ঢাকা, ১২ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

ভারত

কলকাতা বইমেলা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে বাংলাদেশের বইয়ের অভাবে

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা

(১ মাস আগে) ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১:৩৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৬ পূর্বাহ্ন

mzamin

কলকাতায় তেরো দিনের বই পার্বন শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু এই বই পার্বনে নেই সেই জৌলুস। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশের উপস্থিতি থাকলেও কলকাতা বইমেলায় এবার নেই বাংলাদেশ। মেলাপ্রাঙ্গণে যেখানে থাকতো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি বিশাল প্যাভিলিয়ন সেখানটা এখন একরকম খাঁ খাঁ করছে। নেই সেই ভিড়। গত বছরও এই জায়গাটাতেই হাজার হাজার বইপ্রেমি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অসীম ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতেন ভেতরে প্রবেশের। তরুণ পাঠক-পাঠিকাদের ভিড় লেগে থাকতো প্যাভিলিয়নের সামনে সেলফি তোলার জন্য। মেলায় একদিন পালিত হতো বাংলাদেশ দিবস হিসেবে। সেই দিন সারাদিন ধরে বাজতো বাংলাদেশের গান। বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতেন দেশটির লেখকরা। এবার সেসবের কোনও রেশই নেই মেলাপ্রাঙ্গণ জুড়ে।   

শুক্রবার মেলার শেষ বেলায় হাজির হয়েছিলাম বইমেলা প্রাঙ্গণে। হাঁটতে হাঁটেতে পৌঁছে যাই সেই জায়গায় যেখানে সুদৃশ্য ও সুবিশাল বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম। হতাশা আর আক্ষেপ স্বাভাবিক ভাবেই গ্রাস করেছে এবার আমার মতো বাংলাদেশের লেখক প্রিয় বাঙালি পাঠককুলকে। একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোককে উদাসিনভাবে এদিক-ওদিক তাকাতে দেখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কেমন লাগছে ? উনি কলকাতার একটি কলেজের বাংলার অধ্যাপক। নাম জানাতে চাইলেন না। তবে জানালেন, এখানে গত বছরও ভিড় ঠেলে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করে বাংলাদেশের লেখকদের বইয়ের খোঁজ করে অনেক বই কিনেছিলাম। এবার সেই সুযোগ হারিয়ে মনটা খুব খারাপ লাগছে। তিনি আরও বলেন, বইমেলার অন্যত্রও বাংলাদেশের লেখকদের বই এবার  দেখছি না। 

বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের জন্য নির্দ্দিষ্ট জায়গা আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স এন্ড বুকসেলার্স গিল্ড প্রথমে ফাঁকা রাখার কথা জানালেও ব্যবসায়িক কারণেই এবার সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনার ছোট্ট প্যাভিলিয়ন।বাকি অংশ  কিছুটা ফাঁকা থাকলেও নানা ধরনের ফুডকোর্টের অবস্থান বড় বেমানান মনে হলো।     

গত ২৮ বছর ধরে এই বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকতো একমাত্র বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। প্যাভিলিয়নে রাখা বিভিন্ন বাংলাদেশি প্রকাশকদের স্টলে পাঠকরা খোঁজ করতেন বাংলাদেশের লেখকদের নতুন নতুন বইয়ের। কোন কোন নতুন লেখক উঠে আসছেন তারও খোঁজ খবর চলতো। বাংলাদেশের বইয়ের সমুদ্রে অবগাহন করেও অনেকে মানসিক আনন্দ পেতেন। এক কথায় বইমেলায় আসা পাঠক ও বইপ্রেমিদের একটা অংশের মধ্যে বিষন্নতা ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের অনুপস্থিতি যে সকলকে বিষন্ন করে রেখেছে সেকথা কবুল করেছেন আযোজক সংস্থার প্রধান লেখক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, নানাবিধ কারণে, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ এবার নেই। ফলে একটা মানসিক বিষন্নতা আমাদের মধ্যে খেলা করছে। শূণ্যতাও বলা যায়। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশকে আবার আমরা আমাদের মধ্যে রাখবো।

সাহিত্যের অনুসন্ধানী পাঠক পাপিয়া চক্রবর্তী মেলা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বলেন,  মেলা জুড়ে নানা ধরনের স্টলে নানাবিধ বই, নানা ধরনের খাবারের সুগন্ধ আর চা-কফির কাপে চুমুকের পাশাপাশি আড্ডায় মেতে থাকার মতো পরিবেশ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু মেলা ঘুরে মনে হয়েছে কী নেই কী নেই। কোথায় সেই লাইন দেয়া ভিড় করে মানুষের বই কেনা?   

বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না থাকায় এবারের বইমেলাকে অসম্পূর্ণ বলেই মনে করেন এক প্রবীণ সাংবাদিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বই না পেয়ে অনেকেই এবার আশাহত হয়েছেন। তবে তিনি আশাবাদী আগামী দিনে এর পরিবর্তন আমরা দেখতে পাবো। বইমেলাতেই দেখা উত্তর শহরতলির  সাহিত্যপ্রেমি তরুণ অরুণাভ ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্বের ২৭ কোটি বাংলাভাষী মানুষের অধিকাংশই বাংলাদেশের। তাই তাদের চিন্তা, মননের পরিচয় পাওয়ার জন্যই বাংলাদেশের বই পড়ার প্রযোজন রয়েছে। কিন্তু এবার সেটা না থাকায় একটা দুঃখবোধ কাজ করছে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা গত ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। শেষ হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। এই তেরোদিনে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের উপস্থিতি আয়োজকরা আশা করলেও বইমেলায় ঘুরে মনে হয়েছে সেই লক্ষ্য পূরণ কতটা হবে তা মেলা শেষ হওয়ার পরেই স্পষ্ট হবে। তবে এবারের বইমেলা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। মেলার প্রাঙ্গনে মুক্তমনাদের জন্য যে মুক্তমঞ্চ রাখার ব্যবস্থা এতদিন ছিল তা এবার রাখা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকে। রাখা হয়নি তরুণ চিত্রশিল্পীদৈর জন্য কোনও জায়গা। আবার পশ্চিমবঙ্গের সুপরিচিত মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরকে স্টল বরাদ্দ না করায় অসন্তুষ্ট মানবাধিকার কর্মীরা। মেলায় প্রায় এক হাজার স্টলে বইয়ের বৈচিত্র ধরা পড়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন, এআইয়ের স্পর্শে সৃষ্টিশীলতা হারাচ্ছে বইয়ের জগত। মৌলিকত্ব হারাচ্ছে অনেক বই। মেলায় তাই এখনও ক্লাসিক সাহিত্যের চাহিদা তুঙ্গে।

পাঠকের মতামত

কলকাতা বই মেলায় বাংলাদেশ নেই এজন্য দায়ী ভন্ড মোদী।

Md.Abdul Barek
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ২:৩৬ অপরাহ্ন

ভারত থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

ভারত সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status