ঢাকা, ৭ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

হঠাৎ কেন এত লোডশেডিং

স্টাফ রিপোর্টার
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবারmzamin

হঠাৎ করে বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের অবস্থা ভয়াবহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে। গ্যাস সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য সক্ষমতা থাকলেও প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)।  বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎও মিলছে না। তাই লোডশেডিং বেড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। 
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জ্বালানি নিশ্চিত না করেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। চাহিদাকেও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফলে প্রতি বছর বড় সময় অলস বসিয়ে রাখতে হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। দিতে হয়েছে অলস কেন্দ্রের ভাড়া। খরচের চাপ সামলাতে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। সরকারের দায় বেড়েছে। অথচ তিন বছর ধরে গরম বাড়লেই লোডশেডিংয়ে ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েও পড়েছে একই সমস্যায়। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। ফলে বেড়েছে লোডশেডিং। সোমবার গড়ে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সোমবার বেলা ৩টায় ১ হাজার ৮৭৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। গত রোববারও দেশে গড়ে ১ হাজার ২৯১ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩ হাজার ৫৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আছে। জ্বালানি সংকটে দেশে ৬ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বিদ্যুতে প্রতিদিন গড়ে ৮৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে, যা এপ্রিলে ছিল ১৩৫ কোটি ঘনফুট। 
বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বড় সুবিধাভোগী ছিল সামিট গ্রুপ। এ গ্রুপটির এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। এতে বড় সংকট তৈরি হয়েছে।  

জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কমেছে। ত্রিপুরা থেকে ঘণ্টায় ১৬০ মেগাওয়াটের স্থানে ৬০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ভেড়ামারা দিয়ে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা থাকলেও মিলছে ৮৮০ মেগাওয়াট। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও ৫০০ মেগাওয়াট কম আসছে। পিজিসিবি’র তথ্যমতে, গতকাল দুপুর ৩টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৭৮৮ মেগাওয়াট। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।

ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকোর তথ্য বলছে, ঢাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৪০০ মেগাওয়াট। পরিস্থিতি সামলাতে ডেসকোকে অঞ্চলভেদে ৩ থেকে ৪ বার লোডশেডিং করতে হয়। ডিপিডিসি’র এলাকায় দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং হয়। বিদ্যুৎ বিক্রয় বাবদ বকেয়া অর্থ আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগাদা দিচ্ছে ভারতের গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপ। গ্রুপের কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটি ডলার।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের একটি টার্মিনাল (সামিটের মালিকানাধীন) তিন মাস ধরে বন্ধ। এতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে না। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন কমেছে। বিল বকেয়া থাকায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ কমেছে ৫০০ মেগাওয়াট। বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও সর্বোচ্চ চাহিদায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কারণ, তারাও অনেক টাকা পাবে। তাই ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি থেকে আসে ১১০ কোটি ঘনফুট। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল গত ২৭শে মে থেকে বন্ধ। এতে এলএনজি সরবরাহ দাঁড়িয়েছে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট। পিডিবি’র কর্মকর্তারা বলেন, গ্যাসের সরবরাহ কম, বকেয়া বিলের চাপ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
 

পাঠকের মতামত

তৌফিক এলাহি, নসরুল বিপু গংদের বিদ্যুৎ সেক্টরের কুকীর্তির দ্রুত বিচার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ড. জাহাঙ্গীর আলম
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫:১৩ পূর্বাহ্ন

হ্যারিকেন জালিয়ে থাকতে রাজী আছি, তবু যেন ঋণের টাকায় উন্নয়নের নামে আলো ছড়ানো না হয় !!!

kamal
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

দেশে যে পরিমান ব্যাটারী চালিত রিকশা আছে এই গুলাতে আপাতত ব্যাটারী চার্জ বন্দ রাখলে ১ থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যাবে প্রতিদিন। সেই বিদ্যুৎ লোডশেডিং কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। এদের আবার বেশির ভাগ ই অবৈধ চার্জিং। সরকার এর থেকে কোনো বিদ্যুৎ বিল পাই না.

সিরাজ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

এতো সকালে হাহুতাশ কইরেন না কয়দিন পর ইলেক্ট্রিসিটি থাকে কি না দেখেন।

Akther hossain
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

শুধু মাথা আর নেতা ছেটে ফেলে দিয়েই সমাধান হয়ে গেছে, এমনটি কত যে ভুল ধারনা তা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে। পরিবর্তন মানেই পুরো পরিবর্তন, তার জন্য স্বচ্ছ নির্বাচন লাগবেই, ঘোষনাটা দেওয়াই মঙ্গল ছিলো। সংস্কারের নামে শুরুতেই ভুল পথে নিয়ে গেছে কিনা আবার ভেবে দেখুন, সরকারে প্রায় সকলেই ১৮ বছরের আওয়ামী জঞ্জাল, উপদেষ্টাদেরকে এরা সহযোগীতা করছে নাকি বিপদে ফেলছে সেই হিসাব অতি জরুরী।

Abdul Matin Sikder
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:০২ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে কব্জা করে রেখেছে শুধুমাত্র জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য। অথচ বাংলাদেশের কোন জ্বালানি নীতিই নেই। বাংলাদেশের উচিত মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে কমপক্ষে দুই তিনটি দেশের সাথে দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি চুক্তি করা। এক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাহিরে ভেনেজুয়েলা

আলম
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

বিদুৎ ও জ্বালানি সংকটের জন্য তৌফিক এলাহি গং দায়ী ওরই কমিশমের লোভে এলএনজি কাতার থেকে আমদানী না করে স্পট মার্কেট থেকে অধিক মূল্যে ক্রয় করে দেশের অর্থনীতির পাছা মেরেছে।আর আজিজ খানের সামিট গ্রুপ কে সিঙ্গাপুরের ধনি বানিয়েছে।

ইকবাল কবির
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

হ্যারিকেন জালিয়ে থাকতে রাজী আছি। তবু যেন ঋণের টাকায় উন্নয়নের নামে আলো ছড়ানো না হয়

খ.ম সোহেল
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

আওয়ামীলীগ সরকার আরো কয়েক বছর থাকলে দেশের 12বাজিয়ে দিতো

Abu saeed
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

আগামীতে আরো হবে

এ এইচ.ভূইয়া
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৩:৫৬ পূর্বাহ্ন

এটার জন্য আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করলে!!! শুনতে ভাল লাগে !

Mohammed Shahajahan
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৩:৪২ পূর্বাহ্ন

ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষের কাছে বিরক্তিকর একঘেয়ে বিতর্কিত এবং অস্থিতিশিল করতে শুরু থেকে তৎপর পতিত স্বৈরাচার তথা হাসিনার ল্যাসপেন্সাররা। ধাপে ধাপে তার মাত্রাগত পরিধি বাড়ছে! কখনো কিছুটা স্থিমিত মনে হলেও বাস্তবে তা শক্তি সঞ্চয়ের কালক্ষেপণ মাত্র। দ্রুতই সর্বক্ষেত্রে আগাছা উচ্ছেদ না করলে বিপরীত ফল চিরতার রসের চেয়ে ভাল কিছু হওয়াটা দিবাস্বপ্ন।

মোহাম্মদ আলী রিফাই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

সামিট গ্রুপের সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রের অনূকুলে বাজেয়াপ্ত করা হোক।

ইতরস্য ইতর
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১২:২২ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status