খেলা
এবারের বিপিএলএ ফোটেনি নতুন কোনো ফুল
স্পোর্টস রিপোর্টার
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার
যে কোনো দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ মানেই নতুন খেলোয়াড় বের হয়ে আসা। ভারতের টুর্নামেন্ট আইপিএল থেকে প্রতি আসরেই বেশ কয়েকজন তরুণ প্রতিভা পায় জাতীয় দল। বাংলাদেশেও বিপিএল থেকে উঠে আসা অনেক ক্রিকেটার আছে। মুনিম শাহরিয়ার, আবু হায়দার রনি, জাকের আলীরা বিপিএল দিয়েই নজর কেড়েছেন জাতীয় দলের নির্বাচকদের। তবে এবারের আসর ব্যতিক্রম, এবার ফোটেনি নতুন কোনো ফুল। সর্বোচ্চ রান বা উইকেট, সবখানেই দাপট পরীক্ষিত আর জাতীয় দলে ইতিমধ্যে জায়গা পাকা ক্রিকেটারদের।
এবারের আসর শুরুর আগে বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটারের ওপর চোখ ছিল সবার। দুর্বার রাজশাহীর জিসান আলম, সিলেট স্ট্রাইকার্সের জাওয়াদ আবরার, রংপুর রাইডার্সের আজিজুল হক তামিম, ফরচুন বরিশালের ইকবাল হোসেন জীবন, আরিফুল ইসলামদের নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক। এদের মধ্যে কেউ টানা সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি আবার কেউ সুযোগই পাননি।
শুক্রবার পর্দা নেমেছে বিপিএলের এবারের আসরের। ফাইনালে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছে ফরচুন বরিশাল। এই আসরে সর্বোচ্চ রান নাঈম শেখের, ৫১১। আসরে ৪৮৫ রান করা তানজীদ হাসান তামিম আছেন দুই নম্বরে। ইমার্জিং খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতেছেন তানজিদ। তবে তা নিয়েও আছে সমালোচনা। জাতীয় দলের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলা ক্রিকেটারকে এখন আর কেউ বাকি তরুণদের সঙ্গে একপাল্লায় মাপতে চান না। ৪৩১ রান নিয়ে তিনে চিটাগংয়ের ইংলিশ ব্যাটার গ্রাহাম ক্লার্ক। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় ৩ বছর আগে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন বিপিএলের মধ্যেই। সেই তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে এসেছে ৪১৩ রান। ৩৯২ রান করা এনামুল হক বিজয়ের অবস্থান ৫ নম্বরে। এছাড়া ৩০০ এর উপরে রান করা পারভেজ হোসেন ইমন, শামীম হোসেন পাটোয়ারি বা ইয়াসির আলী, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনরা আগেই পরীক্ষিত। তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯ ম্যাচ খেলেছেন জিসান। বিপিএলের আগে জাতীয় ক্রিকেট লীগ টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দেওয়া জিসানকে নিয়ে বিপিএলেও ছিল প্রত্যাশার পারদ। কিন্তু তিনি হতাশ করেছেন সবচেয়ে বেশি। ৯ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ১২৮ রান। গড় ১৪.২২ আর সর্বোচ্চ ইনিংস ৩৮ রানের।
হতাশ করেছেন রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে খেলা আজিজুল হাকিম তামিমও। সদ্য অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জেতানো অধিনায়ক, তার ব্যাটিং নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও ভালো করেছেন। বিপিএল শুরুর আগে রংপুরের অস্ট্রেলিয়ান কোচ মিকি আর্থারও অনুশীলনে ব্যাটিং দেখে আজিজুলের প্রশংসা করেন। কিন্তু তিনি ৪ ম্যাচ খেলে ৩টিতেই মারলেন ডাক! বাকি ইনিংসে করেন মাত্র ৫ রান। তার ব্যাটিং দেখেই মনে হয়েছে বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে খেলার জন্য এখনও প্রস্তুত নন তিনি। আরেক অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জয়ী অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে ১ ম্যাচ খেলেই বাদ পড়েন একাদশ থেকে। ঐ ম্যাচে ৪ ছক্কায় এক ওভারে খরচ করেন ২৭ রান। ব্যাট হাতেও ব্যর্থ ছিলেন তিনি। অথচ এই রাব্বিকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেই সাকিবের উত্তরসূরী হিসেবে ধরা হচ্ছে। এনসিএলে ৩৯ বলে ৮২ রানের ইনিংস আছে এই বাঁহাতি ব্যাটারের। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে এক ম্যাচে সুযোগ পাওয়া জাওয়াদ আবরারও পাননি রানের দেখা। আর বরিশালের হয়ে খেলা পেসার ইকবাল হোসেন ইমন এক ম্যাচ খেলে নেন ২ উইকেট। বিপিএল থেকেই জাতীয় দলের টিকিট পান মুনিম শাহরিয়ার। ২০২৩ বিপিএলে ৪০৩ রান করা তাওহীদ হৃদয় পরের সিরিজেই ডাক পান জাতীয় দলে। এর আগের আসরে ৬ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ১৭৮ রান করেন মুনিম শাহরিয়ার। তাকে ওই আসরের সেরা আবিষ্কার হিসেবে আখ্যা দেন সাকিব আল হাসান। ফরচুন বরিশালের তখনকার অধিনায়ক বলেন, ‘আমার মতে বাংলাদেশের যেমন প্রতিভা প্রয়োজন ছিল, সে তেমনই একজন। বলের ক্লিন স্ট্রাইকার, দারুণ টাইমিং করে, সাহসী ক্রিকেটার। এখন নিশ্চিত করতে হবে তার যেনো ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া হয়। নিশ্চিতভাবেই বিপিএলের বড় আবিষ্কার মুনিম শাহরিয়ার।’
প্রায় প্রতি আসরেই এমন দু-একজন ক্রিকেটার বের হয়। পরবর্তীতে যারা জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্বও করেন। তবে এবারের বিপিএল থেকে তেমন কোনো ক্রিকেটার উঠে এলো না।