু করলে সাউন্ড গ্রেনেড, টিআরশেল ও লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
এর আগে পিলখানার ভেতরে ও বাইরের ইউনিটে মহাপরিচালকের বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্টের অবৈধ রায় বাতিল করে সকল চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে ‘ক্ষতিপূরণসহ চাকরিতে পুনর্বহাল ও জামিনের পরও মুক্তি না পাওয়া বিডিআর সদস্যদের মুক্তিÑ এই দুই দফা দাবিতে সোমবার সকালে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে গেলে শিক্ষা ভবনের মোড়ে পুলিশ আগে থেকেই ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। এ সময় পুলিশি বাধা পেয়ে শিক্ষা ভবনের সামনের সড়কে বসে পড়েন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। এতে পুরো এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় একঘণ্টা অবরোধের পর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফের সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের উপেক্ষা করেই সচিবালয়ের দিকে যেতে চান। এরই একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছোড়া হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে ইসমাইল হোসেন (৫৯), কামরুল ইসলাম (৫০), মাহফুজুর রহমান (৫০), রতন কুমার দেব (৬০), মোতালেব হোসেন (৬৪), কামরুজ্জামান (৪২) ও সারোয়ার (৪৮)সহ বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আন্দোলনকারী চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা বলেন, আমরা বিডিআর সদস্যরা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনেই ক্ষতিগ্রস্ত হইনি বরং সামাজিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক জীবনেও ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছি। আমাদের পরিবারগুলো মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে এবং সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন হয়। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমাদের পরিবারগুলোর মানসিক শান্তি ও স্থিতি পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। এ ঘটনার ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা এখনও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়ে যাচ্ছি, যা আমাদের নাগরিক অধিকার, সম্মান ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে। পরে বিডিআর সদস্যরা দোয়েল চত্বর হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন। পুলিশের লাঠিচার্জে ৩১ জন আহত দাবি করে গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়- আমরা এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের দুঃখের কথা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেছিলেন- আমাদেরকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন। কিন্তু এখনো জানাননি। আমরা সেই কথা জানতেই সচিবালয়ে যাচ্ছিলাম। তখন এই পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালালো। তাই আমরা ঘোষণা দিচ্ছি- যতক্ষণ আমাদের সঙ্গে এই বিষয়ে কোনো কর্তৃপক্ষ এসে কথা না বলবে, ততক্ষণ আমরা এই শহীদ মিনারেই অবস্থান করবো। এখান থেকে আমাদেরকে কেউ সরাতে পারবে না।
এদিকে লাঠিচার্জের বিষয়ে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়। পরে তারা বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। পরে তারা সেখান থেকে চলে যায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, সচিবালয় একটি সংরক্ষিত এলাকা। সচিবালয়ের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তাদের যেতে দেয়া হয়নি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়েছে।
এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। আমি নিজেও সামান্য আহত হয়েছি। তারা সড়কের যান চলাচলও বন্ধ করে দেয়। এরই প্রেক্ষিতে তাদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।