ঢাকা, ১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

অচল ডেমু খাচ্ছে কোটি টাকা

নাজমুল হুদা
১০ জুলাই ২০২৪, বুধবার
mzamin

সরকার ৬৫০ কোটি টাকা দিয়ে চীন থেকে ২০ সেট ডেমু ট্রেন ক্রয় করে। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য এ ট্রেন আনা হয়। এই ডেমু ট্রেনগুলোর সবগুলোই এখন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প কোনো কাজেই আসছে না। বরং অচল ডেমু ট্রেনে খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডেমু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পরও ২০১৯-২০ অর্থবছরে মেরামত বাবদ প্রায় ৩ কোটি (২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৩ হাজার) টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ডেমু ট্রেন না চললেও ২০২১-২২ অর্থবছরে যন্ত্রাংশ ক্রয় ও জ্বালানি বাবদ ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। 

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, মেয়াদ ফুরানোর আগে অচল ডেমু ঠিক করতে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন পার্বতীপুর ও পাহাড়তলীর কর্মকর্তারা। রেলওয়ের চট্টগ্রামের পাহাড়তলী কর্মব্যবস্থাপক (ডিজেল) কার্যালয় ৫টি ডেমু ট্রেন মেরামতে ২ কোটি ৯০ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। রেলওয়ের দিনাজপুরের পার্বতীপুরের কর্মব্যবস্থাপক (ডিজেল) কার্যালয় পঞ্চগড়-পাবর্তীপুর-লালমনিরহাট রুটে ডেমু ট্রেনের মেরামত কাজ সম্পাদন দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামসুদ্দিন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসকে ৮ লাখ ৯ হাজার টাকা পরিশোধ করে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা দুটি ডেমু ট্রেনের বিপরীতে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ডিসিওএসের মাধ্যমে (পরিদর্শন) পার্বতীপুরের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় করেছে। আর দুই সেট ডেমু ট্রেন চলাচল না করলেও ২ লাখ টাকার ১ হাজার ৭১২ লিটার জ্বালানি তেল ও ৩২২ লিটার লুবঅয়েল ইস্যু করা হয়। প্রতিবেদনে পার্বতীপুর ও চট্টগ্রাম কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। 

নিরীক্ষা অধিদপ্তর ২০২১ সালের আগস্ট মাসে রেলওয়ের তৎকালীন সচিব মো. সেলিম রেজাকে চিঠি দিলেও তার কোনো জবাব দেয়া হয়নি। তবে বর্তমান রেলওয়ে সচিব হুমায়ুন কবীর যোগদানের পর এই সংক্রান্ত কোনো চিঠিই পাননি জানিয়ে বলেন, এই বিষয় নিয়ে কোনো অডিটের চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে জবাব দেবো। এ ছাড়া অচল ডেমু ট্রেন নিয়ে বর্তমানে কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথাও জানান রেলওয়ে সচিব। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে চীন থেকে ২০ সেট ডেমু ট্রেন ক্রয় করে সরকার। এসব ডেমু ট্রেনের ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ছিল ২০ বছর। তবে সেই আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগেই এখন অচল অবস্থায় পড়ে আছে ট্রেনগুলো। এরমধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের লোকোশেডে ৭টি ও বাকিগুলো চট্টগ্রাম এবং লালমনিরহাট শেডে পড়ে আছে বলে জানা যায়। সরজমিন কমলপুরের লোকোশেডে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারিভাবে পড়ে আছে ট্রেনগুলো। বগির ভেতরে মাকড়সার বাসা ও ময়লা-আবর্জনা আর ধুলাবালির আস্তরণে ঢেকে গেছে। 

নিরীক্ষা মন্তব্যে বলা হয়, কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (সিআইডিএ) ম্যানুয়াল অনুযায়ী প্রতিটি ইঞ্জিন ১ বছর ৬ মাস অন্তর এফ-শিডিউল এবং ৩ বছর অন্তর জি-শিডিউল সম্পন্ন করার নির্দেশনা থাকলেও এক্ষেত্রে ডেমু ট্রেনের ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ দামি পার্টস পরিবর্তন করা হয়। ২০ বছরের আয়ুষ্কাল সম্পন্ন ডেমু ট্রেন ক্রয়ের ৭ বছরের মধ্যে প্রতিটি ইঞ্জিন মেরামতের নামে ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ পার্টস পরিবর্তন করা হয়েছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। তারপরও ডেমু ট্রেন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও এর মেরামত বাবদ অর্থ পরিশোধ দেখানো হয়েছে।

এদিকে আয়ুষ্কালের আগেই ডেমু ট্রেন অচল হওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেরামতের কারখানা না থাকা, বেশি দূরত্বে ট্রেন চালানো ও বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য না হওয়ায় ট্রেনগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। জানা যায়, ডেমু ট্রেন চালুর ৬ বছরের মধ্যেই নানা সমস্যা দেখা যায়। ইঞ্জিনে অস্বাভাবিক শব্দ, অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া বের হওয়া, গরম হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হচ্ছিলো। তবে দীর্ঘ সময়েও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ট্রেনগুলো একে একে বিকল হয়ে গেছে। জানা যায়, ডেমু ট্রেনের কোচ ও ওয়াগনের আয়ুষ্কাল যথাক্রমে ৩৫ ও ৪৫ বছর। চুক্তি অনুসারে, ডেমু ট্রেন সরবরাহ ছাড়াও ১৯ ধরনের প্রধান যন্ত্রাংশ, ৩৭ ধরনের সাধারণ যন্ত্রাংশ, ১৩৭ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ যন্ত্রাংশ এবং ৩৭ ধরনের (সরঞ্জাম) টুলস ও মেরামত কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র দেয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প কর্মকর্তারা এসব যন্ত্রের সবক’টি ঠিকভাবে বুঝে নেননি। এ জন্য পরে ডেমু মেরামতের প্রয়োজনে যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত

লুটেপুটে খেয়ে নেয় সব।এইতো সুযোগ!

আনছার
১০ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status