প্রথম পাতা
বিপ্লব কেন ব্যর্থ হয়?
মতিউর রহমান চৌধুরী
১৮ আগস্ট ২০২৪, রবিবার
বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লব নতুন কোনো ঘটনা নয়। দেশে দেশে বারবার এমনটাই ঘটেছে। কোথাও সফল, কোথাও বা ব্যর্থ। বাংলাদেশের বিপ্লবের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য বিপ্লবের সময়গুলোর অনেকখানি মিল রয়েছে। ল্যাতিন আমেরিকা থেকে আরব বিশ্ব ও পূর্ব ইউরোপের বিপ্লব পর্যালোচনা করলে এমনটাই দেখা যায়। বিপ্লবের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বিপ্লব পরবর্তী মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড আশাবাদ তৈরি হয়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও এমনটা দেখা যায়। কিন্তু ইতিহাস দেখায় যে, এসব প্রত্যাশা কখনো বাস্তবসম্মত হয় না। পরিবর্তন আসতে সময় লাগে। কিন্তু অল্পতেই মানুষ বিগড়ে যায়। আরব বিশ্বের উদাহরণ তাই। তিউনিশিয়া ও মিশরের শাসকদের পতন হলেও প্রচণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। তিউনিশিয়ার বিপ্লব একটি দুর্বল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। যা এখনো অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মিশরে অল্পদিন পরেই সেনাশাসন ফিরে আসে। ভেঙে খান খান হয়ে যায় বিপ্লবের আশাগুলো। বিপ্লবের সাফল্য একটি কঠিন পথ। বাংলাদেশেও একই ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে। স্থিতিশীল শাসন না হলে মানুষ নানাভাবে অঙ্ক মেলাতে শুরু করবে। বিপ্লব সাধারণত বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠীর মিলন ঘটিয়ে থাকে। যারা পরিবর্তনের জন্য একতাবদ্ধ হয়। শক্তিশালী শাসকদের চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। বিপ্লব ব্যর্থ করার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে গুজব। ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে। যেমনটা বিরামহীনভাবে চলছে বাংলাদেশে। এক কোটি হিন্দু দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন এই গুজবের কোনো ভিত্তি নেই। এই কার্ড খেলার পেছনে একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য রয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম অনবরত মিথ্যা প্রচার করে বিভাজন উস্কে দিচ্ছে।

উত্তর আফ্রিকার তিউনিশিয়াই একমাত্র দেশ যার উত্তরণ ঘটেছে অনেক নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে। ২০১০ সনের ১৭ই ডিসেম্বর বিদ্রোহের জন্ম। রাস্তার এক ফলবিক্রেতা যুবকের কাছে ঘুষ চেয়ে পুলিশ তাকে অতিষ্ঠ করে তোলে। সরকারি দুর্নীতি আর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কারণ লোকেরা চাকরি, উন্নত জীবনযাত্রা এবং বৃহত্তর স্বাধীনতা দাবি করেছিল। এই ঘটনার পর তিউনিশিয়ার পুলিশ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। প্রেসিডেন্ট জাইন আল আবিদিন বেন আলীর সংস্কারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অনাস্থা বাড়তেই থাকে। ২০১১ সনের ১৪ই জানুয়ারি বেন আলী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তিউনিশিয়ার সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু। হাসিনার পদত্যাগে শেষ। গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। এখানেও পুলিশ শত শত মানুষকে হত্যা করে। দেশি-বিদেশি নানা শক্তি তাকে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়। নিজের দেশের লোকদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করায় মানুষের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। যা কিনা এই অঞ্চলে নজিরবিহীন। সফল বিপ্লবের পর দুই সপ্তাহ কেটেছে অনেক ষড়যন্ত্র আর চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে।

জুডিশিয়াল ক্যু-এর চেষ্টা ছিল অন্যতম। কিছু কিছু ঘটনা বিপ্লবের কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করে তুলছে। আশার কথা, ঘটনার পর দায় স্বীকার করা হচ্ছে। যেটা আগে হতো না। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একমাত্র আশার প্রতীক। তাকে ঘিরেই এখন বিপ্লব পরবর্তী সংস্কারের দিকে এগুচ্ছে দেশ। যদিও সর্বক্ষেত্রে তার নিয়ন্ত্রণ এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। নড়বড়ে এবং ভঙ্গুর পরিস্থিতি সবখানে। শেখ হাসিনার প্রশাসন দিয়ে ইউনূসের শাসন যে চলতে পারে না এটা বোধ করি বিপ্লবের নায়কেরা বুঝতে পারছেন।
এই অবস্থায় রাজনৈতিক শক্তিগুলো যদি সঠিক রাজনীতি না করে তাহলে বিপ্লবের সাফল্য ধরে রাখা হয়তো কঠিন হবে। যেমনটা হয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে। ল্যাতিন আমেরিকার বিপ্লব থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। কারণ সেখানকার বিপ্লব ছিল অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়। ভেনিজুয়েলার অভিজ্ঞতা হচ্ছে বিপ্লবের পর অর্থনীতি সঠিকভাবে পরিচালনা করা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। বিপ্লবের পর সামাজিক উত্তেজনা বাড়াটাই স্বাভাবিক। যা কিনা আরও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। বিপ্লবের জন্য একটি বড় হুমকি হলো- প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির পুনরুত্থান। যা পুরনো ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ঘটে। অনেকক্ষেত্রে সামরিক অভ্যুত্থানেও শেষ হয়। বাংলাদেশের পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এই বিপ্লবকে অবৈধ এবং বিশৃঙ্খলা বলে বর্ণনা করেছেন। মিথ্যা প্রচার বিভাজন সৃষ্টি করে। মানুষের মনে নানা সন্দেহ তৈরি হয় । বিপ্লবকে দুর্বল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মনে রাখতে হবে- এসব কৌশল নতুন সরকারকে অস্থিতিশীল করবে। এটা করার অন্যতম উদ্দেশ্য বিদেশি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি করা। ১৯১৭ সনের রুশ বিপ্লবে রাশিয়ার জার শাসনের অবসান ঘটে। সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার ইতিহাসে একটি বড় বাঁক নেয়। খাদ্য ঘাটতি, সামরিক ব্যর্থতা ও স্বৈরশাসনের কারণে জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এই বিক্ষোভ নতুন বিপ্লবে রূপ নেয়। জার নিকোলাস সিংহাসন ত্যাগ করেন। তৈরি হয় শূন্যতা। নতুন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয়। একইভাবে বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। পুলিশ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। যেমনটা রাশিয়াতে হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল। বাংলাদেশে আইন প্রয়োগের অভাবে নিরাপত্তাহীনতা এবং ভয়ের সৃষ্টি হয়। যা জনগণের দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিপ্লবের সাফল্য ধরে রাখার জন্য মানুষ সংগঠিত হয়। নিজেদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সাধারণত, বিপ্লবের পর সামাজিক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। যার ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ এবং সংঘাতের সৃষ্টি হয়। রাশিয়ার বিপ্লবের সময় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ হয়। ফলে ভয়ের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ঘটনা অবশ্য ঘটে। যদিও বেশির ভাগ ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক সমর্থকদের দ্বারা উত্তেজনা সৃষ্টিই ছিল মূল লক্ষ্য। কর্মকর্তাদের ব্যাপক পদত্যাগ সরকারকে দুর্বল করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়। বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ রাশিয়ার সরকারের পদত্যাগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও দুর্বল করে। রাশিয়ার পুলিশ ও বিচারবিভাগের পতনের ফলে পেট্রোগ্রাদে নিয়ন্ত্রণের অভাব হয়। যা জনগণের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। রাশিয়ায় সরকার ব্যর্থ হওয়ায় বলশেভিকরা ক্ষমতায় আসে। তারা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। যাতে করে জনগণের অধিকার সীমিত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও চরমপন্থিরা বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা লাভ করতে পারে। যেমনটা রাশিয়ায় বিপ্লবী চরমপন্থিরা করেছিল। পৃথিবীর নানা অঞ্চলে বিপ্লবের সাফল্য ও ব্যর্থতা শিখিয়েছে জনগণের সঙ্গে স্বচ্ছভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা না গেলে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি না করলে বিপ্লব লাইনচ্যুত হতে পারে। জনগণকে সঠিক তথ্য এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ রাখাই হচ্ছে প্রধান কাজ। বিপ্লবের চূড়ান্ত পরীক্ষা হচ্ছে নতুন শাসন ব্যবস্থা চালু করা। ল্যাতিন আমেরিকার বিপ্লবী সরকারগুলোর মতো বাংলাদেশের সরকারকেও বিপ্লবী আদর্শ রক্ষা করা হবে অন্যতম কাজ। শাসনের বাস্তব প্রয়োজনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা সব মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য সহায়ক হচ্ছে কিনা সেটাও সার্বক্ষণিক পর্যালোচনার দরকার। বিপ্লবের সাফল্য ধরে রাখার অনেকটাই নির্ভর করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর। তারা এই বিপ্লবের চালিকা শক্তি। তাদের কথা বলার সময় অধিক মাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে। আমরা সবাই জানি অতি প্রচার নয়া সংকটের জন্ম দেয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

দেশে দেশে বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর জোর দেয়া, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। একনায়কতন্ত্র থেকে সাবধান থাকা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করা। তিউনিশিয়ার নবজাত গণতন্ত্র বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। রাজনীতিতে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ এবং ইসলামপন্থি উভয় দলগুলোর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে উত্তেজনা চরম বৃদ্ধি পায়। এ সময় দুই বিশিষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ চোকরি বেলাইদ ও মোহাম্মদ ব্রাম্মীকে হত্যা করা হয়। দেশটি তখন রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়। আর তখনই শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
পাঠকের মতামত
বিপ্লবী সরকারের উচিত জরুরি ভিওিতে সংবিধান রচনা করার জন্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নিরপেক্ষ জনবল দিয়ে নূতন সংবিধান রচনা কমিটি গঠন করা।
চমৎকার বিশ্লষণ ও দিকনির্দেশনা। একটি জাতীয় পত্রিকার কাজ এমন হওয়া উচিৎ। এবার বাংলাদেশে কোন সংখ্যা লঘু আক্রমণ হয়নি যা হয়েছে রাজনৈতিক কারনে ধর্মীয় কারনে না।
চমৎকার লিখেছেন। নাগরিক সমাজকে সচেতন থাকতে হবে।
Ha ha ha
মতিউর রহমান চৌধুরী ভাই আপনাকে অভিনন্দন! কলম চালিয়ে যান!
1) ছাত্রের জনতার এই আন্দোলনকে বিপ্লবে পরিচিতি দেওয়া । 2) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরুণদের অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া । 3) ছাত্রদের বিভিন্ন কর্মে তাদের আন্তরিকতার আলোকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া । a. short term volunteers b. Midterm volunteers c. Long time volunteers যাদেরকে পকেটে অ্যালাউন্স দিতে হবে ও প্রয়োজনীয় টুলস এর সহযোগিতা দিতে হবে। বীমা সুবিধা থাকতে হবে । 4 . অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী সরকার কে বৈধতার প্রশ্নে referendum দিতে হবে .
জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং ধৈর্য্য ধারণ করা খুবই জরুরী। আরো জরুরী গণ অভ্যুত্থান সমর্থনকারী রাজনৈতিক দল গুলোর বিবেচনা বোধ এবং প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়া। বিএনপি'র মতো বড় দলের বিবেচনা বোধ এবং নেতা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এ মুহূর্তে কাম্য। বিএনপি'র একটি তথ্য সেল সর্বক্ষণ সারা দেশে নজরদারি করতে পারে!
ভয় হয়। বাংলাদেশের মানুষ বহু পূর্ব থেকেই বহু সংগ্রাম করেছে আন্দোলন করেছে কিন্তু সবসময়ই অভূথ্যান হাইজযাক হয়ে গিয়েছে। কেউ নিজেকে আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করেছে কেউ দেশটাকে পৈত্তিক সম্পতি করে নিতে চেয়েছে কেউ বা অযোগ্য হওয়া সত্তেও পরিবারতন্তকে মেনে কি নিয়ে দ্বায়িত্ব দিয়েছি। এখন তো ইউটিউবে একাকজন পন্ডিত বিশেষ জন্ম হয়েছে। তাই ভয় হয়। প্রতি বিপ্লব প্রতিহত করা যাবে কি? দেশের বাইরে থেকে নানা মিথ্যা প্রচার পরচারনা হচ্ছে দেশেও অনেকে বুঝে অনেক সময় না বুঝে নানাভাবে বিপ্লবের বিরোধিতা করতে পারে এই সমস্তই সময়েই এগুলো। আমরা বাঙ্গালী বড অধোয্যশীল মানুষ আমরা কি ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারবো তো! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কোন ভাবেই বিপ্লব বেহাত হতে দেয়া যাবেনা
বিপ্লব কেন ব্যর্থ হয়? সময়ের জিজ্ঞাসার কাঙ্ক্ষিত উত্তর। সমাধানের পথনির্দেশ ও বটে। এত সহজ সাবলীল সবার বোধগম্যভাবেই বুঝিয়ে বললেন আপনি। আপনাকে ধন্যবাদ। ছাত্র জনতার অভূতপূর্ব গণ অভ্যুত্থানের পর আমরা এখনও অজানা আতঙ্ক,অস্থিরতায় ডুবে আছি। এই বুঝি বিতাড়িত শকুনের দল আমাদের ২য় স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে গেল শঙ্কায়। কিন্তু তা তো হতে দেয়া যাবে না এ যে সহস্র রক্তের আর অজস্র অশ্রুর দামে পাওয়া।
"শেখ হাসিনার প্রশাসন দিয়ে ইউনূসের শাসন যে চলতে পারে না এটা বোধ করি বিপ্লবের নায়কেরা বুঝতে পারছেন"। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা। বর্তমান অন্তর্বতী কালীন সরকারের সকল উপদেষ্টা গন বিষয়টি সারাক্ষন কথাটা স্বরনে রাখা দরকার।
বাংলাদেশের ছাত্র জনতা যে বিপ্লব এনেছে সেই বিপ্লব ধরে রাখতে হবে। ছাত্র- জনতাই পারে এই বিপ্লবের সাফল্যকে ধরে রেখে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এজন্য আসুন আমরা সবাই মিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী সমন্বয়কদের হাতকে আরো শক্তিশালী করি ।
ভারতের প্রায় সকল প্রদেশের সম্মিলিতভাবে তরুণ তরুণীরা দিল্লির একনায়কত্বের দাবানলে জর্জরিত হয়ে স্বাধিকার থেকে দির্ঘ্যকাল যাবৎ বঞ্চিত হয়ে আছে। ভারতের যুবসমাজ বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের ছাত্র ছাত্রীর মত এগিয়ে আসলে তারাও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে এবং বৈশম্যের জনক ভারতের শাসকগোষ্ঠী নিজেদেরকে সংশোধন করে নিতে বাধ্য হবে।
ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত dependable, Intellectual এবং সর্বগ্রহনযোগ্য সুবিবেচক একজন মানুষ। দেশের স্বার্থে সকলের তার উপর আস্হা রাখা উচিৎ। সর্বোপরি ছাত্র জনতা সকলকে অনুরোধ করতে চাই ধৈর্যের সাথে তাকে কাজ করার সময় ও সুযোগ দেন ,ভাল ফলাফল অবশ্যই আসবে। ইনশাআল্লাহ।
সময়োপযোগী লেখা, সমন্নয়কদের এসব পড়া উচিত এবং উপলব্ধি করতে হবে। তারা এখন অনেকক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আরো পুনর্গঠিত হয়ে তবে নির্বাচন দিতে হবে।
বহুদিন পরে একটা আসল সম্পাদকীয় পড়লাম বাংলাদেশের পত্রিকায়। মতিউর রহমান (মানবজমিন), নুরুল কবির, এবং মাহমুদের রহমান (বন্ধ "আমার দেশ", বর্তমানে বিদেশে) ছাড়া মনে হয় না আরে কোন প্রকৃত সম্পাদক আছে জাতীয় পত্রিকার।
যে প্রতিশোধের হুমকি দেয়, তাকে ক্ষমা করা অন্যায় ।
ইতিহাসের আলোকে খুবই উপকারী পরামর্শ। সবারই এখন থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
এই বিজয়ের সময়ে আমাদেরকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে সময় নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করতে হবে। কোনো অবস্থায়ই ধৈর্য হারা হওয়া যাবে না।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীলতা এবং সরকারকে সহযোগিতা করা।
তবে BNP এর নেতা কর্মীরা মনে হচ্ছে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। তাদের কথাবার্তা এমন যে, তারা এখন ক্ষমতায় চলে এসেছে ! কথার মধ্যে কোনো ভদ্রতার চিহ্ন মাত্র নেই। এগুলো ঠিক না।
বাস্তবতার নিরিখে সুন্দর লেখা , আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ।
বিপ্লবের পর জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা বহু বেড়ে যায়।তারা তাদের প্রত্যাশ রাতা রাতি পুরন করতে চায়।বাস্তবতায় তার সম্ভব হয়ে উঠে না।সেই সঙ্গে যদি বিপ্লবের পর যারা সরকারে আসে তাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভে পেয়ে বসে তবে সেই বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার আশংকা থাকে।এতো রক্তপাত,প্রাণহানির সম্মুখ যুদ্ধে জয়ের পর এই বিপ্লব যেন ব্যর্থ না হয় সেটাই প্রত্যাশা করি।এই বারের বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ আর ঘুড়ে দাড়াতে পারবে না।তবে এমনটা আশা করি না।
আগামির দিনগুলোতে Interim government কে অনেক বেশি Challenge মোকাবেলা করতে হবে এবং অত্যান্ত বিচক্ষণতার সাথে সৃষ্ট Challenge গুলো মোকাবেলা করতে হবে। তা নাহলে জাতী আবার সংকটে মুখে পতিত হবে।
আপাতত শিক্ষার্থীদের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে, কয়দিন বহাল থাকে দেখার বিষয়। তবে শিক্ষার্থীদের মাঝে মত বিরোধ উদ্বেগের বিষয় বটে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের কেউ কেউ পদত্যাগ করেছেন। আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অন্তত একজন করে হলেও সরকারে স্থান দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করা বা তাদের বিভিন্নভাবে সরকারে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ থাকা এই মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরী।
ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এখন সংবিধান অনুযায়ী একটা নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিলে দেশ আরেকটা বিপর্যয় থেকে বাঁচতে পারে বলে আমার মনে হয় তবে একটি নুতন প্রজন্মের প্রগতি শীল গণতান্ত্রিক দল উঠে আসা প্রয়োজন না হলে এ বিপ্লব বা অভূত্থানের মূল উদ্দেশ্য বিফলে যাবে।