প্রথম পাতা
জাহিদ মালেক পরিবারের ৬০০০ শতাংশ জমির খোঁজ
মারুফ কিবরিয়া
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবারজাহিদ মালেক স্বপন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চারবার সংসদ সদস্য। এরমধ্যে এক মেয়াদে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অন্যবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে হাতিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে জাহিদ মালেক ও তার ছেলে-মেয়েদের নামে থাকা বিপুল সম্পদের তথ্য। এক মানিকগঞ্জেই এই পরিবারের নামে থাকা ৬ হাজার ৫৩ শতাংশ জমির তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি জেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জাহিদ মালেক ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক। সেই চিঠির জবাবে তাদের নামে ছয় হাজার ৫৩ শতাংশ জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন মৌজায় কেনা এসব জমির মধ্যে জাহিদ মালেকের নামেই রয়েছে ২ হাজার ১৯৩.০৫৩ শতাংশ। তার ছেলে রাহাত মালেকের নামে ১ হাজার ৭৪২.০১৬ শতাংশ এবং ২ হাজার ১১৮.৭৮ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে মেয়ে সিনথিয়া মালেকের নামে। বিপুল পরিমাণ এই জমির বাজার মূল্যও টাকার অঙ্কে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা। তবে জমির দলিল মূল্যে দাম অনেক কম দেখানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, আমরা সবে অনুসন্ধানটা শুরু করেছি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে আমাদের কাছে। এসব অভিযোগের অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জে জাহিদ মালেক ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই জমিগুলোর তথ্য এসেছে।
দুদকের এই কর্মকর্তা আরও জানান, মানিকগঞ্জের জমি ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, ফ্ল্যাট থাকার তথ্য রয়েছে। এসব সম্পদের বিষয়েও ইতিমধ্যে খোঁজ নেয়া শুরু হয়ে গেছে। দুদক সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জে জাহিদ মালেক ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে যে ছয় হাজার শতক জমি ছেলে রাহাত মালেকের নামে ৯১টি দলিল, মেয়ে সিনথিয়ার নামে ২২টি এবং জাহিদ মালেকের নামে রয়েছে ৪৬টি দলিল।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট দুদকের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) মানিকগঞ্জে কারখানা স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প পাস হয়েছিল। ২০২২ সালের ৫ই এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি পাস হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৭ সালের মার্চ পর্যন্ত। প্রকল্পের জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মেঘশিমুল এলাকায় সাড়ে ৩১ একর জমি প্রস্তাব করা হয়। যেসব মৌজায় এসব জমি পড়েছে তার অধিকাংশই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার ছেলে-মেয়েদের নামে। কিছু জমি মেয়ের স্বামীর নামেও দানপত্র করা হয়েছিল। প্রকল্প পাসের পর অধিগ্রহণ হলে তিনগুণ দামে জমিগুলো বিক্রি করতে পারবেন এমনটা পরিকল্পনায় ছিল তাদের। এতে সরকারের ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ। এর জের ধরে তাকে অপসারণের জন্য আন্দোলনও হয় জাহিদ মালেকের ফুপাতো ভাই শামীম মিয়ার নেতৃত্বে। পরে প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়।
অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রী থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালের কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইক্যুইপমেন্ট, ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজে ভাগ বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জাহিদ মালেক। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন জাহিদ মালেক। এসব দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দুদকের অভিযোগের তথ্যমতে তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার গুলশানে আলিশান বাড়ি, বনানীতে ১৪ তলা বিটিএ টাওয়ার, মানিকগঞ্জ শহরে ১০তলা বাণিজ্যিক ভবন, সভা সমাবেশ করার জন্য গড়েছেন শুভ্র সেন্টার। অভিযোগ রয়েছে, তার পরিবারের মালিকানাধীন থাকা অবস্থায় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাখ লাখ গ্রাহকের অর্থ লোপাট করেছেন জাহিদ মালেক।
সূত্র আরও জানায়, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে করোনার টিকা, কিট, নকল মাস্ক বানিয়ে ও ভুয়া আমদানি দেখিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এমনকি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালের ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইক্যুইপমেন্ট, ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজে ভাগ বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। দুর্নীতির এসব টাকা দিয়ে নামে-বেনামে ব্যবহার করে এক ডজনের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার মহামারিকালে মুন্সীগঞ্জের একটি কারখানায় এন-৯৫ নকল মাস্ক বানিয়ে ভুয়া আমদানি দেখিয়েছেন। এসব মাস্ক হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেয়া হতো। এই কাজটির সঙ্গে সরাসরি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালিক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ মিলে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমন তথ্য করোনাকালে বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমেও উঠে এসেছিল।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি’র করোনাকালীন এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে করোনাভাইরাস সংকট প্রকট হচ্ছে। এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দামে মানহীন মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেজন্য এসব কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ একটি সিন্ডিকেটের হাতে থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে।
টিআইবি’র অভিযোগ, একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন ফার্মের নামে সব ধরনের কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ এতে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্ক লেখা মোড়কে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করার বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষার রক্ত সংগ্রহের টিউব, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে পিসিআর মেশিন কেনাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জাহিদ মালেকের দেয়া হলফনামা সূত্রে জানা যায়, এই সময়ে তার আয় ও সম্পদ উভয়ই বেড়েছে। ২০০৮, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট অথবা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানত ও অন্যান্য বাবদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বার্ষিক আয় আট কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৫ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯১ টাকা। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে সাত কোটি ৫২ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৩ গুণ। ২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল দুই কোটি ২০ লাখ ৮৩ হাজার ২১১ টাকা। সেই হিসাবে গত পাঁচ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ছয় কোটি ৯ লাখ ১৩ হাজার ৮১৪ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে তিন দশমিক ৭৫ গুণ।
বেড়েছে অস্থাবর সম্পদও: হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ এবং গত পাঁচ বছরে বেড়েছে অর্ধেকেরও বেশি। এবার নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, বন্ড ও ঋণপত্র, যানবাহন ও অন্যান্য বাবদ তার অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬১ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ছয় কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭ টাকা। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৬০৪ টাকা।
২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭১ টাকা। সেই হিসেবে গত পাঁচ বছরে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ৯০ টাকা, অর্থাৎ এক দশমিক ৬৬ গুণ বেশি।
এতো প্রকাাশ্যে দুর্নিতির কর্মকাণ্ডের এবং অরাজগতার যুগ বাংলাদেশে কখোনও হয় নাই। নির্বাচিত সরকারের সময়কাল ৫ বৎসর থেকে কমিয়ে ৪ বৎসর করা হউক।
৬০০০ শতাংশ = ৬০ একর মাত্র। ******** ********** মন্ত্রী হিসাবে যেমন অযোগ্য ছিলেন দুর্নীতিতে ও অযোগ্য। হাসিনার পিয়ন 400 কোটির মালিক, হেলিকপ্টারে চলে । আর এই মন্ত্রী মাত্র ৬০ একর জাগার মালিক । দুর্নীতি ও ঠিকমত করতে পারে নি । তার বউ'র উচিত তাকে ঝাড়ু পেটা করা।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় কি ভাবে পারল এমন দুর্নীতি করতে, ৩০০ জন সংসদ সদস্য সবাই চোর, তাছাড়া সব বিভাগই দুর্নীতিগ্রস্ত , হায়রে বাংলাদেশ, জাতি এমন চোরদের সবার দৃষ্টান্ত শাস্তি চায়,
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় কি ভাবে পারল এমন দুর্নীতি করতে, ৩০০ জন সংসদ সদস্য সবাই চোর, জাতি এমন চোরদের সবার দৃষ্টান্ত শাস্তি চায়
Zahed Malik's 60 acres of land properties is nothing compared to Benazir's land properties.
মন্ত্রীত্ব চালাতে অক্ষম অপদার্থ হলেও লুটপাটে দক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহেদ মালেক। এক ইউটিউবার মন্তব্য করেছিলেন, হাসিনা যেখানেই যে পিতার যত কুপুত্র ছিল খুঁজে আনতেন এমপি মন্ত্রী করার জন্য। আমার মনে হয় তার বক্তব্য সঠিক।
Dudok must investigate all Awami leaders for their assets.
Dudok must investigate all Awami leaders for their assets.