ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

আদমপুর বনজুড়েই যেন পান জুম, নেপথ্যে সাবেক দুই বিট কর্মকর্তা

সাজিদুর রহমান সাজু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে

(১ মাস আগে) ১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৪:২১ অপরাহ্ন

mzamin

সিলেট বন বিভাগের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উঁচ-ুনিচু টিলাজুড়ে আদমপুর বনবিট বা জঙ্গলের অবস্থান। এর আয়তনে ১৩ হাজার ৮০ একর। সীমান্ত ঘেঁষা এ বনের পরেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। বনের একপাশের সীমান্ত ঘেঁষেই কালিঞ্জি পুঞ্জি এবং পুঞ্জির পান জুম। বাকি তিন পাশে গাছ আর বাঁশ বাগান। বড় বড় গাছের নিচ দিয়ে চলে গেছে হাঁটাপথ। কোথাও কোথাও দুই টিলার মাঝখান থেকেই চলে গেছে সরু পথ। রিজার্ভ ফরেস্টের ঘন জঙ্গলের এই বনে গাছ আর বেত বাগান থাকার কথা। কিন্তু বন জুড়েই যেন পান জুম।  ঘন জঙ্গলের এই বন নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় ৩ কুতুব। 

তাদের বাহিরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ থাকে না বন বিভাগের। এমন তথ্য জানিয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন, পান থেকে চুন খসলেই জেরার মুখে পড়তে হয় বন কর্মকর্তাদের! তিন কুতুবের সংকেতবাহী নাম “আসারা”! এই বন নিয়ে স্থানীয় ভিলেজ পলিটিক্সও চলে। চলে রাজনীতিতে কৌশলের খেলাও। এই ভিলেজ পলিটিক্স আর কৌশলের খেলায় ফায়দা তুলে নেয়ায় বন বিট কর্মকর্তা এগিয়ে থাকেন বহুগুণ।

বিগত ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা দুই বিট কর্মকর্তার আমলে এটা স্পষ্ট ছিল। তারা কেউ মুখ খুলে কথা না বলে চুপ থেকে ফায়দা নিয়ে তিন কুতুবের কথার বাহিরে টুঁশব্দ করেননি। ফলেই তাদের আমলে সৃজনকৃত বাগানগুলো পান জুমে পরিণত হয়েছে। এলাকায় এই তিন কুতুব একে অপরের প্রতিপক্ষ হলেও বন কেন্দ্রীক স্বার্থে তারা ঐক্যবদ্ধ। তার প্রমান মিলে বনের গহীন বনের ‘সম্পদ’ নামক এলাকায়। এখানে তিন কুতুবের লোকজনই বাঁশ কেটে উজার করছেন। পাশাপাশি করছেন পান জুম। 
বনের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে কালিঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি। পুঞ্জির সবাই বন বিভাগের বন ভিলেজার। এই ভিলেজার খাসিয়াদের রয়েছে পান বাগান বা পান জুম। তাদের নির্ধারিত পান জুমের বাহিরে নতুন করে জুম করছেন। তাদের সেই পান বাগান ঘেষেই সম্প্রতি অবৈধ ভাবে করা হয়েছে পান বাগান। বনের ডালুয়া থেকে লাউয়া, বাঘাছড়া বাঁশ মহাল ছাড়াও কোরজুন, বাপার জুনের আজবউল্ল্যা, লেটির উপর, হালাই টিলার উপর, রাতা, কৈতর, ছোট কেয়ার, মোল্লার জানিয়া, বাংলার টিলার একাংশ থেকে শুরু করে মঙ্গলের টিলা এলাকা জুরে পান জুম করা হয়েছে। রোপন করা হয়েছে পানের চারা। সরেজমিন বন ঘুরে দেখা যায়, কোথাও বনের ন্যাচারেল গাছ-বাশ কেটে বন ধ্বংস করে, আবার কোথাও গাছের গোড়ায় লাগানো হয়েছে পানের চারা। কাঠালকান্দির নার্সারি দিয়ে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ সনের বেত বাগান পেরিয়ে পয়েলা বাড়ির একটু সামনে গেলেই দেখা মিলে পান জুমের। এখান থেকে যত ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে নতুন নতুন পান জুম। স্থানীয়রা জানান, বন বিভাগকে ম্যানেজ করেই পান রোপনের নামে বনের টিলায় টিলায় বন দখলের মহোৎসব চলছে। পুরো বন জুড়েই যেন পান জুম করা হয়েছে। এখান থেকে সিলেট বন বিভাগের টপ টু বটম সবাই মাসোয়ারা পেয়ে থাকেন। আপনি না লিখে হাত মিলিয়ে নেন, লাভবান হবেন। লিখলে আমাদের পকেট কাটা যাবে। এই আর কী? বন ঘুরে বুঝা গেল গাছ আর বাঁশ বাগানের এই বন স্থানীয়দের আয়ের বড় উৎস হয়ে উঠেছে। এতে লাভবান হয়েছেন বিগত বন বিট কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন ও মোঃ ইকবাল হোসেন। এদের মধ্যে হেলাল উদ্দিন ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং ইকবাল হোসেন ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত এ বন বিটে কর্মরত ছিলেন। পরে মোঃ জাকিরুল হক সরকার কিছুদিন এ বনের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বিট ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় আদমপুর বিট কর্মকর্তা হিসাবে ৬ মাস দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে বন রক্ষায় তিনি কঠোর ছিলেন। ওই ছয় মাসের বন মামলা তাই প্রমান করে।

স্থানীয়রা জানান, বন বিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন ও ইকবাল হোসেনের আমলে এই বনে সুফল প্রকল্পের বিভিন্ন বাগান ও সিলেট প্রকল্প নামে বাগান করা হয়। এই বাগান করতে গিয়ে সংরক্ষিত বন ও বাঁশ বাগান ধ্বংস করা হয়। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বাগান করার নামে পকেট ভারী করেন ওই দুই বিট কর্মকর্তারা। নামে বাগান করা হলে বাস্তবে এগুলো পান বাগান। এছাড়া বনায়নের নামে বাগান করার জন্য ১০ থেকে ৩০ সদস্যের সুফলভোগী কমিটি করা হয়। কমিটি গঠনের পর বাগান দেওয়ার নামে প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এই সময়ে সুফল বাগান আর পান জুমে সাবেক ওই দুই বিট কর্মকর্তা হয়েছেন বাসা বাড়ির মালিক। বন নির্ভরশীল মানুষের মুখে এমন কথা চাউর হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগেও গুঞ্জন রয়েছে আদমপুর বনবিটের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় একাধিক প্লটের মালিক হয়েছেন সাবেক বনবিট কর্মকর্তা হেলাল ও ইকবাল। বর্তমানে বিশাল এ বনের বিট কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বে আছেন অর্জুন কান্তি দস্তিদার।
 

অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার দুপুরে আদমপুর বন বিটের সাবেক বনবিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিক ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। অপর বিট কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, আমার আমলে কোনো পান জুম করতে দেইনি। এর বাহিরে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
আলাপকালে আদমপুর বন বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার বিগত বিট কর্মকর্তার অভিযোগ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তা রাজকান্দিা প্রীতম বড়ুয়া বলেন, এই বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তবে অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status