খেলা
‘আগে যেটা পারিনি এ বছর সেটাই করার চেষ্টা করবো’
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবারপাকিস্তানের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ঘিরে প্রত্যাশা বেড়েছে। আগামীকাল ভারত সফরে দেশ ছাড়ছে টাইগাররা। চেন্ন্াইয়ে আগামী ১৯শে সেপ্টেম্বর শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ইতিমধ্যে এই সিরিজ নিয়ে ক্রিকেট পাড়ায় আলোচনা শুরু হয়েছে। এই সফরে প্রথমবার টেস্ট দলে ডাক পাওয়া জাকের আলী অনিক বলেন, ‘ভারত সিরিজ তো বটেই, বাংলাদেশ যেটা আগে করতে পারেনি এ বছর সেটাই করার চেষ্টা করবে দল।’ গত বছরের শেষটা দারুণ করে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। এরপর চলতি বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ৩টি জয় পায় বাংলাদেশ। আর এবার তো পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবার কোনো ফরম্যাটে জয়ের সঙ্গে টেস্ট সিরিজিও জেতে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে লাল বলে প্রথম ডাক পাওয়া জাকেরের চোখ আরও সামনে। পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ জিতে আসায় ভারতেও বাংলাদেশ দলের ভালো সম্ভাবনা দেখেন জাকের। আজ মিরপুরে অনুশীলনের আগে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সবশেষ সিরিজটা খুব ভালো গেছে, সেই আত্মবিশ্বাস তো অবশ্যই থাকবে। আমার মনে হয়, যেটা আমরা দল হিসেবে আগে কখনো করতে পারিনি এই বছর সেটা করার চেষ্টা থাকবে।’
পাকিস্তান সিরিজের আগে ব্যাটাররা রান খরায় ভুগছিলেন। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের সবাই দারুণ ব্যাটিং করেন। ভারতেও যদি তারা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন, তাহলে বোলাররা দারুণ কিছুর মঞ্চ গড়ে দিতে পারেন বলে বিশ্বাস জাকেরের। পাকিস্তানে সিরিজ জয় বাংলাদেশে লাল বলের সংস্কৃতিতেও বদল আনবে বলে বিশ্বাস তার। জাকের আলী বলেন, ‘আমি কিছু দিন আগেও বললাম, আমরা যে দুইটা ম্যাচ জিতলাম, আধিপত্য দেখিয়ে জিতে আসা, এটা তো অবশ্যই কালচার বদলানোর একটা আভাস। আর চ্যালেঞ্জ (ভারতে) তো সব দিক দিয়ে থাকবে। তাদের ব্যাটিং লাইনআপও তো অনেক ভালো। আমরা যদি ব্যাটিং বিভাগ হিসেবে ভালো করতে পারি। সর্বশেষ দুইটা টেস্ট যদি দেখেন, আমরা সব কিছুতেই ভালো করেছি, বিশেষ করে ব্যাটিংটা কিন্তু ভালো ছিল। আমরা স্ট্রাগল করি ব্যাটিং নিয়েই। ব্যাটিং যখন খারাপ হয়, আমরা হেরে যাই। বোলাররা বেশিরভাগ সময় সাপোর্ট করে। আমরা ব্যাটিংটা যদি ভালো করতে পারি, আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে।’
জাকেরকে দেশের মানুষ মূলত চিনেছে টি-টোয়েন্টি দিয়ে। গত বিপিএলে প্রত্যেক ম্যাচেই গুরুত্বপূর্ণ ক্যামিও খেলে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৪ ম্যাচের ১০ ইনিংসে ব্যাট করে ১৪১ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৯৯ রান। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকেই খেলেন ৩৪ বলে ৬৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। ১৭ ম্যাচ খেলে করেন ২৪৫ রান।
তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জাকের বড় ইনিংস খেলার অভ্যাস আছে। দেশে এই সংস্করণে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটারদের একজন তিনি। ২০২০ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০ ইনিংসে জাকেরের রান ২০০৬। গড় ৪০.১২। সর্বশেষ গত মাসে ইসলামাবাদে পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৮৬ বলে ১৭২ রানের ইনিংস খেলেন জাকের। যাতে ছিল ১৭টি চার ও ৫টি ছক্কা। সব মিলিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ৪৯টি। ৮১ ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরিতে ৪১.৪৭ গড়ে রান করেছেন ২৮৬২।
জাকের টেস্ট দলে ডাক পাওয়াকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই খুব ভালো একটা অনুভূতি। সবারই স্বপ্ন থাকে টেস্ট ক্রিকেট খেলার। সেটার জন্য দলে সুযোগ পেয়ে অবশ্যই ভালো লাগছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমি ২০১৭ সাল থেকে খেলছি। যে সংস্করণই হোক, ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি ভালো করার চেষ্টা করি। ওরকম প্রক্রিয়ায়ই এগোই।’
একাদশে সুযোগ পেলে চ্যালেঞ্জ উতরাতে চান জাকের। এই উইকেটরক্ষক বলেন, ‘স্কোয়াডে নির্বাচিত যেহেতু হয়েছি, উনারা প্রস্তুত মনে করেছেন বলেই নিয়েছেন। এখন আমার দায়িত্ব, নিজের সেরা পারফরম্যান্স। তাদেরকে (ভারতীয় বোলার) নিয়ে অবশ্যই পরিকল্পনা হচ্ছে, যারা যারা খেলবে। নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব। অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকবে। তবে এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে রান করা গেলে আমার মনে হয় অনেক ভালো কিছু হবে।’
টি-টোয়েন্টি আগেই খেলেছেন, এবার টেস্টে সুযোগ এলো। তবে ওয়ানডে কবে খেলবেন এ নিয়ে ভাবছেন না জাকের। তিনি বলেন, ‘আসলে এগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। যখন যেটা পাওয়ার, পাবো ইনশাআল্লাহ্। আমার কাজ রান করে যাওয়া, পারফরম্যান্স করে যাওয়া, পরিশ্রম করে যাওয়া। এটার মধ্যেই মনোযোগ রাখছি।’
ঘরোয়া কোচদের প্রশংসা করেন জাকের। তিনি বলেন, ‘সবশেষ কয়েকটা দিন যে আমরা অনুশীলন করলাম... সোহেল স্যার, বাবুল স্যার। উনারা অনেক পরিশ্রম করেছেন। দুই শিফটেও কাজ করেছেন। সকাল বেলা আমাদের লাল বলের ক্রিকেট দেখেছেন। বিকালে আবার সাদা বলের ক্রিকেট দেখেছেন। উনারা কী পরিমাণ কষ্ট করছেন, আপনারা বোঝেন। অবশ্যই ঘরোয়া কোচদের অবদান ‘থ্যাঙ্কসলেস’ বলা যায়। উনাদের সেভাবে হাইলাইট করা হয় না। কারও নাম ধরে বলতে চাই না। সবারই অবদান আছে। প্রত্যেকটা কোচের সঙ্গে আমার কাজ করা হয়েছে। সবাইকে ছোটবেলা থেকে চিনি। উনারা আমাদের খুঁটিনাটি সব জানেন। উনাদের সঙ্গে ফ্রি-লি কাজ করা যায়।’